নিলামের টেবিলে হাতুড়ি দিয়ে(হেমারিং করে) আঘাত করে চায়ের নিলাম ডাকা মায়িশাই দেশের প্রথম মহিলা চা নিলামকারী। চট্টগ্রামে প্রথম চায়ের নিলাম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালের ১৬ই জুলাই। এরপর ৭৩ বছরের ইতিহাসে মায়িশাই প্রথম বাংলাদেশি নারী যিনি চায়ের নিলাম পরিচালনা করছেন। চট্টগ্রামের পর শ্রীমঙ্গলেও প্রথম নারী হিসেবে চায়ের নিলাম পরিচালনা শুরু করেন তিনি।
শ্রীমঙ্গলে জন্ম নেয়া মায়িশা ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি এইচএসসি পাশ করেন। এরপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করেন তিনি।
২০২২ সালের মার্চ মাসেই প্রডিউস ব্রোকারস লিমিটেডে শিক্ষানবিশ ‘টি টেস্টার’ হিসেবে মায়িশা কাজ করা শুরু করেন। বিদেশে পড়ালেখার সুযোগ হয়েছিল মায়িশার। ক্যারিয়ার অন্যভাবে তৈরি করার সুযোগও এসেছিল। কিন্তু দেশে আসার পর মনে হলো চা নিয়ে কাজ করার। শখের বসে শুরু করলেও এখন মনে করছেন এখানেও ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
“আমরা নারী, আমরা সব পারি” নানুকে দেখে এটা আমি বুঝতে শিখেছি। আমার নানু মৌলভিবাজার জেলার প্রথম আইনজীবী ছিলেন। নানু সবসময় লক্ষ্যে স্থির থাকতেন, তাকে কখনও আমি হেরে যেতে দেখিনি” আবেগের সাথে উচ্চারণ করেন মায়িশা।
নারী হিসেবে নিলাম পরিচালনায় বেশি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের পর মায়িশা বলেন “আমাদের দেশে মেয়েরা সবক্ষেত্রে নিরাপদ না। ভিন্ন পেশাতে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়। তবে আমি এক্ষেত্রে ভাগ্যবান কারণ পজিটিভ সবকিছু পেয়েছি”।
প্রথম নিলামের সময়ও সবাই তাকে সহজভাবে গ্রহণ করেছে বলে জানান মায়িশা।
প্রথম নিলামের অভিজ্ঞতাকে ‘জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় অভিজ্ঞতা’ বলে বর্ণনা করে মায়িশা বলেন, আব্বু আমাকে একদিন বললো চা বিক্রি করবি? আমি বললাম দেখি পারি কিনা। সেই থেকে শুরু, সেই দিনটা ছিল ১৪ই মার্চ। বাবার সাথে বসে নিলাম পরিচালনা করা অন্য রকম এক আনন্দ। এত পজিটিভ রেসপন্স পেয়েছি, আমার কাজ করার উদ্যোম আরও বেড়ে গেছে। তবে শিক্ষানবিশ হিসেবে প্রতিনিয়ত বাবা, চাচাসহ পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য যারা চা শিল্পের সাথেই যুক্ত তাদের কাছ থেকে শিখছেন বলে জানান তিনি।
চায়ের গল্প শুনতে শুনতে বড় হওয়া মায়িশা রহমান এখন প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নিলামে বিক্রি করছেন চট্টগ্রাম, সিলেট আর পঞ্চগড়ের চা।চায়ের স্বাদ পরীক্ষা করে করে মানটা সঠিকভাবে নির্ণয় করাটা খুব চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন মায়িশা। একজন শিক্ষানবিশ ‘টি টেস্টার’ হিসেবে নিজের পরিবারসহ সহকর্মী ও সিনিয়রদের যথেষ্ট সমর্থন ও সহযোগিতা পাচ্ছেন উল্লেখ করে মায়িশা বলেন ‘আমি আসলে লাকি যে এরকম সাপোর্ট পাচ্ছি, শিখতে পারছি’।
মায়িশা বলেন, আমার বাবা আমাকে হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন। চায়ের ফিল্ড থেকে ফ্যাক্টরি পর্যন্ত আমার চাচা নানা বিষয়ে ধারণা দিচ্ছেন, শেখাচ্ছেন, যিনি এখন ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে আছেন। চায়ের ম্যানুফাকচারিং ও মার্কেটিংয়ের বিষয়ও শিখছি বাবার কাছ থেকে।
“যেমন চায়ের কোন লিকারটা কেমন হতে পারে, কোন লিকারটা ভালো বা কোনটা খারাপ, এটা নির্ণয় করাটা খুব কঠিন। এটা বেশি চ্যালেঞ্জিং এখনও আমার কাছে,” বলেন মায়িশা রহমান।
“যখন আমি নিলামে ডাক দেই, আমাকে নেগেটিভভাবে কেউ নেয়নি। নিলামের একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে, চা বিক্রির নির্ধারিত সময় দেয়া থাকে। আর নির্ধারিত সময়েই নির্ধারিত চা বিক্রি করতে হয়। নির্ধারিত সময়ে বিক্রি করতে না পারলে তা পরের নিলামে তোলা হয়”।
এ পেশায় কেন? জানতে চাইলে মায়িশা বলেন, “আমি চা পরিবারের মেয়ে। ছোট বেলা থেকে দাদা, বাবা চাচাকে দেখে আসছি। আমার দাদা প্রয়াত মোখলেসুর রহমান ১৯৫৬ সালে শ্রীমঙ্গলে নন্দরানী চা বাগানে ম্যানেজার ছিলেন। উনি পাকিস্তান আমলে বাঙ্গালি ম্যানেজারদের মধ্যে অন্যতম একজন। আমার বাবা এবং ছোট চাচাও চায়ের সঙ্গে যুক্ত”।
দাদা-বাবা-চাচাদের পথ ধরে চা শিল্পের সাথে যুক্ত হয়েছেন মায়িশা রহমান। বলা যায় চা-পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের সদস্য মায়িশা। যদিও চায়ের নিলামকারী হবার কোনও স্বপ্ন ছিল না মায়িশার, তবে এক ধরনের ভালোবাসা ছিল ‘চা আর চা-বাগানের প্রতি’। বলেন, ছোটবেলায় একেক সময় একেক স্বপ্নের কথা ভাবতাম। কিন্তু এখন শখের বশে চায়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজটাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
বলেন “ছোটবেলা থেকেতো দেখেই আসছি। আব্বু চা টেস্ট করতো নিলাম করতো, নিলামের আগে টেনশান দেখতাম। আব্বু মার্কেট রিপোর্ট রেডি করছে, চা টেস্ট করছে। নিলামের আগে আব্বু আর অন্যান্য ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে কাজ করতো তা দেখতাম। ওটা মনে হয় মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল”।
একজন নারী হিসেবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? জানতে চাইলে মায়িশা বলেন, একজন নারী হয়ে চা শিল্পের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পেরে আমি অনেক সৌভাগ্যবান মনে করি। অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে নিজেকে যুক্ত করার যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও আমি নিলামের কাজটিকে মন থেকে ভালবেসেছি। আর সেই সাথে পেয়েছি সকলের সহযোগিতা আর শুভ কামনা। কাজ করছি এবং ভবিষ্যতেও করে যাব। আশা করি আরো কাজ করার সুযোগ পাব এবং আরো অনেক কিছু শিখতে পারব।
একজন নারী উদ্যাক্তা হিসেবে অন্যান্য নারী উদ্যাক্তাদের উদ্যেশ্যে মায়িশা বলেন, আমাদের দেশে চা-শিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কম। তাই এই প্লাটফর্মে সকল নারীদেরকে আহ্বান জানাই। আশা করি আমার সাথে তারাও নিজেদের চলার পথকে আরো সমৃদ্ধ এবং প্রসারিত করবেন। এতে করে সৃষ্টি হবে নারীদের জন্য সুন্দর, সুস্থ ও কল্যাণময় পৃথিবী।
মৌলভীবাজারে বিশ্ব চিন্তা ও আর্ন্তজাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা
মৌলবীবাজার প্রতিনিধি
আর্ন্তজাতিক নারী দিবস ও বিশ্ব চিন্তা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ গার্ল গাইডস এসোসিয়েশন মৌলভীবাজারের উদ্যোগে ব্যাপক কর্মসুচি পালিন করেছে। বিশ্ব গার্ল গাইডস্ ও গার্ল স্কাউটস্ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা লর্ড বেডেন পাওয়েল ও বিশ্ব চিফ গাইড লেডি ওলেভ বেডেন পাওয়েল এর যুগ্ম জন্মদিবস উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব চিন্তা দিবস’ ও আন্তজাতিক নারী দিবস পালিত হয়।
শনিবার বাংলাদেশ গার্ল গাইডস্ অ্যাসোসিয়েশনের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ে বেলা ১১টায় এক আলোচনা সভা, কেককাটা, নাচ, গান কবিতা আবুত্তি সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় অ্যাসোসিয়েশন অনুষ্ঠানে জেলা থেকে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়,মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাদ্রসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে হলদে পাখি, বিঞ্জ পাখি গাইড, রেঞ্জার ও গাইডার মিলিয়ে দুই শতাধিক সদস্য এতে অংশগ্রহণ করেন। অ্যাসোসিয়েশনের জেলা কমিশনার বেগম নুরজাহান সুয়ারার সভাপতিত্বে এবং গাইডার তাহিয়া তাবাসুম ইসলাম’র পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন মাসুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পলিসি ফোরামের সভাপতি ও সাংবাদিক নজরুল ইসলাম মুহিব।
বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ গার্ল গাইডস্ অ্যাসোসিয়েশনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাধুরী মজুমদার। অনুষ্ঠানে বক্তারা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চালিকাশক্তি হিসেবে নারীর ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ জন্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান। তারা বলেন, দেশ ও জাতির টেকসই উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সমাজের নারীর সঠিক ভূমিকা পালন, মূল্যায়ন এবং প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সুযোগ-সুবিধা বিকাশের কোনও বিকল্প নেই।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত হয়েছে গণিত উৎসব ২০২৪। মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী এই গণিত উৎসবে অংশ গ্রহণ করে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ৯ মার্চ শনিবার সকাল ১১ ঘটিকায় উৎসবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা ড. মোঃ আব্দুস শহীদ এমপি। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশ বরেণ্য লেখক ও পদার্থবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উম্মে বিনতে সালাম এর সভাপতিত্বে ও ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অয়ন চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু তালেব।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্রগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার দেব, চট্রগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো ইফতেখার মনির, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, লোকসংস্কৃতি গবেষক ও প্রাবন্ধিক বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত সুমন কুমার দাশ, বাতিঘর প্রকাশনার প্রকাশক দীপংকর দাশ, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষণ রায়, পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অর্ধেন্দু কুমার দেব বেভুল।
আলোচনাসভা শেষে গণিত উৎসবে বিজয়ী ছাত্রছাত্রীদের মাঝে পদক ও সনদপত্র বিতরণ করেন অতিথিরা।