মুক্তকথা নিবন্ধ।। আজ অবদি কেউ বলতে পারেনা এতো মানবকঙ্কাল এলো কোথা থেকে। তবে গবেষক অনেকেরই ধারনা এখানে যা ঘটেছিল তা একবারই শুধু ঘটেছিল বিষয়টি এমন নয়।
বিভিন্ন নমুনার প্রায় ৫০০ মানুষের কঙ্কাল ছড়িয়ে আছে হিমালয়ের রুপকুণ্ড হ্রদটিতে। সেই ১৯৪২সালে একজন বনবিভাগীয় রেঞ্জারের দ্বারা উদ্ঘাটিত হওয়ার পর থেকে আজ অবদি কেউই সুরাহা করতে পারেননি যে এ মানব কঙ্কালগুলি কোথা থেকে কেমন করে এখানে এসে জড়ো হলো! হিমালয়ের রুপকুণ্ডের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সে কঙ্কালগুলি নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। কোন পশু মারা গেলে যেভাবে শকুণের পাল তার চারদিকে ঘুরপাক খেতে শুরু করে অনেকটা সেমতই দুনিয়ার তাবৎ গবেষক মিলেও এর কোন সুরাহা করতে আজো সক্ষম হননি। অনুসন্দিৎসু গবেষকদের জিজ্ঞাসা- এরা কি জাপানী সৈনিক ছিল? না-কি পাহাড় ধ্বসের শিকার কোন অভিযাত্রী দল কিংবা কোন ভুলে যাওয়া অতীতের সংক্রামক ব্যাধির শিকার না-কি কোন আক্রমনের রেখে যাওয়া স্মৃতি।
এমনই বহু কেচ্ছা-কাহিনী রচিত হয়েই চলেছে কিন্তু আসল ঘটনার কোন কুল-কিনারা করতে পারেনি কেউই।
বর্তমানে ২ডজনেরও অধিক আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল সম্পূর্ন ভিন্ন রকমের কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের দেখায়, দীর্ঘকালের পুরানো এই হাড়-কঙ্কালগুলো একই সময়ের এবং একই মানবগোত্রের নয়। তাদের গবেষণা থেকে তারা বুঝতে পেরেছেন যে হিমালয়ের রুপকুণ্ডের কয়েকশতাব্দী প্রাচীন এই মানবকঙ্কাল গুলো একজাতীয় মানুষের নয়। দুনিয়ার বিভিন্ন জাতের, ভিন্ন ভিন্ন দেশের সম্পূর্ণ ভিন্ন আকৃতির মানব কঙ্কাল এগুলো। যেভাবেই হোক আর যে কারণেই হোক এরা এখানে একত্রিত হয়েছিলেন। নতুন এই গবেষকদের সিদ্ধান্তও আরো বেশী রহস্যঘেরা। গবেষকগন তাদের প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা “ন্যাচার কম্যুনিকেশন” নামক দিনলিপিতে প্রকাশ করেছেন এ বছরের এই আগষ্ট মাসেই।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী এদায়ন হার্নি ও নিক পেটারসন এবং দ্বিমাত্রিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত দু’নমুনার সিদ্ধান্তের ২৮জন লেখক বলেছেন, তারা তাদের গবেষনা থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলে পূর্ণমাত্রায় আচম্বিত হয়েছেন। তারা ৭৬টি কঙ্কালের উপর ডিএনএ গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন যে ৩৮টি কঙ্কাল থেকে জন্মগত পুরো বিবরণ পাওয়া গেছে। বাকী সবগুলো খুব পরিচ্ছন্নভাবেই তাদের মানবিক বিভিন্নতা বা বৈচিত্র্য প্রকাশ করেছে। আরো পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে গবেষনার ফলে পাওয়া গেছে যে এসব কঙ্কালের অধিকারী বহু মানুষ এক স্থানের নয় এবং একই জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ছিলেন না। ৩৮টি কঙ্কালের মধ্যে ২৩টি কঙ্কালের মানুষ প্রায় ৮শত বছরের পুরানো এবং বাকী ১৫জন প্রায় ১৮শত বছরের পুরানো। যদিও পাওয়া গেছে যে বয়স্ক ওই ২৩জন মানুষ এসেছিলেন দক্ষিন এশিয়া থেকে উল্লেখ করে গবেষক হার্নি ও পেটারসন বলেন, প্রমান এমনও পাওয়া গেছে যে তারা উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছিলেন। তাদের কঙ্কাল পরীক্ষায় আরো পাওয়া গেছে যে কঙ্কালগুলো একাধিক ঘটনার মুখোমুখী হয়েছিল। গবেষক পিটারসন বলন, ১৫জনের একজনের কঙ্কাল পরীক্ষায় দেখা গেছে তিনি এসেছিলেন পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল তথা গ্রীকভাষা-ভাষী অঞ্চল থেকে। আরেকজনের কঙ্কাল পরীক্ষায় পাওয়া গেছে তিনি দক্ষিনপূর্ব এশিয়ার মানুষ ছিলেন।
জার্মানীর মানবেতিহাস বিজ্ঞানের মেক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউটে পিএইচডি পড়ুয়া অপর গবেষক ও লেখক আয়ূশী নায়ক বলেন, যে ৩৮জন মানুষের কঙ্কালের উপর গবেষনা চালানো হয়েছে তা থেকে এই ৩প্রকার মানুষের খোঁজ পাওয়া গেছে। বাকী কঙ্কালগুলোর গবেষণা ও বিশ্লেষণের মাঝে আরো কত যে ঐতিহাসিক ঘটনা ও ভৌগলিক অঞ্চলের খোঁজ রয়েছে তা নিসন্দেহে বলা যায়। একটিমাত্র গবেষণা দিয়ে সবগুলো কঙ্কালের ললাট লিখন পাওয়া যাবে না। রুপকুণ্ড এলাকার শীতল আবহাওয়ার কারণেই সমূহ কঙ্কাল খুব ভালভাবেই প্রকৃতি সংরক্ষন করে রেখেছে। ফলে আরো গবেষণা প্রয়োজন এবং সম্ভব, বলেছেন আয়ূশী নায়ক।
কেমন করে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মানুষ হিমালয়ের রুপকুণ্ডে এসে জীবনের সমাপ্তি ঘটালেন এর রহস্য খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত গবেষকদের কর্মচাঞ্চল্য চলতেই থাকবে। গবেষক পিটারসন আশা করেন, রহস্যঘেরা এসকল ভ্রমণকারীদের জীবনের শেষদিনগুলো নিয়ে আরো নিশ্চিতভাবে জানতে প্রয়োজন ভারতীয় ও হিমালয়ান ঐতিহাসিকদের রুপকুণ্ড গবেষণার এই প্রকল্পে আরো বেশী করে অন্তরভুক্ত করা এবং সংরক্ষিত তথ্য নিয়ে চিরুনী গবেষণায় যাওয়া। তিনি আরো বলেন যে, একটি সূত্র পাওয়া যায় যা কি-না এই রুপকুণ্ড এলাকাটি একটি তীর্থভূমির যাত্রাপথের পাশেই অবস্থিত। অবশ্য তার অর্থ এই নয় যে কঙ্কালগুলো সব এক সময়ের কিছু তীর্থযাত্রীর ছিল।
গবেষক হার্নি ও নায়েক অবশ্য আশা করেন যে, পরবর্তী গবেষণা অবশ্যই এদের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিতভাবে প্রমান করতে সক্ষম হবে। যদিও এসব মানুষের জাতিগত পরিচয় একটু রহস্যাবৃত থাকতেও পারে।
এর আগের গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছিল যে প্রবল ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে এসব মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে তেমন কোন আকস্মিক বা সর্বনাশা প্রাকৃতিক দূর্যোগের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। সূত্র: এ অবসকোরা |