লন্ডন: শনিবার, ১৫ই পৌষ ১৪২৩।। ৩ হাজার বছরের পুরানো রাজধানী শহর, প্রাচীন বিশ্বের এক আশ্চর্য্য নিদর্শন। খৃষ্ট জন্মের ১২৯২ বছর কিংবা ১৫৫০ বছর আগের সেমেটিক জনগোষ্ঠীর ‘নবটিনস’ নামক দেশের রাজধানী পেট্রা। বর্তমান জর্দানে অবস্থিত। ভূগোল বিষয়ে বিজ্ঞ অনেকেরই মতে ‘পেট্রা’ প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে আশ্চর্য্যতম বিস্ময়। ১৮১২ খৃষ্টাব্দ অবদি ইহা পশ্চিমা বিশ্বের কাছে অনাকিস্কৃত ছিল।
পেট্রার পরিচিতি যত বড় তাকেও ছাড়িয়ে গেছে তার ভৌগলিক অবস্থান। রাজকোশের পোষ্টকার্ড ছবি, গির্জা, প্রবেশ মুখের গভীর গিরিখাতের পানির নালা, বিশ্বের এই অত্যাশ্চর্য্যকে নিজের দেশের ভেতরের মানুষজনেরই দেখার সুযোগ ছিল না। বাহিরের দুনিয়ায় তো আসতে দেয়নি সুদীর্ঘকাল। আতঙ্ককর উঁচু-নিচু কুণ্ডলীপাকানো পাথুরে পর্বতমালা, মাইলের পর মাইল ব্যাপী অসংখ্য সৌধাকৃতির ভূতাত্ত্বিক স্তম্ভ যা আজও আবিষ্কৃত হওয়ার বাকী রয়েছে যে শহরগুলি ওই সময় কি নমুনায় ছিল।
“পেট্রা” নগরীতে পায়ে হেটে ঢুকতে এখনও পুরো একঘন্টা সময় লাগে। যে কোন একজন নগরীতে ঢুকার প্রবেশমুখের গিরিখাতে ঢুকতেই চোখে পড়বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য উঁচু উঁচু পাথরের স্তম্ভ। এগুলোই বলে দেবে সামনে এগুলে সৌধসমৃদ্ধ “নবতিন” জনপদ দেখতে কেমন হবে। বিশাল চতুষ্কোন নমুনার বালিপাথরের পাহাড়, স্বচ্ছ খাড়া দুরারোহ পাথরকাটা ভাষ্কর্য্য আর অগাধ অতল কালো সৌধের সন্মুখভাগ দেখতে যেমন অবাক করা তেমনি ভীতিপ্রদও বটে।
খুব ঠিকঠাক হয়ে কষে কোমর বেঁধে গিরিখাতে প্রবেশ করতে গেলেই সামনে চোখে পড়বে সরু বড় পেছানো বিশাল বিশাল পাথরের ভেতরে ভীতিপ্রদ অলিগলি। কেউ উপর থেকে প্রবেশ করলে খুব ভদ্রভাবে ধীরে ধীরে ভয় ভয় মনে নিচে ঢালুর দিকে নামতে হবে। সরু অথচ ভীষণ গভীর গিরিখাতের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখা মিলবে পানির পাশ দিয়ে ভাষ্কর্য্যের নমুনায় সরু হাটা পথ। বিশাল পাথরের ভেতর পানির কোথায়ও ১ফুট পাশ অথচ পানির গভীরতা ২০০ফুট, প্রাচীণ পানি প্রবাহ পাথর পাহাড়ের সরু ভাঁজে ভাঁজে এগিয়ে গেছে। এসব পানির কোনটি ব্যবহার হতো কৃষিকাজে আবার অন্য নালার পানি ব্যবহার হতো মানুষ ও পশুর জন্য। খুবই দৃষ্টি নন্দন জলানুসন্ধান বিদ্যা নিসন্দেহে।
এতোসব পাড় হয়ে গেলে দেখা যাবে পেট্রা’র ভাষ্কর্য্য সমৃদ্ধ কারুকাজ- খোদাই করা কুলুঙ্গি, বসার জায়গা, পশুর জন্য পানির নালা এবং অতি সম্প্রতি আবিষ্কৃত স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বড় আকারের পদযোগলসহ মানুষের ভাষ্কর্য্য। দু’টি উট নিয়ে গিরিখাতের দিকে যাচ্ছে।
আরো অগ্রসর হলে দেখা যাবে গিরিখাতের অপর প্রান্তে একঝলক রাজকোশের ভাষ্কর্য্য। দেখে চোখ জুড়াবে। মন চলে যাবে হাজার হাজার বছর অনাদি অতীতে! শেষতো এখানে নয়। আশ্চর্য্যের সবে শুরু। যা দেখে আসা হয়েছে তার চেয়ে শতগুনে নান্দনিক সুন্দর আদলে কাটা গোলাপী রং এর রাজকোশ, সযত্নে সংরক্ষিত। উপরের দিকে তাকালে মনে হবে নিজের উপরেই পড়ে যাবে। বিশাল পাহাড়ের পাথর কাটা রাজকোশের প্রবেশ পথের ভেতরে বিশাল চতুষ্কোন প্রাঙ্গন সে অদ্ভুত এক দেখার জিনিষ। পাথর কাটা ছাদ গম্ভুজাকৃতির না হলেও ৫০’ x ৫০’ প্রশস্ত। এক সময় এই শহরে ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করতেন বলে দলিল পাওয়া গেছে। সবকিছু মিলিয়ে “পেট্রা” নগরী এক অব্যক্ত সৌন্দর্যের নাম।
(এটলাস অব্সকোরা থেকে অনুদিত, অনুবাদ-হারুনূর রশীদ)