জাকির হোসেন॥ ২০ ডিসেম্বর রোববার সকালে মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাইন বিস্ফোরনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম ফলকে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করেন মৌলভীবাজারের সুশীল সমাজ।
কোথা থেকে কেমন করে এ বিষ্ফোরণ ঘটে:
১৯৭১ সালের এই দিনে বিজয়ের ৪র্থ দিনের মাথায় মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি দালানে স্থাপন করা মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী তাবুতে এ বিষ্ফোরণ ঘটে। যুদ্ধফেরত মুক্তিযোদ্ধাদের এ অস্থায়ী তাবুতে মুক্তিযোদ্ধাদের অব্যবহৃত অস্ত্র-গোলাবারুদ এখানে একেবারে অস্থায়ীভাবে জমা রাখা হয়েছিল। যুদ্ধফেরৎ বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাগন একে একে এসে এখানে জড়ো হয়ে তাদের অস্ত্র-সস্ত্র জমা দিয়ে নাম লিখিয়ে বাড়ী যাচ্ছিলেন। যাদের বাড়ীঘর দূরে রয়েছে তারা এখানেই স্কুল ভবনের ভিন্নকক্ষ সমূহে বসে গল্পসল্পে সময় কাটাচ্ছিলেন। কেউ কেউ অপেক্ষা করছিলেন দলনেতার। এমন অবস্থায় সম্পূর্ণ অসতর্কতা ও অজ্ঞতাজনিত কারণে সব ধরনের গোলাবারুদ ও ‘মাইন’ একত্রে গোদামের মত করে রাখার ফলেই এই ভয়াবহ লোকক্ষয়ী বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। বলেছেন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা হারুনূর রশীদ।
তিনি আরো বলেন, বিজয়ের উল্লাসে বাড়ীতে ফেরার আনন্দে যুদ্ধ থেকে ফেরত আসা মুক্তিযোদ্ধাগন পূর্ব নির্দেশ অনুযায়ী মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণী কক্ষে পূর্ব থেকে ব্যবস্থা করা একটি অস্থায়ী তাবুগোদামে অস্ত্র জমা করতে থাকেন। ওই জমা রাখার কাজে কোন শৃঙ্ক্ষলা ছিল না। যে যার মত করে অস্ত্রসস্ত্র রাখছিলেন। এই অস্থায়ী তাবু গোদামের দায়ীত্বে যারা ছিলেন তাদেরও অজ্ঞতা ও দায়ীত্বহীনতার কারণে যেনতেন প্রকারে এক জাতের অস্ত্রের উপরে ভিন্ন জাতের অস্ত্র ও ‘মাইন’ রাখার কারণেই সারা শহর কাঁপিয়ে হঠাত করেই ওই গোদামে মাইন বিস্ফোরণের ভয়াবহ এ ঘটনাটি ঘটেছিল। তখন ঘটনা স্থলেই কতজন মুক্তিযোদ্ধা মারা যান সে সময়েই গণনা করা সম্ভব হতো কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে তা সে সময় করা হয়নি। পরে হয়েছিল বলেও শুনিনি। বহু মানুষের হাত-পা পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু চেহারা পাওয়া যায়নি। ভয়াবহ বিষ্ফোরণে মানবদেহ ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে কোথায় পড়েছিল তার সবটুকু একমাত্র তখনই খুঁজে দেখলে হয়তো পাওয়া যেতো। কিন্তু দায়ীত্ব নিয়ে কেউই এ কাজে এগিয়ে আসেননি সেসময়। বরং যারা অস্থায়ী তাবুর দায়ীত্বে ছিলেন তাদের অনেকেই পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, এই ছিল সেদিনের অবস্থা।
এতোবড় দূর্ঘটনার পর যুদ্ধকালীন সে সময়ের সমর ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নির্বিকার থাকায় দূর্ঘটনাটির আসল রূপ আজও অন্ধকারে রয়ে গেছে। প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আজো জানা সম্ভব হয়নি। বিষ্ফোরণের সময় ওই অস্থায়ী তাবুতে এবং এর খুবই কাছে কমপক্ষে জনাশ’তেক মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।
অবশ্য শহরের সাধারণ মানুষ এরপর থেকে ২০ ডিসেম্বরের এই দিনটিকে স্থানীয় শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন।
এবারের শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদানে ছিলেন পৌর মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান, পৌর সভার প্যানেল মেয়র মনবীর রায় মঞ্জু, প্যানেল মেয়র মো: ফয়সল আহমদ কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রেজাউল করিম সুমন ও পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারী বৃন্দ।
|