লন্ডন: রোববার, ১৬ই পৌষ ১৪২৩।। গত শুক্রবার মায়ানমার সরকার বলেছে যে তারা তাদের ২,৪১৫জন নাগরীককে বাংলাদেশ থেকে ফেরৎ নেবে। হাস্যকর হলেও সত্য যে বাংলাদেশে মায়ানমারের ৩লাখ রোহিঙ্গা নাগরীক আশ্রয় নিয়ে আছে এবং বাংলাদেশ বলেছে তাদের নিজের দেশে অবশ্যই তাদের ফেরৎ যেতে হবে। এ খবর দিয়েছে রয়টারের বরাতে রেঙ্গুন ভিত্তিক ‘ষ্টার মিডিয়া গ্রুপের অনলাইন “দিষ্টার.কম” গত ৩০শে ডিসেম্বর।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর মায়ানমার সরকারের এ জাতীয় ব্যবহার বাংলাদেশ ও মায়ানমারের(ব্রহ্মদেশ বা বার্মা) মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বাংলাদেশ বলেছে গত বছর অক্টোবরে মায়ানমারের সামরিক বাহিনী সীমান্তবর্তী আরাকানে অভিযান চালালে ৫০হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
মায়ানমারের কথা, এই রোহিঙ্গারা অবৈধ অভিবাসী, এরা বাংলাদেশের নাগরীক সুতরাং এদের মায়ানমারের নাগরীকত্ব দেয়া যায় না। আবার বাংলাদেশের মত ভিন্ন। বাংলাদেশ বলছে, রোহিঙ্গারা মায়ানমারের নাগরীক এবং এদের অনেকেই গত এক দশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সামরিক অভিযানে পালিয়ে এখানে এসেছে সুতরাং এদের “রিফিউজি” হিসেবে গ্রহন করা যায় না। মায়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ‘ডাইরেক্টার জেনারেল’ কিও জায়া(Kyaw Zaya) রয়টারকে বলেন বাংলাদেশে মাত্র ২,৪১৫জন মায়ানমারের নাগরীক রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা সবসময়ই এই সংখ্যার কথা বলে আসছি। বাংলাদেশের দেয়া ৩লাখের বিষয় আমরা কিছুই জানিনা।” ২০১৭ সালে ওই ২,৪১৫জনকে বাংলাদেশ থেকে ফেরৎ আনার পরিকল্পনা রয়েছে মায়ানমার সরকারের। মায়ানমারের বুদ্ধ ধর্মাবলম্বী সরকার বলছে সীমান্ত হত্যাকান্ডের সাথে মূলত বাইরের ইসলামী সন্ত্রাসবাদী দল জড়িত আর ওই হত্যাকান্ডের কারণেই ওই এলাকায় সামরিক অভিযানের সূচনা। ওখানকার আবাসিকগন ও মানবাধিকার দলগুলি বলছে সপ্তাহব্যাপী সামরিক অভিযানের সময় বিস্তৃত এলাকা নিয়ে ব্যাপক অপকর্ম সংগঠিত হয়েছিল। মায়ানমার এই অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেছে যে এ অভিযোগগুলি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং পরিকল্পিতভাবে তৈরী করা। রাখাইন রাজ্য নিয়ে সমস্যা মায়ানমারের আভ্যন্তরীন একটি বিষয়।
বাংলাদেশ যখন বলছে ৫০ হাজার পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে তখন জাতিসংঘ তাদের এক হিসেবে বলেছে এ সংখ্যা ৩৪ হাজার। এই রাখাইন মারামারি নোবেল বিজয়ী অং সাং সু চি’র সরকারের জন্য একটি বড় আকারের সমস্যা মোকাবেলার বিষয় হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন যে নোবেল বিজয়ী সু কি ক্ষুদ্র এই মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অতি সামান্য কিছুও করতে পারেননি।
বাংলাদেশ, মায়ানমার সরকারকে বলেছে খুব দ্রুত মূল সমস্যা নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য। নাগরীক ফেরৎ নেয়ার বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও নমুনা নিয়ে মায়ানমারের সাথে আলোচনায় বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে। চলমান ওই উদ্বেগের সময় বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী অভিযোগ করেছে যে মায়ানমারের নৌবাহিনী চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশের মাছধরা নৌকার উপর গুলি করেছে। (দিষ্টার থেকে অনুদিত)