মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।। মৌলভীবাজার শহরের আদালত এলাকার চা ব্যবসায়ীর ছেলে সালমান রহমান (১৭) ৬ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছে। প্রায় অর্ধ্ব বছর চলে গেলেও তার কোন হদিস মিলছেনা এখনো। তার এই নিখোঁজের ঘটনায় পবিবারের উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন-পাত কাটছে প্রতিনিয়ত। নিখোঁজ সালমান পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের রঘুনন্দনপুর এলাকার জেলা আইনজীবী সমিতির পিয়ন জয়নাল মিয়ার পুত্র।
এ ঘটনায় তার পিতা মৌলভীবাজার মডেল থানায় গত ৫ অক্টোবর ২০১৭ ইং তারিখে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। (ডায়েরি নং-২৭৩)। ডায়েরিতে তিনি উল্যেখ করেন তার পুত্র সালমান গত ৩ অক্টোবর ২০১৭ ইং তারিখে তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্টান আদালত এলাকার ২নং বার ভবন সংলগ্ন চা ষ্টল থেকে নিখোজ হয়।
এদিকে সালমান’র এই নিখোজের ঘটনায় তার পরিবারের উৎকন্ঠা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তিনি অশ্রু বিজরিত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন প্রায় ছয় মাস হলো তার ছেলের কোন হদিস মিলেনি। তার ছেলে আদৌ আছে না মারা গেছে তিনি এখনো জানেন না। ছেলে উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন তার পিতা জয়নাল মিয়া।
মৌলভীবাজার অফিস।। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আসা মনু নদী মৌলভীবাজার শহর দিয়ে ঘেঁষে কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এক কালে এই মনু নদীরই শ্রোতের ঠানে নৌকায় পাল তুলে সামানা নিয়ে মহাজনেরা আসতেন ব্যবসার ডালি সাজিয়ে। ভরা যৌবনা মনু থাকতো কানায় কানায় জলেভরা। প্রায় শত বছর আগে থেকে জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার যোগে এই পথ দিয়ে যাতায়াত করতো দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা। আজ শুধু কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে নাব্যতা হারিয়ে যাওয়া এ নদীটি। এখন আর চুখে পড়েনা মাল বুঝাই করা পালতোলা সেই সওদাগরী বাহনগুলো। কালের আবর্তে নদীটি হারিয়ে ফেলেছে তার আগের জৌলুস। নব্যতা হারিয়ে ফেলায় এখন নদীটি অগভীর হয়ে মূল স্রোতের সিংহভাগ যায়গা ভরাট হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান,শত বছর ধরে জাহাজ, স্টিমার, লঞ্চ যুগে কুশিয়ারা নদী হয়ে এ পথে দূর-দূরান্ত থেকে মালামাল নিয়ে আসা হতো। তখন জমজমাট ব্যবসা ছিল মৌলভীবাজারে। সেই সময়ের মনু ছিল ভরা যৌবনা। গাড়ি চলাচলের প্রয়োনজনীয় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তখনও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেনি। নৌযোগাযোগই ছিল ব্যবসার প্রধান ভরসা। তখনকার সময়ে নৌ যোগে এ পথ ব্যবহার করে পুরো জেলা জুড়ে ব্যবসা-বানিজ্য গড়ে উঠে। ধীরে ধীরে এটি ভরাট হয়ে যাওয়াতে বন্ধ হয়ে যায় নৌপথ। স্থানীয়রা মনে করছেন নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে শহরের প্রতিরক্ষা বাঁধসহ কুলাউড়া ও সদর উপজেলার অনেক বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি বাদল হলেই আকস্মিক বন্যার মুখে পড়েন নদী পাড়ের মানুষেরা। পাহাড়ি ঢল নামলে মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিমবাজার
ও বড়হাট এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ দিয়ে শহরে পানি ঢুকে সড়ক যোগাযোগে ভয়ানক বিগ্ন ঘটায়।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত মৌলভীবাজার শহর দিয়ে বয়ে যাওয়া মনুনদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী । প্রায় ৮৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই নদীর গড় প্রস্থ ১শ ১১ মিটার। কথিত আছে বৈদিকশাস্ত্রকার ঋষি মনু এ নদীর তীরে ধ্যান করতেন বলে নদীর নাম হয়েছে মনু । মনু নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি এলাকা থেকে উৎপত্তি লাভ করে কয়লাশহরের কাছ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার নমৌজা হয়ে চাতলাপুর সীমান্তের কাছে মৌলভীবাজারে প্রবেশ করে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে মনুমুখ-এর কাছে মনু কুশিয়ারা নদীতে পড়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর কেন্দ্রিয় পরিষদ সদস্য ও জেলা কমিটির সমন্বয়ক আ,স,ম সালেহ সোহেল বলেন, মনু নদী উৎস মুখ থেকে প্রচুর পরিমান বালি ও মাটি নিয়ে আসায় নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এতে হারিয়ে ফেলেছে তার নাব্যতা। পাশাপাশি অবৈধভাবে বালু উত্তেলন করে নদীর গতিবেগ ও পথকে আরো নষ্ট করা হচ্ছে। তার মতে এই নদীকে বাঁচাতে হলে খনন করতে হবে।
জেলা কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নিলিমেশ ঘোষ বলু জানান, মনু নদীকে তার আগের যায়গায় ফিরিয়ে আনতে খনন ছাড়া কোন সমাধান নাই। তিনি আরো বলেন, নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধগুলো খুব দূর্বল। পানি উন্নয়ন বোর্ড শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ দেয়না। যখন বর্ষা হয় তখন প্রতিরক্ষা বাঁধ তৈরীতে ব্যস্ত হন তারা।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু জাফর জানান, মনু নদী দীর্ঘদিন ধরে ভরাট হয়ে আছে। এটা এলাকাবাসীর জন্য বিরাট এক সমস্যা। নদীর উৎসমুখ থেকে কুশিয়ারা নদী পর্যন্ত খনন করা হলে তার প্রাণ ফিরে পাবে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্ত্তী সম্প্রতি এ প্রতিবদেককে জানিয়েছেন, মনু নদী খনন করতে জরীপ চলছে। খনন করে মনু নদীকে তার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনলে ভারতের কয়লাশহর থেকে মৌলভীবাজার- আজমির-ভৈরব হয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে সেই নবাবী আমলের পুরানো জলযোগাযোগ পুনঃ স্থাপন সম্ভব। আর তা’হলে বিশাল বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ব্যবসা-বানিজ্যের ক্ষেত্রে নব দিগন্তের সূচনা হবে। তবে এটি একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। অবশ্য এর একটি প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঢাকা’র বোর্ড হয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে একনেক থেকে প্রধানমন্ত্রী এটার অনুমোদন দেবেন।