হারুনূর রশীদ।। একজন ফাতিন নাসির গত শনিবার “কৌড়া ডাইজেষ্ট”-এ লিখেছেন যে তার ইতিহাসের প্রফেসর তাকে বলেছেন, “ইসলাম ধর্ম খৃষ্টান ধর্মের উপরে উঠে যাচ্ছে।” ফাতিন নাসিরের এ কথায় আমরা বুঝবো যে সবকিছু ইসলামের দখলে চলে আসবে, এমন কিছুই তিনি বলছেন। এই ফাতিন নাসির নিজের বিষয়ে নিজেই বলেছেন, তিনি বহু ধর্মীয় পুস্তক পড়েছেন এবং দেখেছেন যে, ইসলামই সর্বোৎকৃষ্ট। তার অভিজ্ঞতায় দেখেছেন বেশী বেশী করে খৃষ্টানগন ধর্ম কর্ম বাদ দিয়ে নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। আর যারা এখনও বিশেষ করে পশ্চিমা জগতে খৃষ্টান আছে, তারা শুধুমাত্র নামের খৃষ্টান। যেহেতু পশ্চিমা দুনিয়ায় খৃষ্ট ধর্মের একটি ভাল অবস্থান ছিল এবং সাংস্কৃতিকভাবে এখনও একটা গুরুত্ব তাৎপর্য বহন করে তাই তারা নামেই খৃষ্টান হয়ে আছে। তার মতে, এভাবে যদি দিন দিন খৃষ্টানগন নাস্তিক হতেই থাকে তা’হলে এক সময় দেখা যাবে খালি ওই স্থানগুলো ইসলামই দখল করে নিচ্ছে। ফলে অত্যন্ত যুক্তসংগতভাবেই খৃষ্টান ধর্মের স্থলে ইসলাম ধর্ম নেতৃত্ব দেবে। তার মতের পক্ষে তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়েব সাইটের ঠিকানা পেশ করেছেন। আমরাও ওই ঠিকানাগুলো এখানে তুলে দিলাম।
“উইফোরাম” বিবিসি “খৃষ্টানপোষ্ট”
‘পেট সন্তি’ নামে টেক্সাসের এক ছাত্র উপরের বক্তব্য পড়ে এক উত্তরে লিখেছেন- ইসলাম পৃথিবীতে খুব দ্রুত সম্প্রসারিত একটি ধর্ম সম্ভবতঃ কেবল মাত্র জন্মহার বৃদ্ধিগত কারণে। আমার মুসলিম বন্ধুরা হয়তো বলবেন, ইসলাম হুর হুর করে এগিয়ে যাচ্ছে ধর্মান্তরণের কারণে। কথা হচ্ছে আমাদের সামনে এধরনের কোন জরিপি পদ্বতি নেই যে দেখানো যাবে কতজন ইসলাম থেকে সরে যাচ্ছে। আর বুনিয়াদি ধর্ম ছেড়ে যারা ভিন্ন ধর্মে আসে তাদের উপর কোন অবস্থাতেই আস্তা রাখা যায় না। এসব মানুষ ধর্ম ত্যাগ করে বিশেষ বিশেষ কারণে। আর খৃষ্টান ধর্ম যত সহজে ছেড়ে আসা যায় ততটা সহজে ইসলাম ছেড়ে আসা যায় না। ইসলাম পরিত্যাগ অনেকটা বিপজ্জনক বা দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা। জন্মহারের উপর বিশ্বাস রাখা যায় না। কারণ এটি প্রতারণাপূর্ণ হতেই পারে। সাধারণ বিশ্বাস, ভক্তিময় ধর্মপালন অথবা ধর্মত্যাগ প্রশ্নে জন্মহারকে গণনায় নেয়া যায় না। উদাহরণ স্বরূপ সংস্কৃতিক কর্ম-কান্ডের ভেতর দিয়ে কেথলিক মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত থাকা ফ্রান্সে তাদের সংস্কৃতিরই একটি অংশ। একইভাবে “ইউ,এ,ই”তে থাকা আমার তথাকথিত মুসলমান বন্ধুদের বিষয়ে তাই বলা যায়। তারা সাংস্কৃতিক কর্ম-কান্ডের মধ্যদিয়েই মুসলমান কারণ ওখানে “এথিষ্ট” বলায় যথেষ্ট সামাজিক চাপ ও হুমকি রয়েছে। (টেক্সাসে আমার কাছের মসজিদ ও ইমামের সান্নিধ্যে গিয়ে আমি খুব গভীর থেকে এই বিষয়টি ভাল করেই বুঝতে পেরেছি যে ‘কোন ধর্ম তলিয়ে যাবে আর কোন ধর্ম ভেসে উঠবে’।)
ওই ‘পেট সন্তি’ আরও লিখছেন, আমার মতে, কোন ধর্ম অগ্রগামী তা বুঝার জন্য জন্মহার কিংবা ধর্মান্তরণ কোনটাই বিশ্বাস ও নির্ভরযোগ্য উপায় নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি বুঝি, দুনিয়াতে সবচেয়ে অগ্রগামী ধর্ম বা মতবাদ হচ্ছে ‘ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদ’ (খৃষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য যেকোন ধর্মের বলে চেনা যায় এমন চিহ্ন হিসাবে এখনও অবশিষ্ট যা আছে এসব ধরে)। মনেরাখা ভাল যে এখনও পৃথিবীতে সবচেয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পরীক্ষা নিরীক্ষাকরা ধর্ম বিশ্বাস হল খৃষ্টবাদ। যতদূর জানি এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার বাইরে রয়েছে ইসলাম। ধর্ম বিষয়ে চুলছেঁড়া বিশ্লেষণধর্মী লেখা-পড়ার জন্য অনুদান যতই বিশ্বময় সম্প্রসারিত ও প্রশিক্ষনকেন্দ্রিক হবে এবং ধর্ম থেকে সরে আসার কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অবসান হবে তখন ইসলাম ধর্মের অবস্থাও বর্তমান খৃষ্টান ধর্মের চেয়ে আরো অবনতিশীল হবে। শুধু তাই নয়, লেখা-পড়ার মাধ্যমে ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান অর্জন, সকল ধর্মের অবস্থা একই কাতারে নিয়ে তুলবে। এখানে আশ্চর্য্য হবার কোন কারণই নেই।
ধর্ম বিষয়ে পড়ার জন্য তিনি সুপারিশ করেছেন নিচের দু’টি বই: The Golden Bough by James G. Frazer. Also read, Varieties of Religious Experience by William James.
লন্ডন: বৃহস্পিতবার, ২৭শে পৌষ ১৪২৩