রাজনগর প্রতিনিধি।। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় অপরিচিতা সেই যুবতিকে পালাক্রমে ভোগের পর হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। সোমবার পুলিশ সুপার সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এমন লোমহর্ষক তথ্য দেন জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ পিপিএম (বার)। এই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই মহিলাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, রাজনগর উপজেলার গয়াসপুর গ্রামের মৃত তরমুজ মিয়া ওরফে তম্মু মিয়ার পুত্র জমশেদ মিয়া(৫২), একই উপজেলার চাঁনভাগ গ্রামের হোসেন খাঁর পুত্র বাদশা খাঁ(৩২), সৈয়দনগর (ভাঙ্গারহাট) ইলাছ মিয়ার পুত্র শিপন মিয়া(৩০), চাঁনভাগ (টিলাগাঁও) গ্রামের মজিদ মিয়ার স্ত্রী এনা বেগম ওরফে গোলাপী(৩৫), বড়দল গ্রামের মৃত শেখ আবুল কালাম আজাদ’র পুত্র শেখ হুমায়ুন আহমদ (২৫) ও সিলেট গোলাপগঞ্জ থানার রনিখাই গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের স্ত্রী সালমা বেগম(২৫)। এ ঘটনায় পলাতক রয়েছে চাঁনভাগ (টিলাগাঁও) গ্রামের মনির মিয়ার পুত্র জাহাঙ্গীর আলম(২৭)।
পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিপিএম(বার) সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ১২ই জুন সকালে রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের চাঁনভাগস্থ(দক্ষিণ টিলা) এলাকার জনৈক মুকুল মিয়ার আকাশী বাগানের একটি গাছ থেকে অজ্ঞাতনামা যুবতির(১৮) ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই যায়গা থেকে একটি ব্যাগ ও কিছু কাপড়-চোপড়ও পায় পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ আলামত জব্দ করে ও ময়না তদন্তে গণধর্ষণ ও হত্যার আলামত পায়। পরে আসামীদের ধরতে তার দিক নির্দেশনায় মৌলভীবাজার সদর সার্কেল এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে রাজনগর থানা অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসিম, ইন্সপেক্টর(তদন্ত) আবুল কালাম, এসআই বিনয় ভূষন, এসআই কালাম ও এসআই অজিত কুমার তালুকদারসহ অন্যান্যদের নিয়ে গঠিত তদন্ত টিম বিষয়টি নিয়ে নিবিড় তদন্ত চালায়।
পুলিশের পাতানো টুপে এক পর্যায়ে আসামী জামশেদ মিয়া আটকে যায়। পরবর্তীতে তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে মেয়েটির লাশ গাছে ঝুলিয়ে দেয়া হয় এমনটা স্বীকার করে জমসেদ। পরে তার মাধ্যমে অবশিষ্ট আসামীদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সুপার আরো জানান, অজ্ঞাত খুন হওয়া যুবতি একজন দেহব্যবসায়ী ছিল। আসামী সালমা বেগমকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে, অজ্ঞাতনামা মৃত মেয়েটির ছদ্মনাম সুমি বেগম। তবে তার কোন ঠিকানা জানা যায়নি এবং জনৈক রুকশানা বেগম মৃত সুমী বেগমকে আসামী সালমার নিকট দিয়েছিল।
যুবতি হত্যার দায়ে আটকৃত ৬ নারী পুরুষের একজন শিপন। ছবি: মুক্তকথা |
যুবতি হত্যার দায়ে আটকৃত ৬ নারী পুরুষের অপর মহিলা সালমা। ছবি: মুক্তকথা |
জানা যায়, এ কাজের জন্য আসামীরা ওই মেয়েটিকে সালমা বেগম এর কাছ থেকে দুই হাজার টাকা চুক্তিতে এক রাতের জন্য ভাড়া করে এনেছিল। তাকে প্রথম রাতে আসামীরা এনা বেগম ওরফে গোলাপীর বাড়ীতে রেখে অসামাজিক কাজ করে। দ্বিতীয় দিন এমন জগন্যতম কাজ না করাতে তারা খুন করে গাছে ঝুলিয়ে রাখে তাকে। তবে গ্রেফতারকৃত আসামীদের কাছ থেকে ওই অজ্ঞাত নারীর পরিচয় এখনো পুলিশ শনাক্ত করতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সদর সার্কেল এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জিয়াউর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম।