হারুনূর রশীদ।।
তখন দিলীপ কুমারের শিল্পী জীবনের চরম বিকাশ ঘটেছে। ভারতীয় চলচ্চিত্রে দিলীপ কুমার তখন তুঙ্গে। দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন ছবি তৈরী করে। এমনি একদিন তিনি বিমানে বিদেশ যাচ্ছেন। বিমানে উঠে নিজের আসনে বসেছেন। দেখলেন তার পাশের আসনেই অপরিচিত একজন ভদ্রলোক বসে আছেন। সাধারণ একটি প্যান্ট-সার্ট পড়া ভদ্রলোককে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি ভারতীয় মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ তবে মার্জিত ও শিক্ষিত।
অন্যান্য যাত্রীগন তখন দিলীপ কুমারের দিকে বার বার তাকিয়ে দেখছিলেন। যেনো দিলীপ কুমারকে গিলে ফেলবেন। কিন্তু তার পাশে বসা ওই লোক ছিলেন একেবারে নির্বিকার। তিনি তার পত্রিকা পড়ছিলেন আর বিমানের জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে তাকিয়ে নিজেকে স্বচ্ছ করে নিচ্ছিলেন। যখন বিমানের পরিচারকেরা চা নিয়ে এলেন তিনি নিশ্চিন্তে চায়ে খুবই শান্তভাবে চুমুক দিচ্ছিলেন। দিলীপ কুমারের প্রতি তার কোন আগ্রহই ছিল না। দিলীপের একেবারে পাশে বসা অথচ তার সাথে কথা বলাতো দূরের কথা একবার তাকিয়ে দেখার কোন উৎসাহ তার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়নি। দিলীপ নিজে থেকেই তার সাথে একটু আলাপ করার জন্য তার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। ভদ্রলোকও অত্যন্ত সৌজন্য দেখিয়ে হেসে তাকে “হ্যালো” বললেন। কথা বলার সুযোগ পেয়ে দিলীপ কুমার ছবির বিষয় এনে তাকে জিজ্ঞেস করলেন-“আপনি কি ছবি দেখেন?” তিনি জবাব দিলেন, “খুবই কম। বেশ কয়েক বছর আগে আমি একটি দেখেছিলাম।”
দিলীপ বললেন তিনি ছবিতে কাজ করেন। ভদ্রলোক মাথা নাড়িয়ে বললেন- “তা তো খুবই ভাল, তা আপনি ফিল্মে কি করেন?”
দিলীপ উত্তর দিলেন, আমি একজন অভিনেতা। ভদ্রলোক আবার মাথা নাড়িয়ে বিষ্ময়ে অভিভুত হয়ে বললেন- “তাই না-কি, আপনিই অভিনয় করেন?”
বিমান গন্তব্যে এসে গেছে। সকলের সাথে তারা দু’জনও নেমে আসলেন। দিলীপ কুমার তখন ভদ্রলোকের সাথে হাত মিলিয়ে বললেন-“ আপনার সাথে আলাপ করে ভালই লেগেছে।
ও হ্যাঁ আমার নাম দিলীপ কুমার”।
ভদ্রলোক মুচকি হেসে আমার সাথে হাত মিলালেন এবং ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন- “আমার নাম টাটা।”
দিলীপ কুমার তো বিষ্ময়ে হতবাক! ইনিই জমসেতজি টাটা! তিনি শিখলেন, তুমি কত বড় তা বড় বিষয় নয়, দেখবে প্রায়শঃই তোমার সাথেই আরো বড় একজনও না হয় আছেন। অতএব বিনয়ী হওয়াই উত্তম, এতে কোন খরচ করতে হয় না।
অনুরূপ একটি শিক্ষনীয় মজার ঘটনা ঘটেছিল করাচীতে ১৯৬৯-৭০ সালে। একটি অর্থনীতি বিষয়ক সন্মেলনে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানসহ বিশ্বের বরেণ্য প্রতিথযশা অর্থনীতিবিদগন মঞ্চে বক্তৃতার পূর্বে তাদের পরিচয় দিচ্ছিলেন ড. অমুক- অধ্যাপক অর্থনীতি, অমুক বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি বলে।
সব শেষের বক্তা যিনি সন্মেলনের মধ্যমণি ছিলেন, মঞ্চে এসে নিজের পরিচয় দিলেন- “আমি পল সামুয়েলসন, অর্থনীতির একজন ছাত্র।” ঘটনাক্রমে, অধ্যাপক পল সামুয়েলসন ছিলেন একজন নোবেল বিজয়ী, হার্বার্ডের অধ্যাপক এবং বিশ্ব অর্থনীতির বিভিন্ন সূত্রের জনক।
(সৈয়দ মোয়াজ্জেম ভাইয়ের ফেইচবুক থেকে সংগৃহীত)