কথা কি ঠিক?
বিদ্যোতসাহী গবেষকগন জবাব দেবেন কি?
ঠিক হোক আর যাই হোক আমাদের দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম আর শেষমেষ যুদ্ধতো রবীন্দ্রনাথের চরিত্র বিচারের জন্য ছিল না। কে কি ছিলেন সেটা আমাদের কাছে বড় কথা ছিলনা এখনও নয়। আমাদের লক্ষ্য একটি সত্যিকারের আমূল অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তোলা। মানুষ সাম্প্রদায়িক হতেই পারে। সাম্প্রদায়িক হওয়াটা কোন অপরাধ বলে আমি মনে করি না। সাম্প্রদায়িকতাকে সামনে এনে দুষ্কৃতিপরায়নতা(সকল অর্থে) চরম অপরাধ।
কে কি ছিলেন কিংবা কি করেছিলেন তা দেখার আগে প্রয়োজন অসাম্প্রদায়িক সমাজ কাঠামোর মজবুত নির্মাণ। যা আমাদের এখনও হয়ে উঠেনি। মানুষ মানুষই, ভিন গ্রহের জীব নয়। ভুল ভ্রান্তি মানুষের হবেই। সেই ভুল দেখেই এ দেশের কয়েককোটি মানুষ অসাম্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছে।
রবীন্দ্র নাথেরও ভুল থাকতেই পারে। সর্বসাধারণের দৃষ্টিতে তার যে কাজকে আমাদের জন্য ভুল বলে ধরা পড়বে সেভুলগুলো বাদ দিয়ে রবীন্দ্রকে নিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো। বিগত ৪৪ বছরে আমাদের অনেক ভুলত্রুটি হয়েছে যার খেসারত গোটা জাতি মিলে এখনও দিয়ে যাচ্ছি। সলিমুল্লাহ সাহেবদের বলবো, মানুষের কল্যাণের লক্ষ্যে গবেষণাকে মানুষ গ্রহন করে। অকল্যাণ বয়ে আনে এমন গবেষণাকে অবশেষে মানুষের ইতিহাস স্থান দেয় না। সলিমুল্লাহ মহোদয়ের রবীন্দ্র নাথ সম্পর্কিত তথ্য বিহীন লেখা দিয়ে তিনি সাময়িক কিছু জঙ্গি চরম ডান বামের বাহবা পেতে পারেন, হয়তো অর্থের সংস্থান হতে পারে কিন্তু অবশ্যই তা ক্ষণিক সময়ের। এনিয়ে এখানে এক বস্তা কিতাব রচনা করা যায় কিন্তু মানুষের পড়ার সময় নেই। তাই যেটুকু না বললে হয়না সেটুকুই বললাম। আর নতুন করে আমরা অকাজের বিতর্ক নিয়ে সময় নষ্ট না করে আসুল মূল কাজের দিকে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
সলিমুল্লাহ:
বাংলাদেশে আবার সাম্প্রদায়িক সমস্যা দেখা দিয়াছে কেন বুঝিতে হইলে অতীতচর্বণ করিতেই হইবে। সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস ভারতে যেমন বাংলাদেশেও তেমন পুরানা জিনিসই।
প্রথমেই দেখা যাউক, ভারতবর্ষের ইতিহাসকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিভাবে দেখিয়াছেন। ইংরেজি বিশ শতকের গোড়ার দিকে লিখিতে বসিয়া ভারতবর্ষের ইতিহাসের অব্যবহিত আগেকার সাতশত বছরকে ঠাকুর ‘বিদেশি শাসন’ বলিয়া রায় দিয়াছেন। ব্রিটিশ মহাজনেরা ততদিনে প্রায় দেড়শত বছর এই উপমহাদেশ শাসন করিয়াছেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যখানে শুরু ধরিলে হিসাব তাহাই দাঁড়ায় বৈ কি! এর আগের সাড়ে পাঁচশত বছরের মুসলিম শাসনকেও রবীন্দ্রনাথ ‘বিদেশি শাসন’ বলিতেছেন। সমস্যার গোড়া এই জায়গায়। ভারতবর্ষ যে মুসলমানদের শাসনাধীন ছিল বিদেশাগত হইলেও তাহারা মনেপ্রাণে ভারতবর্ষীয় হইয়া গিয়াছিলেন। ব্রিটিশ শাসকশ্রেণী এই সত্য অস্বীকার করিতেন। ভারতে ব্রিটিশ প্রবর্তিত সাম্প্রদায়িকতার মূলে ছিল সরকারের এই নীতি।
সাম্প্রদায়িকতা শব্দটিও ঔপনিবেশিক শাসনের জের। প্রমাণস্বরূপ দুইটি কথা উল্লেখ করা যায়। এখন ভারতের ‘ইতিহাস ব্যবসায়ী’দের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের সংখ্যাই বেশি। তাঁহারা সাড়ে পাঁচশত বত্সরের মুসলিম শাসনকে বিদেশি শাসনই মনে করেন। সাম্প্রদায়িকতার গোড়া এই জায়গায়। আমাদের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা রবীন্দ্রনাথকে ছুঁইয়া কথা বলিবেন না। সত্যকে স্বীকার করিবেন না। ঘটনার মূলে যাইবেন না। তাঁহারা ভারতের ইতিহাস সাম্প্রদায়িকভাবে পড়িবেন ও লিখিবেন। সাম্প্রদায়িকতা জিইয়ে থাকার মূল কারণ এইখানেই পাওয়া যায়।
১৯৪৭ সালে আসিয়া ভারত দুই ভাগ হইল কেন? সবাই বলে, হিন্দু-মুসলমান দুই জাতি। তাই দুই আলাদা দেশ হইল। দ্বিজাতি তত্ত্বের মূল কথা এই। এই বাবদ মুহম্মদ আলী জিন্নাহকে বাহবা দিয়া থাকেন সকলেই। এখানে তাঁহার কৃতিত্ব কি? এ তো ষোল আনা রবীন্দ্রনাথ পথিকের কৃতিত্ব। হিন্দু-ব্রাহ্ম নির্বিশেষে ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু হইতেই (যখন মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা দেখা দেয় নাই, তখন হইতেই) তাঁহারা ভারতবর্ষ শুদ্ধ হিন্দুর দেশ বলিয়া কল্পনা শুরু করিলেন। পাঁড় হিন্দুর কথা না হয় বাদই দিলাম। ব্রাহ্মধর্মের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাজনারায়ণ বসু হইতে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত বেবাকেই প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষভাবে এটি করেছেন। ধর্মোন্মাদ হিন্দুর উত্তরসূরি আজ বিজেপি, বজরঙ্গ দল, শিবসেনা, বিশ্বহিন্দু পরিষদ।(অসমাপ্ত)