মুক্তকথা ভাষ্যকার।। আলোচনার মাধ্যমে সকল পক্ষের যুক্তিসংগত চাওয়ার কিছু কিছু নিয়ে একটি ঐক্যমতে পৌঁছতে হবে। বৃটিশ গণতন্ত্রের এটিই সৌন্দর্য্য, এটিই মূল কথা। বিগত দেড়মাস আলাপ-আলোচনার পরও বৃটেনের দু’টি বৃহৎ রাজনৈতিক দল ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেনি। এ সমস্যার শুরু প্রায় ৩বছর আগে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরুনের দেয়া গণভোট থেকে।
প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরুন সুদীর্ঘ সময় থেকে চলে আসা গতানুগতিক রাজনীতিকে একটু জটিল নতুন আঙ্গিকে নিয়ে আসার জন্য ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার লক্ষ্যে গণভোট দিয়েছিলেন। গণভোটে সাধারণ মানুষের রায় ছিল ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসা। ক্যামেরুন চাইলে গণভোট না দিলেও পারতেন। কিন্তু তিনি কেনো এ গণভোটে গিয়েছিলেন তা কেবলমাত্র তিনিই ভাল জানেন। বিশ্লেষকগন বলেন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সাধারণ মানুষ ‘ব্রেক্সিট’এর পক্ষেই রায় দেবে। সেই গণভোটের পর থেকেই শুরু হয় ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে আসার প্রস্তুতি।
শ্রমিক দল সবসময়ই ইউনিয়নে থাকার পক্ষে ছিল কিন্তু সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছিল দলের ভেতরে ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষেও মত গঠন হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে দলে ছোট বড় হলেও দু’পক্ষ হয়ে উঠে। এ নিয়ে দলনেতা করবিনকে অনেক শক্ত অবস্থার মোকাবেলা করতে হয়েছে।
একই অবস্থা দাড়ায় রক্ষনশীল দলেও। সেখানেও সময়ের অবগাহনে দলের ভেতরে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে থাকার পক্ষে মত অঙ্কুরিত হতে থাকে। তৃতীয় পক্ষ লিবারেল ডেমোক্র্যাট। প্রথম থেকেই তারা ইউনিয়নে থাকার পক্ষে কাজ করে গিয়েছে এখনও করছে।
|
|
প্রথম থেকেই রক্ষনশীল দলনেতা প্রধানমন্ত্রী তেরেশা মে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার সন্ধিশর্ত রচনায় সময় নেন বেশী। এ সময়ের মধ্যেই সারা দেশে পক্ষে বিপক্ষে জনমত গঠন হতে থাকে। তেরেশা মে সংসদে তার প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তখন তিনি যদি অন্যান্য দলের সাথে কিছুটা হলেও আলাপ-আলোচনা করে তার প্রস্তাব সংসদে দিতেন, হয়তো কোন সমাধান আসতো। কিন্তু সম্পূর্ণ দলীয় কারনে তিনি তা করেননি। যখন বিরুধীদের সাথে শলাপরামর্শ করার মনোস্থির করলেন তখন সময় অনেক গড়িয়ে গেছে। সংসদে তিন তিনবার তার প্রস্তাবনা প্রত্যাখান হয়েছে। অবশেষে আলাপে বসলেন। দীর্ঘ প্রায় ৬সপ্তাহ আলাপ চললো। কিন্তু হাহোতস্মি! আলাপে বসে কোন পক্ষই নিজেদের তালগাছ ছেড়ে দিতে রাজী হতে পারেননি। কোন ধরনের ঐক্যমতে পৌঁছতে না পারার জন্য একে অপরকে দোষারূপ করলেন। করবিন এক লিখিত চিঠিতে তেরেশা মে’কে জানালেন যে সরকারের দূর্বলতা ও অস্থিতিশীলতাই এই ঐক্যমতে পৌঁছতে না পারার মূল কারণ।
কেনো তারা এক হতে পারেননি? দীর্ঘ সময়ের পর্যবেক্ষন ও সংবাদ মাধ্যম থেকে যতটুকু বুঝা যায়, আলোচনায় শ্রমিকদল বলেছিল ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সাথে একটি একক কাস্টমস ইউনিয়নে যোগ দেয়া যায় এবং সাধারণ মানুষ ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসতে চায় কি-না তা বুঝতে আরেকটি গণভোটের আয়োজন করা। রক্ষণশীল দলের অভিমত তার বিপরীতে। তাদের মতে একক কোন কাস্টমস নীতিতে ইউনিয়নে থাকলে বৃটেন নিজের সুবিধেমত চিন্তায় অন্য দেশগুলোর সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে না। আর আরেকটি গণভোট একেবারেই অযৌক্তিক ও অগণতান্ত্রিক।
এদিকে সরকার দলে নতুন একজন চৌকুস প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নের সুর উঠেছে। বর্তমান প্রধান মন্ত্রীও বলে দিয়েছেন এই সামনের জুন মাসে তিনি তার সর্বশেষ ব্রেক্সিট চুক্তি সংসদে পেশ করবেন এবং পাশ করানোর পক্ষে কাজ করে যাবেন। পাশ হোক আর না হোক এর পরেই তিনি প্রধান মন্ত্রীত্ব ছেড়ে তার দলে ফিরে যাবার দিনক্ষন ঠিক করে জানাবেন।
যদিও এসমূহ আলাপ-আলোচনা সময় ক্ষেপন ছাড়া দেশ ও মানুষের জন্য নবতর কিছুই নিয়ে আসতে পারেনি তার পরও এটিই বৃটিশ গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য! নিশ্চয়ই এসব প্রতিকূলতা মোকাবেলার ভেতর দিয়েই একটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসবে। যা বৃটেনকে তার ইতিহাস ঐতিহ্য সমুন্নত রেখেই ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে থাকার মঙ্গলময় পথ দেখিয়ে দেবে।
হারুনূর রশীদ
শনিবার ১৮ই মে ২০১৯