লন্ডন: বুধবার ৩রা ফাল্গুন ১৪২৩।। ন্যায় দন্ডের অধিকারি বিচারপতি আর তার বিচারালয় সাহসের সাথে সত্যের পথে থাকলে একটি জাতির ভাগ্য বদলে দিতে পারে। তেমনি এক প্রশংসনীয় আলোড়নসৃষ্টিকারি সংবাদ পরিবেশন করেছে ভারতের সংবাদপত্র ‘বর্তমান’। ‘আম্মা’র মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে প্রায় আড়াই মাস। আর এই কদিনেই তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে মুষলপর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। পনিরসেলভমই থাকবেন না অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসবেন তা নিয়ে দক্ষিণ ভারত তো বটেই, রাজধানীর রাজনীতিতেও আলোচনা তুঙ্গে। সেরকমই টানটান উত্তেজনার পরিবেশে আজ জয়ললিতা, শশীকলাসহ চারজনের অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পত্তি (ডি এ কেস) মামলায় রায় শোনাল সুপ্রিম কোর্ট। শুনানি শেষে আট মাস রায় রিজার্ভ রাখার পর এদিন রায়দান হল। কর্ণাটক হাইকোটের রায়কে খারিজ করে ট্রায়াল কোর্টের রায়কে হুবহু বজায় রাখা হচ্ছে বলে রায় পড়ে শোনালেন দুই মহামান্য বাঙালি বিচারপতি। বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ এবং বিচারপতি অমিতাভ রায়। যাঁদের ৫৭০ পাতার ঐতিহাসিক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আচমকাই তামিলনাড়ুর রাজনীতির গতিই বদলে গেল। আজ বেঁচে থাকলে এই রায় বর্তাত আম্মা জয়ললিতার উপরেও।
তাই এই দুই বাঙালি বিচারপতিকে নিয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মধ্যে চর্চা কম হল না। ২০১৩ সালের ৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হওয়ার আগে বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। আদতে কলকাতারই মানুষ পিনাকীচন্দ্র তার আগে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে কাজ করেছেন কমার্স নিয়ে পাশ করা সেন্ট জেভিয়ার্সের এই স্নাতক। বেলুড়মঠের রামকৃষ্ণ মিশন শিক্ষা মন্দিরের গভর্নিং বডির সভাপতির পদও অলংকৃত করেছেন তিনি। কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি শম্ভুচন্দ্র ঘোষ ছিলেন তাঁর পিতা।
অন্যদিকে, কলকাতায় জন্ম হলেও আদতে অসমের ডিব্রুগড়ের বাঙালি বিচারপতি অমিতাভ রায় ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হওয়ার আগে রাজস্থান এবং ওড়িশা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। আইনজ্ঞ পরিবারে বড় হওয়ার দরুণ ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যার স্নাতক হয়েও আইনেই উচ্চশিক্ষা করেন। গৌহাটি হাইকোর্টের বিচারপতিও হন অমিতাভ রায়। কলকাতা হাইকোর্টের বর্তমান বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত হলেন বিচারপতি অমিতাভ রায়ের শ্যালক। শীর্ষ আদালতে দুই বাঙালি বিচারপতির রায়ে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীপদ প্রত্যাশী শশীকলার এক দশকের ভবিষ্যতে শিলমোহর পড়ে গেল। আপাতত ১০ বছরের জন্য শশীকলার আর মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার বিন্দুমাত্র সুযোগ রইল না। রায়ের ফলে জয়ললিতার একসময়ের অত্যন্ত কাছের মানুষ ভি কে (বিবেকাননন্দ কৃষ্ণাবনি) শশীকলাকে চার বছরের জেল খাটতে হবে। একইসঙ্গে আর্থিক জরিমানা দিতে হবে ১০ কোটি টাকা। জরিমানা দিতে না পারলে তার জন্য আরও এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
কেবল শশীকলাই নয়। তাঁর বোনপো ভি এন সুধাকরণ এবং বৌদি জে ইলাভারসিকেও একই সাজা পোহাতে হবে। টিভি চ্যানেলের ব্যবসায়ী সুধাকরণকেই ‘পালিত’ পুত্র করেছিলেন তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এআইএডিএমকে সুপ্রিমো জয়ললিতা। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ে জয়ললিতার চার বছরের জেল এবং ১০০ কোটি টাকা আর্থিক জরিমানার কথাও শুনিয়েছে। জরিমানা দিতে পারলে আরও এক বছরের জেল। কিন্তু জয়ললিতা জীবিত নেই। গত ৫ ডিসেম্বর প্রয়াত হয়েছেন। তাই আজকের রায় আর তাঁর ওপর বর্তাল না।
ব্যয়ের অসঙ্গতি এবং সম্পত্তির হিসেব সংক্রান্ত ৬৬ কোটি ৬৫ লক্ষ ২০ হাজার ৩৯৫ টাকার দুর্নীতি মামলা শুরু হয়েছিল আজ থেকে ২১ বছর আগে। যেখানে ১৯৯৭ সালে জয়ললিতা, শশীকলা, ইলিয়াভারসি এবং সুধাকরণের বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়। কিন্তু তামিলনাড়ুতে এই মামলা চললে এআইডিএমকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে, তাই সুপ্রিম কোর্ট তা কর্ণাটকে সরিয়ে দেয়। শুরু হয় বিচারপর্ব। শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রায় দেন বিশেষ ট্রায়াল কোর্টের বিচারক জন মাইকেল কুনহা। (বর্তমান থেকে)