মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবৈধভাবে ছড়া থেকে বালু উত্তোলন এবং কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার দায়ে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বুধবার(২৩ এপ্রিল) দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
এসময় উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের লাংলিয়া ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে এক ইজারাদারকে ১ লাখ এবং কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার দায়ে আরও এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এসময় অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু জব্দ করে ইজারাদার কর্তৃক মুচলেকা নেওয়া হয়।
উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের লাংলিয়া ছড়া বালু মহাল এর তফসিল বহির্ভূত মৌজা ও দাগ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ইজারাদার মখন মিয়াকে ‘বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০’ মোতাবেক মামলায় ১ লাখ টাকা এবং কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার দায়ে মো. আলম নামে এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আজকের অভিযানে মোট দেড় লাখ টাকা অর্থদণ্ড জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া হাইকোর্টের রায় না পাওয়া পর্যন্ত তফসিলের বাইরে লাংলিয়া ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করবেন না মর্মে ইজাদার মুচলেকা দিয়েছেন। একই সাথে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালুও জব্দ করা হয়েছে।
অবৈধ বালু উত্তোলন ও কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে। এ ধরণের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে বলেও জানিয়েছেন সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন(বিসিক) শিল্পনগরী শ্রীমঙ্গল এর প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার(২৪ এপ্রিল) বিকেলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ হল রুমে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন(বিসিক) এর চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব মো: সাইফুল ইসলাম।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিসিক এর উন্নয়ন সম্প্রসারণ বিভাগের পরিচালক(যুগ্ম সচিব) কাজী মাহবুবুর রশীদ, জেলা কার্যালয়ের উপ-মহা ব্যবস্থাপক গোলাম রব্বানী তালুকদার, উপ-ব্যবস্থাপক মাসুদ হোসেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভুমি) মোহাম্মদ ইউসুফ, বিসিক শ্রীমঙ্গলের কর্মকর্তা মো: মুনায়েম ওয়ায়েছ, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক বখসি ইকবাল আহমেদ, শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে বিসিক এর চেয়ারম্যান মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু শ্রীমঙ্গলে আমি ইতিপূর্বে ইউএনও হিসেবে দ্বায়িত্বে ছিলাম, সেহেতু শ্রীমঙ্গলের প্রতি আমার দূর্বলতা রয়েছে। আমি চাই শ্রীমঙ্গলে বেশী বেশী উদ্যোক্তা সৃষ্টি হোক। যারা বিসিক শিল্প নগরীতে প্লট বরাদ্দ নিয়ে উৎপানে যাবেন।
![]() |
তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন হয়। চায়ের পাশাপাশি আনারস, লেবু ইত্যাদি রয়েছে। যা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের পন্য সামগ্রী উৎপাদন করে ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ সম্ভব। পার্শ্ববর্তী উপজেলায় আগর রয়েছে, আগর সংগ্রহ করে উন্নত মানের আতর তৈরির জন্য একাধিক আধুনিক শিল্প কারখানা স্থাপন করে বহির্বিশ্বে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। শ্রীমঙ্গলের এই স্থাপনার সুযোগটি শ্রীমঙ্গলের মানুষরাই যদি বেশি করে কাজে লাগিয়ে বিভিন্নভাবে উপকৃত হতে পারেন তাহলেই আমি বেশি খুশি হবো।
ইতোমধ্যে যারা প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন বা নিবেন তারা জায়গাটি খালি ফেলে না রেখে যত দ্রুত সম্ভব অবকাঠামো নির্মাণ করে উৎপাদনে যেতে হবে। এর ফলে সবাই লাভবান হবেন। কর্মসংস্থান বাড়বে, এলাকার উন্নয়ন হবে, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।
চেয়ারম্যান বলেন, শ্রীমঙ্গলে বিসিকের দ্বায়িত্ব যারা রয়েছেন তাদেরকে ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তাদের সাথে আরো যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তাদের সাথে বার বার বসতে হবে। কি কি সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে, তার পরিস্কার ধারনা দিতে হবে। আমি তাদেরকে বলেছি, তারা সেই কাজটি দ্রুত করবে। বিসিক থেকে উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে অর্থায়ন করার ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথেও আমরা যোগাযোগ স্থাপনের কাজটি করে থাকি। মূলত, জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে বরাদ্দ দেয়া বা যে কোন পর্যায়ে বিসিকের ব্যবসা বা মুনাফা করার সুযোগ নেই। উদ্যোক্তাদের সেবা দেয়াই বিসিকের মূল কাজ।
তিনি আরও বলেন, এখানে কিছু দাবী উপস্থাপন করা হয়েছে। যেমন প্লটের মূল্য কমানো, আনুষাঙ্গিক কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। এখানে আমি বলবো, সবকিছু বিবেচনা করেই প্লটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। আমি চেষ্টা করবো নিয়মতান্ত্রিক ভাবে কিছু করা যায় কিনা। অন্যান্য বিষয়ে যা কিছু প্রয়োজন আমরা দ্রুত সম্পন্ন করবো।
তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে বিসিকের স্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, ক, খ ও গ এই তিন ক্যাটাগরির মোট ১২১টি প্লট রয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন উদ্যোক্তা মোট ৫৬টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। বাকী প্লট গুলি বরাদ্দের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। শিল্প নগরীতে সুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে, পর্যাপ্ত গ্যাস, বিদ্যুৎ, পুকুর, মসজিদ, সবুজ চত্ত্বর, ডাম্পিং ষ্টেশন, প্রশাসনিক ভবন ইত্যাদি।
২০ ভাগ মূল্য জামানত দিয়ে প্লট বরাদ্দ নিয়ে বাকী টাকা পুরুষদের ক্ষেত্রে ৬ বছরে ১২টি কিস্তি এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৭ বছরে ১৪ কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও উৎপাদনের জন্য স্বল্প সুদের ঋন গ্রহণের সুবিধা রয়েছে। সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ দেয়া হয়। উদ্যোক্তা, স্টাপ ও কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে।