লন্ডন: শুক্রবার
৪ঠা নভেম্বর ২০১৬।।
মনেহয় মুক্তিযুদ্ধ যেন শেষ হয়নি।
যুদ্ধ চলছে সেই আগের মতই। তখনকার যুদ্ধে ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তি প্রত্যক্ষ শত্রু ছিল না। শত্রু ছিল তাদের পৃষ্ঠপোষক সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তির পুতুল পাক সামরিক পশুশক্তি। সুদীর্ঘদিনের দূর্বার আন্দোলন শেষে ক্ষনিকের অসহযোগ ছিল। তারপরই আমরা সরাসরি যুদ্ধে নেমে পড়ি। অবস্থা আমাদের বাধ্য করেছিল। পরিপূর্ণ প্রস্তুতির আগেই বাঁশ, লাঠিসোটা হাতে আমাদের যুদ্ধে নেমে পড়তে হয়েছিল।
আমরা হয়তো পারতাম দেশের ভেতরে থেকে সশস্ত্র যুদ্ধ চালাতে। হেমায়েত বাহিনী, কাদেরিয়া বাহিনী, দাস বাহিনী, মতিন-আলাউদ্দীনের বাহিনী, মুজিব বাহিনী প্রভৃতি আরো কিছু লোকজন কিন্তু দেশের ভেতরে থেকে সাহসের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধের ভেতর দিয়ে কয়েকটা বছর কাটালে হয় আমরা পুরোপুরি মৌলবাদী রাষ্ট্র হয়ে যেতাম নয়তো পুরোপুরি একটি সুন্দর সুস্টু উন্নত গণতান্ত্রিক ধর্মসাম্য রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারতাম। ভারতের সহায়তায় যুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাভূত করে যুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন সময়ে আমরা ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে আমাদের মাটি ছেড়ে যাবার ব্যবস্থা করার পর দেশ গঠনে “কোলাবরেটর এ্যাক্ট” রচনা করেই ক্লান্ত হয়ে পড়ি। যুদ্ধাপরাধি ধর্মান্ধগুষ্ঠী সেই যে যুদ্ধক্লান্ত বিজয়ীগোষ্ঠীর ঘরে-বাড়ীতে আশ্রয় পেয়ে পেয়ে পা পা করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছিল তার শেষ পরিণতি আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম ১৯৭৫এর ১৫ই আগষ্ট।
তার পর সুদীর্ঘকাল তারা দাপটে বেড়ে উঠেছে এ মাটিতে। তারই নমুনা ব্রাহ্মবাড়িয়ার নাসিরনগরের হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ। তারই নমুনা চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলে বৌদ্ধদের উপর আক্রমণ। তারই নমুনা, কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে সারা দেশব্যাপী সংঘটিত বিভিন্ন যৌণ নিপিড়নের ঘটনা।
সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি ইংরাজ আমেরিকার মদদে পুস্ট দেশীয় নব্য ধনিকদের সহায়তায় লগ্নি ব্যবসার লক্ষ্যে ১৯৪৭ এর ধর্মভিত্তিক অবাস্তব স্বপ্ন রাষ্ট্র পাকিস্তান-হিন্দুস্তানের প্রতিষ্ঠাই ছিল এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পঙ্গু করে রাখা। এ লক্ষ্যে তারা অঞ্চলের ধর্মান্ধতাকে পুঁজি হিসাবে দেখতে পায়। তাইতো বৈঠকি স্বাধীনতা ঘোষণার আগে-পিছে আমরা দেখতে পাই বিষময় সম্প্রদায়ীক দাঙ্গা। পাকিস্তান তখন বলেছে হিন্দুদের সাথে থাকায় আমাদের ধর্ম, বিশ্বাস, সংস্কৃতি সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মসজিদ ভেঙ্গে দেয়া হবে। কালে কালে পূর্বপাকিস্তান হিন্দুস্তান হয়ে যাবে। যদিও তাদের সবকিছুই মিথ্যা প্রচারণা ছিল প্রমানিত হয়েছে তবুও সেই পরম্পরা এখনও চলে আসছে। এখন শুধু বলছে না, যুদ্ধকালীন তাদের দোসররা সুযোগ বুঝে বুঝে সংখ্যালঘুদের উপর সরাসরি প্রকাশ্যে যুদ্ধধর্মী আক্রমণ পরিচালনা করছে। পুরোপুরি যেনো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলছে, এমনি অবস্থা। এ অবস্থায় আমরা কি রাজনীতির শুধু দোষ-গুণ বিচার করেই যাবো। নাকি সত্যিকারের প্রতিকারের পথ খুঁজবো।
আমার কেনো জানি মনে হয়, সুবিধাবাদী ধর্মান্ধ রাজনীতির ধারক বাহকেরা আমাদের দোদুল্যমানতার সুযোগে তাদের জান-প্রান দিয়ে এই বিষয়টিকে একটি রাজনৈতিক বিষয় হিসাবে তুলে ধরতে সক্ষম হচ্ছে। আর যদি তর্কের স্বার্থে ধরেই নেই এটি একটি রাজনৈতিক বিষয় তা’হলে অবশ্যই একে রাজনৈতিকভাবেই শক্তহাতে প্রতিরোধ করতে হবে। সবকিছুতেই একটি দলের প্রাধান্য থাকতেই হবে এমন ভাবনা এ অবস্থায় সঠিক নয়। মহাজোটের শরিক দলগুলিকে কিছু কিছু করে হলেও দেশ পরিচালনায় অংশ নেয়ার উদার সুযোগ দিতে হবে। যতটুকু দেয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় আরো দিতে হবে মৌলবাদী জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে।
এর সর্বপ্রধান প্রতিকার ধর্মীয় মৌলবাদী জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক জাতীয় ঐক্য গঠনে মহাজোটের মাধ্যমে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখা।
একই সাথে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্ক্ষলার মানুষের ব্যক্তি জীবনের বিবরণ যতই কুটিনাটি হোক নতুন করে দেখা। এদের কেউ কখনও কোন সময় ব্যক্তিগতভাবে বা পারিবারিকভাবে কিংবা কোনভাবে ধর্মান্ধ রাজনীতি বা সংস্কৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল কি-না?
সর্বোপরি, ধর্মের নামে দেশে কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালানোর উপর নিষিদ্ধ আরোপ করা এবং তা শক্তভাবে মোকাবেলা করা।