চান মিয়া, ছাতক, সুনামগঞ্জ।। ছাতকস্থ সিলেট পাল্প এন্ড পেপার মিলস্ আদর্শ দাখিল মাদরাসা বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্টত্ব অর্জন করেও ৩৫বছরে আপন ঠিকানা খুঁজে পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। এভাবে দেড়যুগ থেকে জরাজীর্ণ একটি কর্মচারি ক্লাবেই চলছে মাদরাসার পাঠদান। নিজস্ব ভবন, প্রয়োজনীয় উপকরণও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবশ না থাকায় মাদরাসার ৪শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে চরম অচলাবস্থা। এব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামণা করছেন এলাকাবাসি। অন্যতায় শিক্ষাবান্ধব সরকারের অব্যাহত সাফল্যে মারাত্মক প্রভাব পড়ার আশংকা করছেন সচেতন মহল।
জানা যায়, ১৯৮৩সালে সিলেট পাল্প এন্ড পেপার মিলস্ হাইস্কুলের একটি একতলা ভবনে মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। এরপর ১৯৯৪সালে দাখিল পরিক্ষার অনুমতি, ১৯৯৫সালে একাডেমিক স্বীকৃতি ও ২০০০সালে এটি এমপিওভূক্তি লাভ করে। ১৯৯০সাল থেকে ২০০৪সাল পর্যন্ত ইবতেদায়ি বৃত্তি পরিক্ষায় উপজেলা ভিত্তিক বৃত্তিসহ পর্যায়ক্রমে ৫০টি ও ১৯৯৪সাল থেকে ২০০৪সাল পর্যন্ত নিম্নমাধ্যমিক পরিক্ষায় আরো ৯টি বৃত্তি লাভ করে পরিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে মাদরাসাটি ১৯৯৫সালে দাখিল পরিক্ষায় সিলেট বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্টত্ব অর্জন করে। ২০০০সালে প্রতিষ্ঠানের একজন পরিক্ষার্থী দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ মেধা তালিকায় ১৮তম স্থান অধিকার করে। ২০০৪সালের পর থেকে অদ্যাবধি ইবতেদায়ি, জেডিসি ও দাখিল পরিক্ষায় ট্যালেন্টপুল, জিপিএ-৫ ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি লাভসহ পরিক্ষার্থীরা কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করে যাচ্ছে।
২০১৭সালে ইবতেদায়ি সমাপনী পরিক্ষায় ৩৪জনের মধ্যে ৩২জন, জেডিসি পরিক্ষায় ৩৬জনের মধ্যে ৩৫জন পাস করেছে। ২০০৩সালে জাতিয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে উপজেলা, জেলা ও সিলেট বিভাগের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ শ্রেষ্টত্বের সম্মানে ভূষিত হয়। এখনো এ সাফল্য ধরে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ঈর্ষনীয় সাফল্যের ধারা অক্ষুন্ন রাখলেও প্রতিষ্ঠানে পাহাড়সম সমস্যা বিরাজমান। ২০০১সালে হাইস্কুলের একতলা ভবন ছেড়ে মাদরাসাটি আপন ঠিকানার খোঁজে বের হয়ে ১৯৮৩সালে মান্ধাতা আমলের জরাজীর্ণ সিলেট পাল্প এন্ড পেপারমিলস্ কর্মচারি ক্লাবে স্থানান্তরিত হয়। ২০০২সালের ৩১নভেম্বর সিলেট পাল্প এন্ড পেপারমিল লে-অফ ঘোষণার পর মাদরাসাটি নানাবিধ সমস্যার কবলে পড়ে। মাদরাসার নিজস্ব সরকারি কোন একাডেমিক ভবন না থাকায় জরাজীর্ণ কর্মচারি ক্লাবেই পাঠদান চালু রাখা হয়েছে।
৪শতাধিক শিক্ষার্থীদের কর্মচারি কাবে পাঠদান সম্ভব না হওয়ায় সামনের বারান্দায় চাটাইয়ের মধ্যে বসেই কোমলমতি শিশুদের লেখাপড়া করতে হয়। পেছনের বারান্দায় বাথরুমের পাশেই চলছে আরো দু’টি ক্লাস। এছাড়া ক্লাবের ভেতরে পার্টিশন না থাকায় পাশাপাশিভাবে চলছে ৭টি ক্লাস। এতে শব্দ দুষণের কবলে পড়ে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ক্লাস চলাকালে তীব্র শব্দ দুষনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একে অপরের কথা-বার্তা এমনকি পড়ালেখার বিষয়াদি বুঝতে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্ঠি হয়।
মাদরাসার নিজস্ব ৭১শতক ভূমি থাকলেও এখানে নিজস্ব কোন সরকারি একাডেমিক ভবন নেই। ফলে বাধ্য হয়েই মারাত্মক জরাজীর্ণ কর্মচারি ক্লাবেই পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। মাদরাসায় ১২জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৩জন কর্মচারি কর্মরত রয়েছেন।
প্রায় ৮বছর আগে মাদরাসা উন্নয়নের অফুরান আশা বুকে নিয়ে সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের অত্যন্ত ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত সাইফুর রহমান চৌধুরি খোকনকে সভাপতি মনোনীত করেন এলাকাবাসি। কিন্তু অবশেষে এআশা দূরাশায় পরিণত হয়েছে বলে তারা বলেছেন। সুপার মাওলানা শরিফুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠা থেকেই মাদরাসাটির সাফল্যের ধারা ছিল ঈর্ষনীয়। শুধু ভবন না থাকায় সুষ্ঠু পাঠদানে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্ঠি হচ্ছে। ভবন নির্মিত হলে মাদরাসাটি আরো ব্যাপক সাফল্য অর্জন করবে বলে তিনি দাবি করেন।
পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান চৌধুরি খোকন জানান, মাদরাসা উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করা হয়েছে। পৌর কাউন্সিলর ধন মিয়া জানান, সুরমা নদীর দু’পারের বৃহত্তর এলাকার প্রায় ২০টির অধিক গ্রামের শিক্ষার্থীদের ধর্মিয় শিক্ষার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে এ মাদরাসাটি। এজন্যে তিনি দ্রুত ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পুলিন রায় মাদরাসাটি এযাবত কোন বিল্ডিং পায়নি জেনে অবাক হয়ে বলেন, এমপি মহোদয়ের সাথে এলাকার লোকজন যোগাযোগ করলে এসমস্যা সমাধান হতে পারে।