-নির্বাহী প্রকৌশলী
বিশেষ প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার।। কোন এক যুগে মানুষ নদীকে আশির্বাদ মনে করলেও এখন ভাবে শত্রু। তার কারণ হলো- নদী ভরাট হয়ে যাওয়া। পর্যটন জেলা, চায়ের রাজধানীখ্যাত ও দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি, কুশিয়ারা ও মনু নদী অধ্যুষিত, মৌলভীবাজার জেলা। এক সময় নদী পথে যাতায়াতসহ ব্যবসা-বানিজ্য ছিল এ জেলার। সে এখন পুরোনো দিনের কাহিনী। নদীর সাথে সংসার পেতে বাসকরে চলতে থাকা এ জেলায় ব্যবসায়িক কারণে সেই যুগে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার সাথে নৌ পথে যোগাযোগ হতো বেশি। এখন আর সেই যোগাযোগ নেই। যা আছে তা নজরে আসার মত নয়।
কুশিয়ারা, মনুসহ আরো অনেক নদী আজো বেঁচে আছে শুধু নেই তাদের যৌবন। ভরাট হয়ে যাওয়াতে মনুনদী দিয়ে একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে নৌ চলাচল। এককালে মলয় নামের এক মানুষ এখনকার মৌলভীবাজার শহর লগ্র মনু পাড়ে বসে সবজি বিক্রি করতো। সেই “মলয়” থেকে “মলইবাজার” ও পরবর্তীতে “মৌলভীবাজার” জন্ম নিয়ে সেই নাম যশঃ-খ্যাতী এখনো বিদ্যমান থাকলেও মনু নদী পাড়ে এখন আর কেউ সবজি নিয়ে বসে না। আধুনিক যুগে মানুষ দালান-স্থাপনার নীচে বসে ব্যবসা করছে। সেই সাথে সকল বর্জ্য ফেলে দিচ্ছে নদীতে। নদীর পানিকে পরিষ্কার রাখার কথা যেন সবাই ভুলে গেছে।
উনোবিংশ শতাব্দী বা তার আগের খবর আমাদের জানার সুযোগ হয়নি। তবে বিগত এক শতাব্দীতে বহু সরকার এসেছে গিয়েছে। কোন সরকার মনু-ধলাই কিংবা কুশিয়ারা খননের কোন প্রচেষ্টা চালায়নি। ফলে বিগত শতবছরে কত যে গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে তা বেহিসেব। নদীগুলো খনন না করাতে ভয়াবহরূপে ভরাট হয়ে গেছে। ভরা বন্যা এলেই কুশিয়ারা নদী ফুঁসে উঠে। এ সময় নদী পাড়ের ২৫/৩০ টি গ্রাম পুরো তলিয়ে যায়। পাশের ওয়াপদা বাঁধ ভেঙ্গে কাউয়াদীঘি হাওরে পানি ঢুকে কৃষি ক্ষেতে তান্ডব চালায়।
বন্যায় মনু নদী আরো ভয়াল রূপ নেয়। নদীর সিংহভাগ যায়গা ভরাট হয়ে যাওয়াতে নদীর প্রবল শ্রোতের শিকার হয় জেলা শহরের পশ্চিমবাজার, বড়হাটসহ আরো অনেক গ্রাম। নদী খনন করা না হলে প্রতি বন্যা মৌসুমে অন্ততঃ ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসছে যেভাবে তা একই ধারায় চলবে।
প্রতি বছরই শহরের মানুষ আতঙ্কে কাটায় পুরো বর্ষা মৌসুম। গেল বছর উজানের ঢলে মনুনদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গভীর রাতে মৌলভীবাজার শহরের মনুনদী বাঁধের বাড়ইকোনায় ভেঙ্গে এক ভয়াল রূপ নিয়ে বাসা বাড়িতে পানি ঢুকে। এছাড়াও বড়হাট, ধরকাপন ও মনুমুখ এলাকা প্লাবিত হয়ে সহস্রাধিক মানুষের গবাদি পশুসহ মূল্যবান মালামাল খুয়ে যায়। কুশিয়ারা নদী পাড়ের রাজনগর উপজেলার খেয়াঘাটবাজার-বাঁধবাজার সড়কের হলদিগুল এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে কাউয়াদীঘি হাওর জলমগ্ন হয়ে উত্তরভাগ ও ফতেপুর ইউনিয়নের মারাত্বক ক্ষয়ক্ষতি করে। সব মিলিয়ে গেল বছর ক্ষতির পরিমান হয়েছিল প্রায় ৬ কোটি টাকা। স্থানীয়রা বলছেন, নদী পুরোপুরি খনন করা হলে বন্যাক্রান্ত হবেনা জেলা শহর সহ পুরো জেলার মানুষ।
বাংলাদেশ কমিউস্টি পার্টির সাবেক কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মনু এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ আবু জাফর বলেন, মনু নদীর স্বল্পম্যাদী সমস্যার সমাধান হলো দুই পাড়ে বাঁধ মজবুত করে স্থাপন। স্থায়ী সমাধানের কথা উল্যেখ করে তিনি বলেন, নদীটি যদি উতসমুখ থেকে সাগর পর্যন্ত খনন করা হয় তবে বন্যা থেকে রক্ষা পাবে নদী পাড়ের মানুষ। তবে এগুলো অনেক ব্যয়বহুল।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ঃন বোডের নির্বাহি প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী শুক্রবার, ২২শে মার্চ বলেন, মনু নদী চড় অপসারনের জন্য কুলাউড়া ও রাজনগরে আমরা দুটি টেন্ডার করছি। নদীর বড় বড় চড় গুলো কেটে দেয়া হবে। খননের জন্য প্রায় ২৩ কোটি টাকার বরাদ্দ এসেছে। এ কাজে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন আছে।