প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলায় সার্ভার সমস্যার সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার বিদেশগামীরা। দীর্ঘ ১ মাস যাবত সার্ভারে সমস্যা থাকায় একাধিক দিন এসেও ফিঙ্গার দিতে পারছেন না। আবার কারো ভিসার মেয়াদ কম থাকায় মৌলভীবাজারে ফিঙ্গার দিতে না পারায় শেষ পর্যন্ত ঢাকায় যেতে হচ্ছে তাদের। যার কারণে যাত্রীদের খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, সার্ভার ডাউন থাকায় প্রতিদিন যে পরিমাণ ফিঙ্গার প্রিন্ট করার কথা তার একতৃতীয়াংশ করা যাচ্ছে না। আবার প্রায় দিন সার্ভার পুরো সময় বন্ধ থাকে।
জানা যায়, সরকারিভাবে নিবন্ধিত হয়ে বিদেশ যেতে হলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে নিবন্ধন করতে হয়। এজন্য বিদেশগামীদের সেখানে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হয়। মৌলভীবাজার জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস থেকে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বিদেশগামীরা ফিঙ্গার দিয়ে থাকেন।
মৌলভীবাজার কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস জানায়, ৪ জুন থেকে সার্ভারে সমস্যা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে আসে আবার চলে যায়। কেউ কেউ ৪/৫ দিন আসার পর ফিঙ্গার দিতে পারছেন না। স্বাভাবিক থাকাবস্থায় প্রতিদিন গড়ে ১৫০/২০০ বিদেশগামী ফিঙ্গার দিতে পারতেন। কিন্তু এখন প্রতিদিন ৪০০/৫০০ লোক এসে ফেরত যাচ্ছে। কিন্তু এমআরপি পাসপোর্টের ডাটা করা যাচ্ছে না। যার কারণে এমআরপি পাসপোর্টধারীদের ফিঙ্গার কোনো অবস্থাতে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস ঘুরে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে আসা বিদেশগামীদের ভোগান্তির চিত্র দেখা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় তিনশ’র মতো বিদেশগামী মঙ্গলবার ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে আসেন। তাদের বেশিরভাগ সকাল ৮টা থেকে অপেক্ষা করছেন ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিকাল ৪টা পর্যন্ত একজন যাত্রীও ফিঙ্গার দিতে পারেননি। তাদের সবাইকে পরদিন আবার আসতে বলে বিদায় করে দেয়া হয়। ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে না পেরে অনেক বিদেশগামী বিরক্ত হয়ে ফিরে যান। আবার কেউ কেউ চেষ্টা করতে থাকেন যদি কোনো উপায়ে কাজটা করিয়ে নেওয়া যায়। এতে তাদের টাকা, সময় ও শ্রম দিতে হচ্ছে।
এবিষয়ে কথা হয় ফিঙ্গার দিতে আসা হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার হোসেন আলীর সাথে, তিনি বলেন, আজ(মঙ্গলবার) পর্যন্ত ৪দিন এসেছি। কিন্তু সার্ভার না থাকায় ফিঙ্গার দিতে পারছি না। একাধিকবার আসায় আমার কয়েক গুণ টাকা বেশি খরচ হয়েছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বাসিন্দা শাহিন হোসেন বলেন, এনিয়ে ৩দিন এসেছি। সার্ভার না থাকায় ফিঙ্গার দিতে পারছি না। হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার মোঃ রমিজ আলী বলেন, ভাতীজার ফিঙ্গার দেয়ার জন্য ২দিন নিয়ে এসেছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলে সার্ভারে সমস্যা। যার কারণে ফিঙ্গার দিতে পারছি না। শ্রীমঙ্গল উপজেলার আব্দুল জব্বার ও কমলগঞ্জ উপজেলার দিপন অলমিক সহ প্রায় ৫০জন বিদেশগামী সার্ভারের সমস্যার কথা উল্লেখ করেন প্রতিবেদকের কাছে।
এবিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, সার্ভার সমস্যার কথা আমাদের ডেমো ফোরামে নিয়মিত বলছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন। আবার দেখা গেছে যখন সার্ভার থাকে এই দিন আমরা রাত ৯/১০টা পর্যন্ত কাজ করি। বিদেশগামীদের মধ্যে যাদের বেশি জরুরি তাদেরকে আমরা ঢাকায় পাঠিয়ে দেই। জনবল সংকটের কথাও বলেন তিনি।