মৌলভীবাজার অফিস।। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর। একজন মুক্তিযোদ্ধার কৃতিত্ব। যিনি অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে। সেই মুক্তিযোদ্ধা বলতে গেলে এবার জীবনের শেষ সময়ে এসে দেশের কৃতিত্ব মর্যাদাকে দুনিয়ার সামনে তুলে ধরতে নদীতে সাঁতার দিলেন। সাবাশ সাঁতারু ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য।
৬৭ বছর বয়স্ক ক্ষিতীন্দ্র সাঁতার দিয়েছেন ১৮৫কিঃমিঃ জলপথ। সময় লেগেছে ৬০ঘন্টা ৫৫মিঃ। সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, এর আগে ২০১৩সালে কিউবা থেকে ফ্লোরিডা পর্যন্ত ১৭৭কিঃমিঃ জলপথ সাঁতরে পাড়ি দিয়েছিলেন আমেরিকার সাঁতারু ভায়ানা নাঈদ। ভায়ানা নাঈদের সে রেকর্ড ভেঙ্গে সাঁতারে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে গেলেন বাংলাদেশকে।
কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম লিখেছে, সিলেটে ধুপাদিঘীর সাঁতারু অরুণ কুমার নন্দী ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের অনুপ্রেরণা। কোনো বিরতি ছাড়াই অরুণ কুমার নন্দী ৩০ ঘণ্টা সাতারের রেকর্ড গড়েছিলেন। অদম্য ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য, অরুণের সে রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যেতেই এই অভিযান চালিয়েছেন।
জানা যায় ১৯৭০সালে মদনের জাহাঙ্গীরপুর উন্নয়ন কেন্দ্রের পুকুরে ক্ষিতীন্দ্র ১৫ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে আলোচিত হন। এটিই তার প্রথম সাঁতার প্রদর্শনী। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে সিলেটের রামকৃষ্ণ মিশন পুকুরে ৩৪ ঘণ্টা, সুনামগঞ্জের সরকারী হাইস্কুলের পুকুরে ৪৩ ঘণ্টা, ১৯৭৩ সালে ছাতক হাইস্কুলের পুকুরে ৬০ ঘণ্টা, সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে ৮২ঘণ্টা এবং
১৯৭৪সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথহলের পুকুরে ৯৩ঘণ্টা ১১মিনিট বিরামহীন সাঁতার প্রদর্শন করে জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করেন। জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করায় ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল এবং ডাকসুর উদ্যোগে ক্যাম্পাসে বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৬ সালে তিনি জগন্নাথ হলের পুকুরে ১শ’ ৮ঘণ্টা ৫মিনিট সাঁতার প্রদর্শন করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জগন্নাথ হলের পুকুর পাড়ে একটি স্মারক ফলক নির্মাণ করে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ঢাকা স্টেডিয়ামের সুইমিং পুল, মদন উপজেলা পরিষদের পুকুর এবং নেত্রকোনা পৌরসভার পুকুরে তার একাধিক সাঁতার প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
ভারতেও দূরপাল্লার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। ১৯৮০ সালে মাত্র ১২ঘণ্টা ২৮মিনিটে মুর্শিদাবাদের ভাগিরথী নদীর জঙ্গীপুর ঘাট থেকে গোদাবরী ঘাট পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেন। সাঁতার প্রদর্শনী ও রেকর্ড সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের বাড়ী নেত্রকোণার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে। তার বাবার নাম ক্ষিতীশ চন্দ্র বৈশ্য ও মা সুপ্রভা রাণী বৈশ্য। জন্ম ১৯৫২ সালের ২৩ মে। পদার্থবিদ্যা বিষয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি পাস করেন। পেশায় তিনি চাকুরিজীবী। ১৯৭৫ সালে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট থেকে সম্মাননাও পেয়েছিলেন।