মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের কালা পাহাড়ে দ্বিতীয় ধাপের অভিযানে নতুন জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম(সিটিটিসি) ইউনিট। নতুন করে সেই আস্তানা থেকে বিপুল সংখ্যক গুলা বারুদ উদ্ধার করা হয়। এই আস্তানা থেকে পালিয়া আসা ইমাম মাহমুদের কাফেলার ১৭সদস্যকে স্থানীয় মানুষ আটক করে। এরপর বেরিয়ে আসে দুর্গম পাহাড়ে নতুন আস্তানার সন্ধান।
মঙ্গলবার(১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনসে সংবাদ সম্মেলন করে অপারেশন হিলসাইড এর সমাপ্তি ঘোষনা করেন সিটিটিসি প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, সোমবার সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের আছকরাবাদ বাজারের স্থানীয় মানুষ সন্দেহজনকভাবে ১৭জন ব্যক্তিকে আটক করেন। “এই খবর পাওয়ার পরপরই আমি ঘটনাস্থলে আসি। আমাদের টিমের তাদেরকে গত শনিবার যে আস্তানায় অভিযান চালায়, সেখান থেকে আটককৃতদের সহযোগী বলে আমরা নিশ্চিত হই। এরপর কর্মধা ইউনিয়নের কার্যালয় থেকে আমরা তাদেরকে আমাদের হেফাজতে নিয়ে আসি। এরপর রাতভর তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এক্সক্লুসিভ কিছু তথ্য পাই। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এই কালাপাহাড়ে তাদের আরেকটি আস্তানা আছে বলে আমাদের জানায়।”
তিনি বলেন, “আমরা ভোরে ওই আস্তানা সন্ধানের জন্য বের হই। দুর্গম প্রায় ২০টি পাহাড় পাড়ি দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছাতে সক্ষম হই। সেখানে গিয়ে বিশেষায়িক ফোর্স অনুসন্ধান চালিয়ে দুটি ঘর থেকে ছয় কেজি এক্সক্লোসিভ, ১৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলি উদ্ধার করে। তারা সবাই স্বীকার করে যে নতুন উগ্র সংগঠন ইমাম মাহমুদের কাফেলার সদস্য। যেদিন তাদের আটক করা হয় তখন তাদের সাথে ছিল নগদ ২ লাখ টাকা, দুটি বড় দা, ৯৫টি ডেননেটার।”
আসাদুজ্জামান বলেন, “আমরা ধারণা করছি এখানে ওই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্ররা রয়েছে। তাদের মধ্যে ডাক্তার আছেন ইঞ্জিনিয়ারও আছেন। যেহেতু তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা অনেক সময় ও কৌশলের প্রয়োজন হয়, তাই এই মুহুর্তে তাদের মূল পরিকল্পনা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।”
আটককৃতরা হলেন- নাটোরের গাঁওপাড়ার জুয়েল মাহমুদ(২৮), সিরাজগঞ্জের পুরাবাড়ির সোহেল তানভীর রানা(৩০), কক্সবাজারের রামুর সাদমান আরেফিন ফাহিম(২১) মোঃ ইমতেজার হাসসাত নাবীব(১৯), যশোরের মোল্লাপাড়ার ফাহিম খান(১৭), পাবনার আতাইকোলার মোঃ মামুন ইসলাম(১৯), গাইবান্ধার চাদপাড়ার রাহাত মন্ডল(২৪), জামালপুরের সোলাইমান মিয়া(২১), নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জের আরিফুল ইসলাম (৩৪), বগুড়ার হাটশিপুরের মোঃ আশিকুল ইসলাম(২৯), পাবনার আতাইকুলার মামুন ইসলাম(২৬), ঝিনাইদহের ছয়াইলের তানভীর রানা(২৪), সাতক্ষীরার তালার জুয়েল শেখ(২৫), পাবনার আতাইকুলার রফিকুল ইসলাম(৩৮), পাবনার সাথিয়ার মোঃ আবির হোসেন(২০), মাদারিপুরের মেহেদী হাসান মুন্না(২৩), টাঙ্গাইলের কোয়েল(২৫)।
গত শনিবার ভোরে কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নে বাইশালী নামক ওই পাহাড়ি টিলায় সিটিটিসি পুলিশ অভিযান চালায়। এর আগে শুক্রবার রাত ৮টা থেকে ওই বাড়ি ঘিরে রাখে সিটিটিসি ও স্থানীয় পুলিশ। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন হিলসাইড’।
অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানার রাফিউল ইসলাম(২২), কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার হাফিজ উল্লাহ(২৫), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার খায়রুল ইসলাম(২২), তাঁর স্ত্রী মেঘনা (১৭), সাতক্ষীরার শরিফুল ইসলাম(৪০), পাবনার আটঘরিয়া থানার আব্দুছ ছত্তারের স্ত্রী শাপলা বেগম(২২), সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল তানজিমের স্ত্রী মায়েশা ইসলাম (২০), বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানার সুমন মিয়ার স্ত্রী সানজিদা খাতুন(১৮), সাতক্ষীরার তালা থানার শফিকুল ইসলামের স্ত্রী আমিনা বেগম(৪০) এবং তাঁর মেয়ে হাবিবা(২০)। এ ছাড়া অভিযানে তিন শিশুকেও হেফাজতে নেয় সিটিটিসি।