হারুনূর রশীদ।।
লন্ডন: রোববার, ২৩ পৌষ ১৪২৩।।মুসলমানরা যখন বলেন ‘ফেরাউন বাদশা’ তখন মনে হয় ফেরাউন একটি নাম আর তিনি প্রাচীন মিশরের বাদশা ছিলেন। যে কোন মসজিদে বা ওয়াজ-নসিহতে সেই ছোটবেলা থেকেই এইভাবে শুনে আসছি। ফেরাউন বাদশাগন খুবই লম্পট, নিষ্ঠুর আর অত্যাচারী ছিলেন। বিশেষ করে বাংলাদেশে, এভাবেই মুসলিম জনগুষ্ঠীর কাছে প্রাচীন মিশরের ‘ফারাহ’দের তুলে ধরা হয়েছে শত শত হাজার বছর ধরে। বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে ‘ফেরাউন’ শব্দ উচ্চারণ করলে আর ব্যাখ্যা করতে হবে না। গায়ের সাধারণ মানুষই তার ব্যাখ্যা দিয়ে দেবে। এমনভাবেই কিছু আধাসত্য তথ্য আমাদের শিক্ষা দেয়া হয়েছে সেই আমাদের জন্ম লগ্ন থেকে। অবশ্যই এ নমুনার আধা-সত্য মিথ্যা প্রচারণার মূলে উদ্দেশ্য ছিল এবং আছে।
আর আজো এই একবিংশ শতাব্দিতে লন্ডনের মত শুদ্ধ সমৃদ্ধ শহরের কিছু কিছু এলাকায় এমনতরো অর্ধসত্য কাহিনী শুনিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে প্রতিটি পলে পলে।
অথচ পিড়ামিডের আধুনিক গবেষণায় মিশরের ‘ফারাহ’দের যেসব কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে এতে করে অতীতের ওই সব প্রচারণা যে ভ্রান্ত তথ্যে ভরপুর ছিল তা দিন দিন খোলাসা হচ্ছে। তেমনি এক ‘ফারাহ’ কাহিনী নিয়েই আজকের রচনা।
‘দ্বিতীয় নেকতানেবো’, প্রাপ্ত ইতিহাস বলে তিনি মিশরের সর্বশেষ বাদশা ছিলেন। তার পরেই রাজ্যপাট চলে আসে মহাবীর আলেকজান্ডারের উত্তরসূরী এবং পার্সিয়ানগনের হাতে। ইতিহাসখ্যাত ‘হিবিস’ মন্দির তার সময়েই সমাপ্ত হয় যদিও পিরামিড গবেষণার আধুনিক মিশরের ইতিহাস বলছে ‘ফারাহ’ ‘নেকতানেবো’ ছিলেন সবচেয়ে অখ্যাত ‘ফারাহ’ বা বাদশা। অথচ তার সময়ে সমাপ্ত এই ‘হিবিস মন্দির’ যা ছিল মিশরীয়দের প্রাচীন গৌরবোজ্জ্বল দিনের সভ্যতা ও পরিবর্তিত নব্য শাসকের মধ্যকার সেতুবন্ধন। সে এক রোমাঞ্চকর কাহিনী।
‘হিবিস’ মন্দির নির্মিত হয় খৃষ্টপূর্ব ৬ষ্ট শতকে। খারগা মরূদ্যানে এই ‘হিবিস’ মন্দিরই সবচেয়ে বড় আর খুবই সুরক্ষিত মন্দির। এ ছাড়াও এই মন্দির ক্ষেত্রটিই হল প্রাচীন মিশরীয় কর্তৃত্বের পরিবর্তনের চিহ্নস্বরূপ। প্রচন্ড ক্ষমতাশালী মিশরীয় বাদশাহী আর পারসিক রাজাদের সম্পর্কের বন্ধন ছিল এই ‘হিবিস’। মূলত ‘হিবিস’ একটি সৌধ মন্দির যা মিশর ইতিহাসের সর্বশেষ ৪ শাসক গুষ্ঠীর ইতিহাস তুলে ধরে।
মন্দিরটি বর্তমান খারগা নামক আধুনিক শহরে অবস্থিত। এই এলাকাটি সামরিক স্থাপনা অধ্যুষিত এবং উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে ভরপুর। মন্দিরটি নির্মিত হয় প্রাচীন মিশরের রাজা ও দেবতা ‘আমুন’, ‘মুত’ আর ‘খনশু’ কে উৎসর্গ করে। তার পর একসময় হিবিসের রাজা বলে খ্যাত ‘আমুন’ এর প্রতি বেশিকরে ঝুকে যায়।
এরপর, মিশরের প্রাচীন সভ্যতার গৌরবোজ্জ্বল দিনকে ফিরিয়ে আনার মৌণ ইচ্ছায় তার নিজের নামে অপর একটি মনোহর মন্দির নির্মান করেন। মিশরের সেই সোনালী দিন যখন মিশরীয়রা দেবতা ‘আমুন’, ‘রা’, ‘মুত’ ইত্যাদির উপসনা করতেন। ফলে, ওই ‘হিবিস’ মন্দিরের ভেতরে পাওয়া যায় দেবতা ‘অসিরিস’, ‘সেত’ ও ‘মুত’ এর নামে উৎসর্গীকৃত কয়েকটি কক্ষ।
যদিও এই মন্দির গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছিল ২৬ পুরুষের সময় কিন্তু শেষ হয় বাদশা ‘নেকতানেবু’র সময়। মন্দিরের দেয়ালের কারুকাজ শেষ হয় ‘দারিয়াস’এর সময় সেই ৫৫২ খৃষ্টপূর্বাব্দে। গবেষকদের মতে ‘নেকতানেবু-১’ ও ‘নেকতানেবু-২’ উভয়েই বিদ্যমান মন্দির বর্ধিত করেন।
যাই হোক দ্বিতীয় ‘নেকতানেবু’র সময়ই নীলনদের দেশ মিশরীয় বাদশাহদের সিংহাসনে অরোহন শেষ হয়ে যায় পরিবর্তে দরজা খোলে দেয়া হয় বিদেশী ‘ফারাহ’দের সিংহাসনে বসা সুযোগ করে দিয়ে।