মৌলভীবাজার দফতর থেকে: রোববার, ২৮শে আগষ্ট ২০১৬।। মৌলভীবাজারের মনু প্রকল্পভুক্ত কাশিমপুর পাম্প হাউসের সংস্কার নিয়ে কর্তৃপক্ষের লুকোচুরি বন্ধের পাশাপাশি বাস্তব সমীক্ষার আলোকে পাম্প হাউস ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার সংষ্কার অথবা এখানে নতুন করে পাম্প হাউস সহ প্রয়োজনীয় স্লুইচ গেইট স্থাপনের দাবিতে শনিবার দুপুরে রাজনগরের কাশিমপুর বাজারে মানববন্ধন সহ সমাবেশ অনুষ্টিত হয়।
সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারনের সতঃস্ফুর্ত উপস্থিতিতে অনুষ্টিত সমাবেশে বক্তাগন বলেন, মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার ৫৬ হাজার একর আয়তন বিশিষ্ট এলাকা নিয়ে ৮০’র দশকে শত কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্টিত দেশের অন্যতম মনু প্রকল্প এখন এলাকা বাসীর দূর্ভোগের প্রতিক হয়ে উঠেছে। কাশিমপুরে প্রতিষ্টিত পাম্প হাউসের ত্রুটিপূর্ণ নিষ্কাসন ব্যবস্থার কারণে প্রকল্প এলাকায় আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত লাগাতার জলাবদ্ধতার ফলে আউশ, বোনা আমন এবং রোপা আমন জমিতে চাষাবাদ সম্ভব হচ্ছে না। তার প্রতিক্রিয়াতে প্রকল্প এলাকার অধিকাংশ গ্রাম সমূহে উৎপাদন ঘাটতি দিনে দিনে প্রকট আকার ধারণ করছে।
পাম্প হাউস প্রতিষ্টাকালে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের রেইন ওয়াটারের উপর সমীক্ষা চালিয়ে যে ৮টি পাম্প মেশিন স্থাপন করা হয়েছিল সে মেশিন দ্বারা এখন পানি নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছে না। রেইন ওয়াটার ছাড়াও ভাটেরা পাহাড় থেকে বিভিন্ন ছড়া দিয়ে আগত পানিতে গোটা কাউয়াদীঘি হাওর সয়লাভ হয়ে যায়। যার ফলে বর্ষা মৌসুমে সাবেকি আউস ও রোপা আমনের জমিতে ধান চাষাবাদ হচ্ছে না গত এক দশক থেকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন সরজমিন তদন্তে এসে পাম্প হাউসের দুর্বলতা চিহ্নিত করে এখানে নতুন ভাবে পাম্প মেশিন স্থাপনের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। এ লক্ষ্যে সরকার থেকে ৮৪ কোটি টাকার বরাদ্দ নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু এ বরাদ্দকে ঘিরে একটি চক্র তৎপর হয়ে উঠেছে। বক্তাগন আরো বলেন, ৮০’র দশকে একটি বিদেশি কোম্পানী ৩৩০ কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন যে ৮টি মেশিন সরবরাহ করেছিল সে কোম্পানীর দেশীয় এজেন্ট এখন একই ক্ষমতা সম্পন্ন ৮টি পাম্প মেশিন ডি, পি, পি সিস্টেমে সরবরাহ করার জন্য ৭৯ কোটি টাকার একটি সমযোতা করতে যাচ্ছে। অথচ আন্তর্জাতিক দরপত্রের ভিত্তিতে মেশিন ক্রয় করা হলে ৪০/৫০ কোটি টাকায় অধিকতর ক্ষমতা সম্পন্ন মেশিন স্থাপন করা সম্ভব। তাতে সরকারী বরাদ্দের যেমন সাশ্রয় হবে তেমনি পানি নিষ্কাশনেও তেমন কোন সমস্যা থাকবে না। কোন কোন বক্তা বলেন, বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে নতুন ভাবে একটি পাম্প হাউস স্থাপন করা সম্ভব। তার পরিবর্তে যদি আগের ক্ষমতা সম্পন্ন মেশিন নতুন ভাবে স্থাপন করা হয় তাহলে এলাকার জনগণ এ প্রক্রিয়াকে সরাসরি প্রতিহত করবে। তারা বলেন, মনু প্রকল্পকে একটি লুটপাটের আখড়াতে পরিণত করা হয়েছে। প্রতি বছর প্রকল্পের অবকাঠামো সংরক্ষন খাতে ৪০/৪৫ লক্ষ টাকা এবং মেশিন ওভার হুলিংয়ের নামে আরো ২০/২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এখন পাম্প হাউসের নতুন মেশিন স্থাপনের বরাদ্দ থেকে ১৫/২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার আয়োজন সম্পন্ন হচ্ছে। এ অবস্থাকে কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে তদারকির জন্য বক্তাগণ উর্ধ্বতন মহলের নিকট দাবি জানান।
মনু প্রকল্প ও হাওর রক্ষা সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক বকশি ইকবাল আহমদ এর সভাপতিত্বে এবং ইউপি চেয়ারম্যান ও সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব নকুল চন্দ্র দাশের পরিচালনায় মানববন্ধন উত্তর সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুহিবুর রহমান তরফদার, সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ, পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারি সরওয়ার আহমদ সহ এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মোঃ আলমগীর হোসেন, জয়নাল মিয়া, হরিপদ দাস, আমির মিয়া, বাবুল মিয়া, আক্তার উদ্দিন, সুহেল আহমদ, ডাঃ ফরিদ উদ্দিন ও কাদের মিয়া প্রমুখ।