মুক্তকথা: ২৫শে মে ২০১৬: ৮.০০
হারুনূর রশীদ: আজ দার্শনিক কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী। সকলেই আমরা জানি তিনি আমাদের জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত হয়েছিলেন এবং আজো আমাদের প্রাণের কবি, আমাদের জাতীয় কবি।
অবিভক্ত ভারতের বঙ্গের চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ সালের ২৫শে মে এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের জন্ম হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯শে আগষ্ট ৭৭ বছর বয়সে তিনি নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ অঙ্গনে দাফন করা হয়। ওখানেই তার কবর রয়েছে। ওখানেই তিনি সমাহিত থেকে তার প্রার্থীত আকুতি প্রতি ভোরে মোয়াজ্জিনের আযান শুনছেন।
জীবন সায়াহ্নে তিনি কলকাতায়ই ছিলেন। আমাদের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে আমাদের নব্য স্বাধীনতার শ্রেষ্ট পুরষ্কার স্বরূপ ভারত সরকার তাকে আমাদের কাছে দিয়ে দেয়। এর পর থেকে তিনি সমাধির আগ পর্যন্ত ঢাকায়ই ছিলেন।
তিনি ভারতের সর্বোচ্চ খেতাব পদ্মভূষণ ও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ খেতাব পদবী একুশে পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। ক্ষণজন্মা এই মানুষ একাধারে কবি, লিখক, সঙ্গীতজ্ঞ, বিদ্রুহী ও বিপ্লবী ছিলেন। তিনি বিশাল আকারে গণমানুষের বিপ্লবের কথা ও বিদ্রোহের কাহিনী কবিতায় ও সঙ্গীতে লিখে গেছেন যার কোন তুলনা নেই। তার চিন্তাকল্প কবিতা আর সঙ্গীত আজো সকল মানুষের প্রেরণার উতস। বাংলা ভাষায় উঁচু মানের তিনি অন্যতম কবি যিনি লেখনীর জন্য কারাভোগ করেছিলেন। তার লেখনীতে যেমন শোষণ নির্যাতন ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ছিল তেমনি সমানভাবে ধর্মের নামে দুষ্টমানুষ আর সমাজপতিদের শোষণ নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ মানুষের গর্জনও ছিল। তিনি যে কথা ও কর্মে আন্তরিক বিশ্বাসী মানুষ ছিলেন তার লিখা ও বাস্তবজীবন এর প্রমাণ। তিনি যা লিখতেন বাস্তবে তার জন্য কাজও করে গেছেন সমানতালে। তার রচনার সাথে বাস্তব জীবনের কোন হঠকারিতা ছিল না। শুধু তাই নয় তিনি ছিলেন সময়ের সবচেয়ে সাহসী লেখক। বর্তমান সময়ের কিছু কিছু কবি লেখকদের মত কবি সেজে আখের গোছানোর জন্য তার লেখা-লেখি ছিল না। তার লেখা ছিল বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা প্রসূত এক অজানা-অজ্ঞাত-অসীম জ্ঞানকুঞ্জ থেকে প্রাপ্ত অমীয় বাণী।
আমরা দেখি, তিনি তার কথা ও চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে গিয়ে রাজনীতিতেও অংশ নিচ্ছেন দ্বিধাহীন চিত্তে। মানুষ তাকে বিদ্রোহী খেতাব দিয়েছিল। প্রকৃতি, সমাজ ও মানুষের জীবনচর্চ্চার এক অকৃত্তিম বিচক্ষন দার্শনিক পর্যবেক্ষক ছিলেন তিনি। সকল মানুষকে আত্মার আত্মীয় করেনিয়ে ভালবাসা একমাত্র নজরুলই করতে পেরেছেন। তাই তো তার লেখা এতো ক্ষুরধার, এ যেন কবিতা নয় ঐশীবাণী হয়ে মানব মনে শ্বাশত শান্তির ছোঁয়া দিয়ে যায়। ডাক দিয়ে যায় দিন বদলের, আশ্বস্ত করে ন্যায় ও নিপীড়িতের পক্ষে নতুন জীবনের আবাহনে।
মুসলমান পরিবারে জন্মসূত্রে নজরুল যুববয়সে বাড়ীর পাশের মসজিদে মোয়াজ্জেনের দায়ীত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সাথে। আবার সাহিত্য, কবিতা, নাটক বুঝতে “লেটুর দল” নামক নাট্য দলেও কাজ করেছেন আন্তরিকভাবে। বৈচিত্রময় জীবনের অধিকারী নজরুল যৌবনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বৃটিশ রাজের হয়ে যুদ্ধে শরিক হয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যে। যুদ্ধ শেষে তিনি কলকাতায় একজন সাংবাদিক হিসাবে জীবন শুরু করেন। তখনই তিনি ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে খড়গ হস্তে লিখতে শুরু করেন।
তার ধূমকেতু পত্রিকা আর “বিদ্রোহী” কবিতা অসংখ্য কালোত্তীর্ণ লিখার মধ্যে দুই কালজয়ী সৃষ্টি। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার অসাধারণ ভূমিকা দূরাচার বৃটিশদের সাম্রাজ্যের ভিতকে কাঁপিয়ে দেয়। তিনি হাসতে হাসতে কারাবরণ করেন। উপমহাদেশের ইতিহাসে কোন লেখককে এমন ভূমিকায় আমরা পাইনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নজরুল লেখনি ছিল অমোঘ হাতিয়ার। নজরুল এখানেই একক এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন এক স্বত্ত্বা; যিনি সকল ভারতবাসীর কাছে পূজনীয়। …