লন্ডন: বুধবার, ২১শে অগ্রহায়ণ ১৪২৩।। আজকের আমার দেখা ফেইচবুক। একজন শাওন খান জসিম তার ফেইচবুকে ATNBDNEWS.COM এর সূত্র দিয়ে পত্রস্ত করেছেন উপরের প্রথম “পোষ্ট”টি। এখানে স্পষ্টতঃই লেখা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়কে কেন্দ্র করে। প্রধানমন্ত্রীর সুন্দর একটি ছবি দিয়ে এ ‘সংবাদ’টি পত্রস্ত করা হয়েছে। নিচের সংবাদটি ATN BANGLA NEWS নামের একটি অনলাইনের। ওই একই খবর কিন্তু এটিএন নামের ভিন্ন একটি অনলাইনের।
এর নিচের খবরটি একজন আসাদ উজ্জামানের ফেইচবুক থেকে নেয়া। এগুলো কোন কোনটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন মানুষের ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া। আবার অনেকটি হলো বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সূত্রের বরাত দিয়ে লেখা।
হাজারো কথার এক কথা যা খুব সত্যনিষ্ঠ তা হল আমরা কেউ, কোথায়ও কোন মাধ্যমেই, প্রধানমন্ত্রী হাসিনার এ ধরনের কোন ঘোষণার কথা দেখতে বা শুনতে পাইনি! এটিএনবিডিনিউজ.কম এ খবরটি কোথা থেকে সংগ্রহ করলেন তা একমাত্র তারাই বলতে পারেন। তবে সাধারণ্যে প্রকাশ করার আগে তাদের কি উচিৎ ছিল না খবরটির সূত্র জানা এবং জানানো? নীতি কিংবা নৈতিকতা দেখার বিষয় এখানেই। একই কথা দ্বিতীয় ‘পোষ্ট’টির বিষয়েও।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর ফেইচবুকের এ যুগে কোন বক্তব্য বা মাধ্যম যে সঠিক, সত্য, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দিচ্ছে তা যেমন নির্ণয় করা অনেকের পক্ষেই কঠিণ, তেমনি ‘অনলাইন’ মাধ্যম আর ‘ফেইচবুক’এর এই অবাধ রাজত্বে লাগাম দেয়াও খুব সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে আমরা প্রতিটি মানুষের নৈতিক ও সামাজিক দায় ও দায়ীত্বের উপর আপাততঃ একে অন্যে ভরসা রাখা ছাড়া বিকল্প কিছু আমার জানা নেই। আর সেই অবস্থান থেকে বলতে চাই, নৈতিকতার ক্ষেত্রে আপোস নিজেরই পরাজয়ের আরেক নাম। আমার এ কথাটি হয়তো অনেকের কাছেই “অবশেষে অরিন্দম কহিলা বিষাদে…” এর মত একটু হাস্যকর মনে হতে পারে।
এ ধরনের ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া বা অভিমত কিংবা মতামত যে শব্দ দিয়ে বলি না কেনো, থাকতেই পারে একজন মানুষের। আর সে প্রতিক্রিয়া তিনি ব্যক্ত করতেই পারেন। তবে প্রতিটি মানুষের, ভুলে গেলে চলবে না যে এ নমুনার ব্যক্তিগত মতামত ব্যক্ত করার আগে তাদের অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিৎ যে তার সেই মতামত প্রচার হবার পরে মানুষের মাঝে কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এই খেয়াল রাখার বিষয় নতুন কিছু নয়। অতি আদিকাল থেকেই শিক্ষিত অশিক্ষিত, সচেতন কিংবা অসচেতন সকল মানুষই প্রকৃতি থেকে পাওয়া নিয়মেই এসব নীতি অনুসরন করে আসছে। অনুসরন করেন না এমন মানুষও আছেন। তাদেরকে, তাই সচেতন সমাজসহ সরকার নামক রাষ্ট্র পরিচালকদের নজরদারিতে রাখতে হয়।
রোহিঙ্গা বলে যে শিশুটির ছবি পত্রস্ত করা হয়েছে সে শিশুটি যে সত্যি একটি রোহিঙ্গা শিশু তা কি দিয়ে সত্যতা যাচাই করবেন? কোন সূত্র আছে? না, নেই! মৃত শিশুটির ছবি আসাদ উজ্জামান সাহেবের মানবিক মূল্যবোধে ভীষন আঘাত করেছে। তিনি খুব ক্ষেপে গিয়ে জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন মহলকে কড়াভাষায় গালি দিয়েছেন। এ ধরনের মৃত শিশুর সচিত্র সংবাদ কার না মনে বেদনার সৃষ্টি করে। কঠিন হায়না হৃদয় ছাড়া যেকোন মানুষই এ ছবি দেখে শান্ত থাকতে পারবে না। মনকে বিদ্রূহী করে তোলে। সুতরাং এ নমুনার কোন ছবি গণমাধ্যমে পত্রস্ত করার আগে যে কারো সূত্র ও সত্যতা একটু যাচাই করে নেয়া খুবই জরুরী। আসাদ উজ্জামান সাহেবের কি উচিৎ ছিল না তার সেই সূত্রটিও পত্রস্ত করার? তিনি করেননি। কেনো করেননি?