“দি ইকোনমিস্ট”এর চায়না প্রতিনিধি রুজি ব্লাউ বিগত ২১মে ২০১৫ তারিখের ইকোনমিস্টে লিখেছিলেন এই নিবন্ধটি। আজ ডিসেম্বর-জানুয়ারী ২০১৭ এর “দি ইকোনমিস্ট”এ আবার পেয়ে অনুবাদ করলাম সুধি পাঠকদের জন্য। নিবন্ধটি নিঃসন্দেহে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এবং দুনিয়ার ইতিহাস নতুন করে লিখার দাবী রাখে।
খোজা, ঝেং হি, একজন চীনা মুসলমান, সর্বপ্রথম চীন থেকে, ভারত মহাসাগর হয়ে পশ্চিমের দিকে তার ৭টি সফরের প্রথমটি শুরু করেন ১৪০৫ সালে। পরবর্তী ৩০ বছর চীনের মিং সম্রাটের আর্থিক পৃষ্টপোষকতায় দুনিয়ার সবচেয়ে বড় জাহাজের দলনেতা হিসেবে তিনি আফ্রিকার পূর্ব উপকূল ধরে গভীর পার্সীয়ান প্রণালী ব্যাপী সমুদ্র অভিযান পরিচালনা করেন। এ পর্যন্ত আমরা সবেই সত্য জানি।
কিন্তু কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন তিনি আরো অগ্রসর হয়েছিলেন এবং নিচে দেয়া সেই সময়ের এই মানচিত্রটিই এই দাবীর একটি কারণ। “একত্রিত বিশ্বের সাধারণ চিত্র” নামে এটি একটি সম্ভবতঃ ১৪১৮ সালে তৈরী মানচিত্রের ১৮শতাব্দীর অনুলিপি, যা দুনিয়ার মানুষকে দেখাতে চায় ‘ঝেং’ যা আবিষ্কার করেছিলেন। “দি ইকোনমিষ্ট” প্রশ্ন তুলে বলেছে- “এ যদি সত্য হয়, তা’হলে দুনিয়ার ইতিহাস নতুন করে লিখতে হবে। এ মানচিত্রই প্রমাণ দেয় যে ঝেং জলপথে সারা বিশ্ব প্রদক্ষিন করেছিলেন শুধু তাই নয়, কলম্বাসের অন্ততঃ ৭০ বছর আগে তিনি আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন বলে এই মানচিত্রই প্রমাণ করে।
এই মানচিত্রটি ২০০১ সালে প্রথম জনসমক্ষে আসে যখন সাংহাই এর একজন আইনজীবী ‘লিউ গেঙ্গ’ বলেন, তিনি প্রায় ৫০০ ডলার দিয়ে একজন স্থানীয় ব্যবসায়ীর কাছে থেকে ক্রয় করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, মানচিত্রটি প্রমাণ করে যে ঝেং পৃথিবীর উত্তর মেরু আর দক্ষিন মেরু উভয় দিকই ভ্রমণ করেছিলেন এবং একই সাথে এখনকার দিনের আমেরিকা, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা এবং অষ্ট্রেলিয়াও তিনি ভ্রমণ করেছিলেন। ২০০৩ সালে গেভিন মেঞ্জিস যে বই লেখেন, তার সেই বইয়ের প্রমাণ স্বরূপ এই মানচিত্রটি ব্যবহার করেন। তার বইয়ের নাম-“১৪২১: দি ইয়ার চায়না ডিসকভার দি ওয়ার্লড”।
মানচিত্রের এলাকাগুলি অর্থাৎ মহাদেশগুলি খুব সহজেই চেনা যায়। কিছু কিছু বিষয় চরিত্রগত ভাবেই চৈনিক: যেমন, নীল পাখার মত পানির ঢেউ এর অংকন চৈনিক মানচিত্রাঙ্কন পদ্বতির প্রচলিত ধারায় আঁকা। ঠিক একই ভাবে বিভিন্ন জায়গার নাম ভূমিকা পরিচিতিও একই চৈনিক কায়দায় আঁকা হয়েছে। মানচিত্রটির বিবরণ সন্তুসজনক। মানচিত্রে, ভূ-গোলার্ধের উভয় দিক একটি সমতল ক্ষেত্রে দেখানোর এ একটি প্রচলিত প্রথা। উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকার ভেতর দেশ থেকে প্রবাহিত, বিস্তৃত বিভিন্ন নদীনালার পরিচয় নির্দেশক বর্ণালী নকশা খুবই পরিষ্কার। নকশায় ভালভাবেই আমরা দেখতে পারি সুমেরু বা উত্তরমেরু দেশ। হিমালয় পর্বত গিরী যেখানের পাদদেশে ‘ঝেং হি’ জন্মেছিলেন, বিশ্বের উচ্চতম সেই পর্বতমালা স্পষ্টভাবে দেখা যায়।