লন্ডন: প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ দুর্নীতি। বাংলাদেশের বাজেট ঘোষণার পর এ হলো বিশ্বব্যাংকের বাজেট প্রতিক্রিয়া! বিশ্বব্যাংক হিসাব দিয়ে বলেছে, ভারতে চার লেন সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে গড়ে খরচ হচ্ছে ১১ লাখ থেকে ১৩ লাখ ডলার। চীনে খরচ ১৩ থেকে ১৬ লাখ ডলার, ইউরোপে খরচ হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ লাখ ডলার। অথচ ঢাকা-মাওয়া চার লেন সড়কের খরচ হচ্ছে ১ কোটি ১৯ লাখ ডলার, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৭০ লাখ ডলার। রংপুর-হাটিকুমরুল সড়কে খরচ হচ্ছে প্রতি কিলোমিটারে ৬৬ লাখ ডলার। তুলনামূলক কম খরচ পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন সড়কে। সেটিও ইউরোপের খরচের সমান অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে ২৫ লাখ ডলার। এ সমূহ তথ্য বিশ্বব্যাংকের। আর খবর দিয়েছে ইত্তেফাক।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান ড. জাহিদ হোসেন, প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এমন তথ্য ও বক্তব্য উপস্থাপন করেন। গত মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরস্থ বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে আলোচনা কালে তিনি প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে এ বক্তব্য দেন। এসময় কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বক্তব্য দেন।
ভৌগলিক কারণ ও জমির দাম বৃদ্ধিতে প্রকল্প ব্যয় বেশি হওয়া স্বাভাবিক বলে ড. জাহিদ বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন যে বিশ্বব্যাংকের গবেষণা থেকেই পাওয়া যায় দুর্নীতির সূচকের সাথে প্রকল্প ব্যয়ের একটি সম্পর্ক রয়েছে। যেসব দেশে তুলনামূলক বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত সেসব দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হয় এবং ব্যয়ও বেশি। এজন্য ই-টেন্ডারিং এর উপর জোর দেন তিনি।
সময়মত প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে সময় বাড়িয়ে নিলে প্রকল্পের ব্যয় যে বাড়বে, সে যে দেশেই হোক না কেনো এ তত্ত্ব বা তথ্যের জন্য বিশ্বব্যাংকের গবেষণার প্রয়োজন হয় না। এগুলো আমাদের সাদা-মাটা মাথায় বুঝতে পারি। বাংলাদেশের সর্বত্র এ নমুনায় প্রকল্প বাস্তবায়ন হরহামেশাই হয়ে আসছে। প্রশ্ন হলো এসব টাকা মানুষের টাকা। বিদেশী ঋণ হলেও টাকাটা মানুষের ঘাড় থেকে উসুল করা হয়। অতএব সকল মানুষের জানার অধিকার রয়েছে কেনো সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়না? সে একলক্ষ টাকার প্রকল্প হোক কিংবা একশ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পই হোক। যে বা যারা এসব দায়ীত্বে থাকেন তাদের অক্ষমতার কারণে যে দেশের ও মানুষের বিপুল খেসারত দিতে হয় তারও তো হিসেব দিতে হবে! নয় কি?
ড. জাহিদ হোসেন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দুর্বলতাকে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লাগার কারণ নির্ণয় করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি আসল সমস্যাটিকে জেনে-শুনে এড়িয়ে গেলেন না-কি অন্যকিছু একমাত্র তিনিই ভাল জানেন। এই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কাহিনী এমন একটি বানানো কেচ্ছা যার অস্তিত্ব খুঁজলে আছে আবার না খুঁজলে নাই, এমন ধরনের। সমস্যা সময়মত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় না। এখানেই হাতড়িয়ে দেখতে হবে এরা কারা? একটি প্রকল্প সম্পন্নের নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে দেয়ার পর সেই সময়ের মধ্যে প্রকল্প শেষ না হলে কি এবং কে দায়ী তার খুঁজ অবশ্যই করতে হবে। আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে হয় এ টাকা কারো পকেটের টাকা নয় গোটা দেশের সকল মানুষের টাকা।