হারুনূর রশীদ
দেখে এলাম মণিমুক্তার দেশ। সাগর পারের সেই দেশ যেখানে একসময় সাগরে ডুব দিলেই পাওয়া যেতো মহামূল্য মণিমুক্তা, হীরা পান্না লাল। সাগরে মুণিমুক্তা পাওয়া যায়, সে কে নাশুনেছে। ছোটবেলা কেটেছে মা-নানীর কাছে কাঞ্চণমালা, কিরণমালা, ডালীম কুমার, হাতেম তাই সহ কত রাক্ষস-খোক্ষসের কেচ্ছা কাহিনী শুনে শুনে। রাজকুমারী কাঞ্চণমালার খুঁজে সেই অচিন দেশের রাজপুত্র যাচ্ছেনতো যাচ্ছেনই। কখনও ঘোড়ায় চড়ে কখনও বা পায়ে হেঁটে পাহাড়-পর্বত ডিঙ্গিয়ে সেই অচিন দেশের খুঁজে, যেখানে গেলে স্বপ্নেদেখা তার সেই রাজকুমারীকে পাওয়া যাবে। যেতে যেতে যেতে…, অবশেষে পেলেন এক নহর বয়ে চলেছে। সেই নহরে ভেসে ভেসে যাচ্ছে হীরা, লাল, নীলমণি কত রকমের মণিমুক্তা। কেচ্ছা শুনে শুনে নানীর কোলে ঘুমিয়ে পরতাম। মা-নানীর বলা কৈশোরের স্বপ্নের সেই দেশ, সেই সাগরতীর জীবনে কখনও দেখতে পারবো কৈশোরে সে হিসেবই করিনি। সময় গড়িয়ে ডানা ঝাপটানোর সময় হতেই কল্পনায় সবসময় দেখার একটা প্রবল ইচ্ছা খুব কাজ করতো। শুনেছি, মানুষ যেরূপে থাকতে চায় তার জন্য একটু নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করলে সে তা পায়। আমার বিষয়েও তাই হয়েছে।
মনে মনে ঠিক করছিলাম মিশরের প্রাচীন ফারাহদের(বাদশাহ্গন) কীর্তিকর্ম দেখতে যাবো। এমনি একসময় একমাত্র ছেলে শুভ্র, তার আরেক নাম মাহমুদ জানালো সে, আমি ও তার মা’কে সামান্য খরচে দুবাই দেখিয়ে আনতে পারবে। নিরীহ দেশত্যাগী বাঙ্গালীমন, সবকিছুতেই স্বল্প খরচে দাও মেরে দেবার এক কৃপণ ইচ্ছা প্রবল থাকে। সহজেই রাজী হয়ে গেলাম। শুরু হল যাত্রার গোঁজগাছ। দুবাই!
দুবাই, সে খৃষ্টপূর্ব প্রায় ৩হাজার বছর আগেকার কথা। মানুষ তখন যাযাবর রাখাল। খাদ্যের তাগিদে একজায়গায় স্থির হয়ে থাকতে পারে না। শিকার ধরে জীবন ধারণ আর গোচারণ ছিল তাদের একমাত্র পেশা ও ব্যবসা। দুবাই যখন তৃতীয় শতাব্দিতে(এডি), শাশানিদ সাম্রাজ্যের অধীনে তখনও সাগরতীরের একটি উদোম মরুভূমি। পশুপালন আর সাগরে মাছ শিকারই তাদের জীবন ধারনের একমাত্র অবলম্বন। ইতিহাসের কোন সময় থেকে দুবাইওয়ালারা সাগর থেকে মণিমুক্তা কুড়ানো শুরু করেছে ইতিহাস ঘেঁটে তা সংগ্রহ করতে পারিনি। তবে, শাশানিদদের আমল সেই ২২৪সাল থেকে ৬৫১সাল অবদি প্রাচীণ পারস্য সাম্রাজ্যের একটি জনপদ হিসেবে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে। সাগরতলা থেকে মণিমুক্তার আহরণ যতদূর অনুমিত হয় সেই সময় থেকেই। এরপর উমাইয়া খেলাফতির দখলে থাকাকালীন হাজার বছর চলে মণিমুক্তা আহরণের রোমাঞ্চকর কর্মযজ্ঞ। দুবাই গড়ে উঠে দুনিয়ার সেরা মণিমুক্তা আহরণকারী জনপদ হিসেবে। এরপর, ১৭৯৯ সালে আবুধাবির বণি ইয়াছ গোত্র দুবাইকে তাদের নিজস্ব নিয়ন্ত্রীত এলাকা বলে শহর দুবাই প্রতিষ্ঠা করে। পরে ১৮৩৩সনে দুবাই একটি রাজ্যের সন্মানে ভূষিত হয়। এ সময় বণি ইয়াছ গোত্রের “আল মাকতুম” গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ অর্জন করে।