1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
৪২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০টি স্নাতক সনদ - মুক্তকথা
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৩ অপরাহ্ন

৪২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০টি স্নাতক সনদ

হারুনূর রশীদ
  • প্রকাশকাল : মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০২৪
  • ২৬০ পড়া হয়েছে

৪২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০টি স্নাতক সনদ

 

আজ এমন এক ক্ষণজন্মা মানুষের প্রসঙ্গ বলতে যাচ্ছি যাঁর পরিচয় দিতে গেলে সব বিশেষণই তার নামের আগে পিছে লাগিয়ে বলতে হবে। চিকিৎসাশাস্ত্র, রাজনীতি, বিজ্ঞান, গণিত, ভাষা, খেলাধূলা, চিত্রকলা, ফটোগ্রাফি, থিয়েটার এমনকি, IAS(আন্তর্জাতিক একাউন্টিং ষ্ট্যাণ্ডার্ড) অফিসার হিসেবেও নিজেকে প্রমাণিত করে গেছেন তিনি। জেনেরাখা ভাল, এই আন্তর্জাতিক ‘একাউন্টিং ষ্ট্যাণ্ডার্ড’- আইএএস-এর ৪১টি হিসাব বিষয়ক(অ্যাকাউন্টিং) মান রয়েছে।

অনেকটা অবিশ্বাস্য হলেও একেবারে খাঁটী সত্য যে তিনি ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০টি স্নাতক সনদ লাভ করেছেন অতি অল্প বয়সের মধ্যে। এই স্নাতক সনদ ছাড়াও তার আরো সনদ আছে। তিনি একজন ডাক্তার অর্থাৎ একজন পাশকরা এমবিবিএস। উকালতি তেমন করেননি তবে শুধু এলএল.বি. পাশই নন্ এর সাথে করেছেন আন্তর্জাতিক আইনের উপর স্নাতক। এরপর রয়েছে ব্যবসা ব্যবস্থাপনার উপর  প্রত্যয়ন পত্র (ডিপ্লোমা, সাথে এম.বি.এ(M.B.A)। 

তিনি পেশাদার হিসেবে সাংবাদিকতা করেননি, ছিলেন পেশাদার স্থিরচিত্র শিল্পী তবে সাংবাদিকতার উপর স্নাতক করতে ভুলেননি। এতো কিছু শুনে অনেকেই হয়তো হাঁফিয়ে উঠেছেন। মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী বলছিনে, এটি সত্য এবং খাতায় লিপিবদ্ধ সত্য। ভুল হবার বা মিথ্যা বলার কোন সুযোগ নেই। শিক্ষা পিয়াসী এ মানুষটি এখানেই থামেননি। তার আরও সনদ ছিল এবং আছে। তার স্নাতকোত্তর সনদই আছে মোট ১০টি বিষয়ের উপর। বিষয়গুলোর তালিকা এখানে লিখতে গিয়ে নিজের মনেই বার বার প্রশ্ন এসেছে এও কি সম্ভব! কিন্তু এ বিশ্বে আমাদের মত কিছু মানুষের কাছে যা অসম্ভব বলে মনে হয় তা-ই এ মানুষটি করেছেন অবলিলায়। বেঁচে থাকতে সারা জীবনই ব্যয় করেছেন শিক্ষা গ্রহনের উপর। বলা যায় শিক্ষাগ্রহন তার কাছে ছিল অনেকটা নেশার মত। সম্ভবতঃ লেখা-পড়া ছাড়া সময় কাটাতে তার ভাল লাগতো না। তার জীবদ্দশায় কেউ তার কোন সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন এমন কোন কিছু জানতে পারিনি। তবে “লিমকা বুক অফ রেকর্ডস” ও “উইকিপেডিয়া” খুব যত্নসহকারে তার বিষয়ে সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করে রেখেছে।

তিনি ছিলেন বিশ্বের সর্ব্বোচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি!

১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ‘মাষ্টার্স’ পাশ

৪২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০টি স্নাতক সনদ

ব্যক্তিগত সংগ্রহে ৫২০০০ বই রয়েছে তার।

১৯৮০ সালে বিধায়ক নির্বাচিত হলেন তখন তার বয়স মাত্র ২৫ বছর

 

তার পাওয়া সে সকল সনদ শুধু শুধু নামমাত্র কিছু সনদ ছিল না। তিনি বেশিরভাগ পরীক্ষায়ই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে সনদ পেয়েছিলেন। একের পর এক স্বর্ণপদকও জিতেছিলেন। তার স্নাতকোত্তর সনদের বিষয়গুলি কি কি ছিল তা’দেখে অবাক হতে হয়। অর্থনীতির উপর তিনি স্নাতকোত্তর সনদ নিয়েছিলেন, নিয়েছিলেন ইতিহাসের উপর, নিয়েছিলেন বিদেশী ভাষা ইংলিশের উপর; দর্শন শাস্ত্রের উপর, রাজনীতি বিজ্ঞানের উপর। আরো আছে- সনদ নিয়েছিলেন মনোবিজ্ঞানের উপর, সমাজবিজ্ঞনের উপর। সংস্কৃত সাহিত্যের উপর পেয়েছিলেন ডি.লিট অর্থাৎ ডক্টর অব লিটারেচার সনদ। প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রত্নবিদ্যার উপরও তিনি নিয়েছিলেন স্নাতক সনদ। জানপ্রশাসনের উপরও তিনি স্নাতক সনদ সম্পন্ন করেছিলেন। শিক্ষা গ্রহনের কোন দরজাই তিনি বাদ দেননি। পড়াশুনার মোটা দাগের অতীব প্রয়োজনীয় সকল দরজাই তিনি উন্মুক্ত করতে পেরেছিলেন তার জ্ঞান আহরণের অদম্য পিপাসা মিটাতে। চলমান এ বিশ্বে তা শুধু কল্পনাই করা যায় বাস্তবে এমন আর কেউ আছেন আমার জানা নেই।

মাত্র ২৫ বছর বয়সেই তার ১৪টি পোর্টফোলিও ছিল। আগেই বলেছি, লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে তাঁর নাম তালিকাভুক্ত হয়েছিল। লিমকা বুক অফ রেকর্ডস অনুযায়ী, ভারতের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তার এই অস্বাভাবিক কালজয়ী শিক্ষা সাধনা বা জ্ঞান সাধনার তথ্য জানতে গিয়ে যা জেনেছি তাতে আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে তার মত বিদ্যার এমন বাহাদূরীর উপমা কেবল তিনিই। এক জীবনে এত পড়াশোনা কোন রক্ত মাংসের মানুষ করতে পারে, না পড়লে বিশ্বাস হবে না।তাও আবার সে মানুষটি যদি হন ভারতীয়! তিনি শুধু ভারতের নয় সারা বিশ্বের সকলের উপরে থাকা সেরা একজন শিক্ষাসাধক তথা জ্ঞানসাধক; তার উপরে আর কেউ নেই। কোনকালে ছিল বলেও মনে হয় না।

সুধি পাঠক সাধারণ এতোক্ষনে অবশ্যই বুঝে গেছেন যে আমাদের এমন বিপুলভাবে চর্চ্চিত ওই মানুষটি ছিলেন একজন ভারতীয়। আজ তিনি আমাদের থেকে অনেক অনেক দূরের এক অজানা অদেখা লোকে চলে গিয়েছেন। যেখান থেকে কেউ আর ফিরে আসে না।

সৌখীন শিক্ষাপিপাসু ভারতের মারাঠি এই মানুষটির নাম শ্রীকান্ত্ জিচকার। অন্তর্জাল গবেষণা করে যতদূর জানতে পেরেছি তার জীবন শুরু হয়েছিল MBBS, M.D দিয়ে। উপরে যে ক’টি বিষয়ের কথা উল্লেখ আছে তার সব ক’টিতেই প্রথম শ্রেণীর সঙ্গে স্নাতকোত্তর, এবং ২৮টি স্বর্ণপদক বিজয়ী। সব মিলিয়ে ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রতি গ্রীষ্মে ও শীতে তিনি কোনো না কোন স্নাতকোত্তর বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে গেছেন।

 

ভারত বর্ষের শুধু নয় আমার মতে তিনি ছিলেন বিশ্বের সর্ব্বোচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি!

 

মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মত বিষয় হলো এতসব পড়তে পড়তে সম্ভবতঃ তার খুব একঘেয়েমি লাগছিল, অমনি ঠিক করলেন এবার একটু কাজে বদল আনা যাক! সাধারণতঃ আমাদের মত মানুষ স্বাদ বদলাতে একটু-আধটু বাইরে ঘুরতে যায়, আর এ মানুষটি বসলেন  “আই.পি.এস(IPS)” পরীক্ষায় দিতে। পাশও করলেন। সালটা ছিল ১৯৭৮। চাকুরী নিলেন। অবশেষে পোষালো না চাকরীটা। চাকরীটা ছেড়ে দিয়ে বসলেন “আই.এ.এস(IAS)” পরীক্ষায়। হলেন “আই.এ.এস(IAS)”। সালটি ছিল ১৯৮০।

গল্পের পরিভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়- অবশেষে নটে গাছটা তা’হলে মুড়োলো। না মহাশয়, তা’ঘটেনি তখনো। পরের চারমাসের মধ্যে “আই.এ.এস(IAS)” এর চাকরীটাও ছেড়ে দিলেন মহারাষ্ট্রের বিধান সভা ভোটে দাঁড়াবেন বলে। ১৯৮০ তে তিনি যখন বিধায়ক নির্বাচিত হলেন তখন তার বয়স সবেমাত্র ২৫ বছর। তিনি হলেন ভারতের সবচেয়ে কমবয়সী বিধায়ক। সবই হল যখন, তখন মন্ত্রী হওয়াটাই বা আর বাকী থাকে কেনো! সেটাও হলেন এবং একটা দুটো দপ্তরের নয়, একেবারে ১৪ টা দপ্তরের। ১৯৯২ সাল নাগাদ রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হলেন।

এতোসব শুনে চোখ সকলেরই ছানাবরা হয়ে যাচ্ছে। এখানেই শেষ নয় আরো আছে। ২৪ বছর বয়সে শ্রীকান্ত ভারতীয় পুলিশ সার্ভিস (আইপিএস) পরীক্ষায় বসে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। টানা দুবছর সেই পদে চাকরি করার পর তিনি ভারতের সবচেয়ে কঠিন সরকারি চাকরি ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস-এ বসেন। সেসময় ইউপিএসসি পরীক্ষা চালু হয়নি। তাই আইএএস এবং আইপিএস চাকরির জন্য আলাদা পরীক্ষা হত। যদিও সেই চাকরিও চার মাস গড়াতে না গড়াতেই তাও ছেড়ে দেন তিনি।

ক্ষণজন্মা এই মানুষটির ‘সামান্য’ কয়েকটি গুণ ছাড়াও তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ চিত্রশিল্পী, পেশাদার ফটোগ্রাফার, মঞ্চাভিনেতা, সখের বেতার চালক। জ্যোতিষশাস্ত্রেও ছিল তার বিশেষ পারদর্শীতা। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ও ইউনেস্কোতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

ব্যক্তিগত সংগ্রহে ৫২০০০ বই রয়েছে ওনার। ‘লিমকা বুক অফ রেকর্ডস’ ওনাকে “ভারতবর্ষের সবথেকে শিক্ষিত ব্যক্তি”র শিরোপা দিয়েছে।১৯৮৩ তে উনি ‘বিশ্বের অসামান্য দশজন তরুণ’ হিসেবে নির্বাচিত হন।

এমন একজন অপরাজেয় বিশেষ গুণান্বিত মানুষের বিষয়ে জানার আগ্রহ কার না থাকে। ১৯৫৪ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর নাগপুরে এক মারাঠা পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন ক্ষণজন্মা শ্রীকান্ত জিচকার। দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনার পর তিনি নাগপুরের এক চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় থেকে প্রথমে এমবিবিএস এবং পরে এমডি করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে সফলভাবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর শ্রীকান্ত আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর একে একে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্নাতকোত্তর সনদ নেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস, ইংরেজি, সাহিত্য, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ববিদ্যাতেও। ২ জুন ২০০৪ সালে তিনি ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সে এক গাড়ী দুর্ঘটনায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

 

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT