দেশে শীত মৌসুমে নানা জাতের পিঠা পুলির আয়োজন হয়ে থাকে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে। এজন্য আটা ময়দার সাথে থাকে চালের গুড়া দিয়ে পিঠা তৈরীর কাজ। তবে কুরবানির ঈদের সময় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে আতপ চালের গুড়া দিয়ে রুটি তৈরী করে কুরবানির মাংস দিয়ে খাওয়ার একটি প্রচলন রয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর কুরবানির ঈদের আগে চালের মিলগুলি ব্যস্ত থাকের চাল ভাঙ্গাতে।
আসন্ন কুরবানির ঈদেক সামনে রেখে কমলগঞ্জের চালের মিলগুলি ব্যস্ত সময় পার করছেন চাল ভাঙ্গার কাজে। মঙ্গলবার কমলগঞ্জের শমশেরনগর বাজারের মশিউর রহমানের চালের মিল ঘুরে দেখা যায় নিজ নিজ ব্যাগে চাল ভরে সারিবদ্ধভাবে রেখে গেছেন মানুষজন।
মিল মালিক মশিউর রহমান জানান, সারা বছর মিলে হলুদ, মরিচ, গম ও চাল ভাঙ্গিয়ে থাকেন। তবে কুরবানির ঈদের আগে ব্যস্ত থাকতে হয় আতপ চাল ভাঙ্গার কাজে। গড়ে প্রতিদিন ৩০০ কেজি পরিমাণ চাল ভাঙ্গাতে হচ্ছে। প্রতি কেজি ১০টাকা হারে তিনি ভাঙ্গিয়ে থাকেন। মানুষজন ঈদের সময় বাসা বাড়িতে চালের গুড়ার নানা জাতের পিঠার সাথে গুড়া দিয়ে রুটি তৈরী করেন। কুরবানির মাংস দিয়ে রুটি খেতে আলাদা স্বাদ বলেও মিল মালিক মশিউর জানান। ঈদের ৩ থেকে ৪ দিন আগ থেকে অনেক সময় রাত জেগে মিলে কাজ করতে হয়। চাল নিয়ে এসে মানুষজন ওজন দিয়ে নিজের ব্যাগে কাগজে নাম লিখে রেখে যান। চাল গুড়া করে আবার তিনি সারিবদ্ধভাবে রেখে দেন। পরে মানুষজন এসে নিজ নিজ ব্যাগ নিয়ে যায়। মিল মালিক আরও জানান কুরবানির ঈদের সময় অনেকেই আবার নিজে শুকনো মরিচ, হলুদ ও ধনে গুড়া করে নিয়ে যান।
শমশেরনগর সুজা মেমোরিয়াল কলেজের প্রভাষক শাহাজান মানিক বলেন, কুরবানির ঈদের পর কুরবানির মাংস দিয়ে চালের গুড়ার রুটি খাওয়ার প্রচলন অনকে পূর্ব থেকে। এর স্বাদও আলাদা। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে এর প্রচলন রয়েছে। মোটামোটি সব মুসলিম পরিবারই চালের গুড়া দিয়ে রুটি করেন। আর তখন বন্ধু বান্ধবদেরও দাওয়াত দেওয়া হয় কুরবানির মাংস ও চালের রুটি খাওয়ার জন্য।
মৌলভীবাজার সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদ বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল(২৮জুন) বুধবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ও ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্স মৌলভীবাজার জেলা শাখার উদ্দ্যোগে গার্ল গাইডস্ কার্যালয়ের ট্রেনিং সেন্টারে গরিব, পথশিশু, সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদ বস্ত্র বিতরণ করা হয়।
ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্স মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি শাহ মো: তানভীর আহমদ রিমন সভাপতিত্বে এবং শিশু সংসদ সদস্য (মেয়ে) নূসরাত খানম নওশীন এর পরিচালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন মাসুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংবাদিক নজরুল ইসলাম মুহিব,মৌলভীবাজার গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন এর সাধারন সম্পাদক মাধুরী মজুমদার।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন মাসুদ বলেন ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্সের উদ্দোগটি মহান। শিশুরাই শিশুদের জন্য কাজ করছে। অবশ্যই এই এনসিটিএফ’র শিশু অনান্য শিশুদের থেকে আলাদা। এ সময় জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন মাসুদ এনসিটিএফ’র শিশু অধিকার বিষয়ে কাজের পাশে থাকার কথা বলেন। তিনি শিশু একাডেমি এবং সরকারি ভাবে পরিচালিত জাতীয় এই শিশু সংগঠনটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন। শিশুদের মাঝে ঈদ বস্ত্র বিতরণের এই মহৎ উদ্দ্যোগকে সাধুবাদ জানান। ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্সের সহ-সভাপতি এূশি চন্দ, শিশু গবেষক তুলনা ধর তুষ্টি, শিশু সংসদ সদস্য(ছেলে) ত্রিদিব ধর কাব্য, সদস্য প্রশান্তিকা দেব পূনম, তাহিয়া তাবাসুম ইসলাম,তাকসিন নিধি, সাধারণ সম্পাদক মোবাম্বিরা সরকার আইরিন, শিশু সাংবাদিক বিততি রায় বিদ্যা। সম্পুর্ণ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন ডিষ্ট্রিক ভলেন্টিয়ার দ্বীপ্র ধর অর্ঘ্য। অনুষ্ঠানে জেলার শতাধিক গরিব, পথশিশু, সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদ বস্ত্র বিতরণ করা হয়। ছবি ৫টি।
আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কামার পল্লী। তৈরি করা হচ্ছে ধারালো ছুরি, চাপাতি, দা, বটিসহ নানাবিধ সরঞ্জাম। এ ব্যস্ততা চলবে ঈদের দিন পর্যন্ত। উপজেলার শমশেরনগর, ভানুগাছ, মুন্সীবাাজার, আদমপুরসহ বিণিœ বাজারে গিয়ে দেখা যায় কামাররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বাজার গুলোতে সারা বছর শুধু দা, বটি বিক্রি হলেও ঈদকে সামনে রেখে দোকানগুলোতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে গরু জবাই করার ছোরা, দেশি-বিদেশি চাপাতি, বিভিন্ন সাইজের চাকু। অন্যদিকে মার্কেটের ভেতরে কারখানায় কয়লার আগুনে লোহা পুড়িয়ে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে রূপ দিচ্ছেন কামাররা। তবে ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বাড়লেও এখনো ভালভাবে বেচা-বিক্রি শুরু হয়নি।
কামারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখনো মানুষের ছোরা-চাপাতি কেনা পুরোদমে শুরু করেনি। মূলত গরু বিক্রির ওপরই আমাদের বেচা-বিক্রি নির্ভর করে। গরু কেনা যখন খুব জমে, তখন ছোরা-চাপাতিতেও মানুষ ভিড় করে। অনেকেই আবার পুরাতন ছোরা ধার দিতে আসেন। আর জবাই ছোরা সাধারণত মাদরাসার হুজুরেরাই কিনেন। এক হুজুর কালকে মরিচা পড়া ১০টা ছোরা এনেছিলেন। আগের বছর জবাই দেওয়ার পর গত এক বছরে আর কাজে লাগেনি।
কমলগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি দোকানে কথা বলে জানা যায়, এবার সবকিছুরই দাম বাড়তি। গরু জবাইয়ের ছোরা বিক্রি হয় পিস হিসেবে। আর চাপাতি বিক্রি হয় কেজি হিসেবে। রেল লাইনের লোহা দিয়ে তৈরি প্রতি পিস চাপাতির দাম পড়ে ৫০০ টাকা থেকে সাড়ে ৬০০ টাকায়। অন্যদিকে গাড়ির স্প্রিংয়ের লোহার তৈরি চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এছাড়া বটি ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা প্রতি কেজি লোহা। গরু জবাইয়ের ছুরি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। ভানুগাছ বাজারের বিশ্ব কর্মকার ও সুবিনয় দেব জানান, কুরবানির পশু জবাই করা, মাংস কাটা ও চামড়া ছিলানোর জন্য ধারালো ছুরির প্রয়োজন। তাই কেউ পুরান জিনিস শান দিতে ও কেউ নতুন জিনিস তৈরি করতে দোকানে আসছেন। পুরোদমে কাজ চলছে দোকানে। সারা বছর কাজের চাপ থাকে না। যা চাপ এই ঈদ মৌসুমেই।