৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচন – মৌলভীবাজারে প্রার্থীদের প্রচারণা শুরু
আব্দুল ওয়াদুদ।।
মৌলভীবাজার: শনিবার
১৯শে কার্তিক ১৪২৩, ৫ই নভেম্বর ২০১৬
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি জোরেসোরে চলায় ও নির্বাচনের দিন তারিখ ঠিক হওয়ায় এখন আলোচনায় এসেছে জেলা পষিদ নির্বাচন। এই নির্বাচন প্রথমবারের মত হওয়ায় অনেকেই জানেননা জেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পর্কে। তবে না জানারই কথা। কেননা এর আগে স্থানীয় সরকারের অন্যতম এই জেলা পরিষদে ৪২ বছরেও কোন নির্বাচন হয়নি। চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন।
সংসদ অধিবেশনে পাস হওয়া ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল, ২০১৬’ অনুযায়ী, এবার থেকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবেন। এর আগে ১৯৮৮ সালে স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিল।
২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত হলে জেলা পরিষদ গঠনে নতুন আইন তৈরি করে। কিন্তু একদশকেও এ সম্পর্কিত বিধি-বিধান তৈরি না হওয়ায় ২০১১ সালের ১৫
ডিসেম্বর তিন পার্বত্য জেলা ও পরে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে ‘সিলেক্টেড’ প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। তাদের মেয়াদপূর্তিতে আগামী ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রতিটি জেলায় ১৫জন সাধারণ ও ৫জন সংরক্ষিত নারী সদস্য থাকবেন। আইন অনুযায়ী, জেলা পরিষদ নির্বাচনে ২৫ বছর বয়সী যেকোন ভোটার প্রার্থী হতে পারবেন, কিন্তু তিনি ভোট দিতে পারবেন না। ভোটাধিকার থাকবে কেবল জেলার অন্তর্ভূক্ত সিটি কর্পোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের। এ হিসেবে স্থানীয় সরকারের চার ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৭হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এ নির্বাচনে ভোট দেবেন। যেকোন ধরনের ঝুঁকি এড়াতেই নির্বাচন কমিশন প্রস্তাব করেছে এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সরাসরি নেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনেও জমা নেওয়া হবে। নভেম্বরের মধ্যেই তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়ে বিধি প্রণয়নের কাজ চলছে বলে জানা গেছে নির্বাচন কমিশনের
কাছ থেকে।
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, মৌলভীবাজারের ৬৭টি ইউনিয়ন, ৫টি পৌরসভা ও ৭টি উপজেলা মিলে ৯৪৩জন নির্বাচকমন্ডলীর সদস্য (ভোটার) রয়েছেন। পরিষদ চেয়ারম্যান ১জন, ১৫জন সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের ৫জন নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠন হবে। সব মিলিয়ে ২১টি পদের জন্য এখন পর্যন্ত এ জেলায় প্রায় অর্ধ-শতাধিক প্রার্থী মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নিজেদের প্রার্থীতার জানান দিয়ে এখন থেকেই তারা যে যার মতো কৌশলে ভোটারদের মন জয় করতে চালাচ্ছেন গণসংযোগ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছেন। চলছে ঘরোয়া বৈঠক। সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী স্বপদে বহাল থেকে কোন জনপ্রতিনিধি জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারবেন না। নির্বাচনের জন্য তাদের পদত্যাগ করতে হবে।
আসন্ন এই নির্বাচন হবে দেশের প্রথমবারের মত। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের ১৫টি ওয়ার্ডের চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণ ও নির্বাচকমন্ডলীর সদস্যদের তালিকা তৈরী করা হয়েছে। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো: কামরুল হাসান তালিকা তৈরী করে তা ১৬ আগস্ট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা পরিষদ আইন ২০০০, জেলা পরিষদ ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণ বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী এবং একই আইনের সংশোধিত ৫ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মৌলভীবাজারের নির্বাচকমন্ডলীর সদস্যদের তালিকা চূড়ান্ত করে ৫১৯ (৯৫) স্মারকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র মতে, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের নির্বাচকমন্ডলীর সদস্য ও সীমানা নির্ধারিত ওয়ার্ডের প্রাপ্ত তালিকা হলো:
১নং ওয়ার্ড: ১. উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ, বড়লেখা। এ ওয়ার্ডের নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ইউনিয়নে ৫২ জন ও পৌরসভায় ১৩ জন মিলে মোট ৬৫ জন।
২নং ওয়ার্ড: ১. দাসের বাজার ইউনিয়ন পরিষদ, বড়লেখা। এই ওয়ার্ডের নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ইউনিয়নে ৫২ জন ও চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ বড়লেখা ১ জন মিলে মোট ৫৩ জন।
৩নং ওয়ার্ড: ১. সুজানগর ইউনিয়ন পরিষদ, বড়লেখা। এই ওয়ার্ডের নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ইউনিয়নে ৫২ জন। মোট ৫২ জন। (১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী সদস্য ওয়ার্ড। নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ১৭০ জন)।
৪নং ওয়ার্ড: ১. জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদ, জুড়ী। এই ওয়ার্ডের নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ইউনিয়নে ৫২ জন ও চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ জুড়ী ১ জন মিলে মোট ৫৩ জন। ৫নং ওয়ার্ড: ১. ভূকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদ, কুলাউড়া। এ ওয়ার্ডের নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ইউনিয়নে ৬৫ জন ও চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ, কুলাউড়া ১ জন মিলে মোট ৬৬ জন।
৬নং ওয়ার্ড: ১. কুলাউড়া ইউনিয়ন পরিষদ, কুলাউড়া। এই ওয়ার্ডের নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ইউনিয়নে ৫২ জন ও পৌরসভায় ১৩ জন মিলে মোট ৬৫ জন। (৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী সদস্য ওয়ার্ড। নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ১৮৪ জন)।
৭নং ওয়ার্ড: ১. শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদ, কুলাউড়া। এ ওয়ার্ডের নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ইউনিয়নে ৬৫ জন। মোট ৬৫ জন।
৮নং ওয়ার্ড: ১. রাজনগর ইউনিয়ন পরিষদ, রাজনগর। এ ওয়ার্ডের নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ইউনিয়নে ৬৫ জন ও রাজনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ১ জন মিলে মোট ৬৬ জন।
৯নং ওয়ার্ড: ১. টেংরাবাজার ইউনিয়ন পরিষদ, রাজনগর। এই ওয়ার্ডের নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ইউনিয়নে ৬৫ জন। মোট ৬৫ জন। (৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী সদস্য ওয়ার্ড। নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ১৯৬ জন)।
১০নং ওয়ার্ড: ১. খলিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ, মৌলভীবাজার। এই ওয়ার্ডের নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ইউনিয়নে ৫২ জন ও পৌরসভায় ১৩ জন মিলে মোট ৬৫ জন।
১১নং ওয়ার্ড: ১. আপার কাগাবলা ইউনিয়ন পরিষদ, মৌলভীবাজার সদর। এই ওয়ার্ডের নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ইউনিয়নে ৬৫ জন ও চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ মৌলভীবাজার ১ জন মিলে মোট ৬৬ জন।
১২নং ওয়ার্ড: ১. কালাপুর ইউনিয়ন পরিষদ, শ্রীমঙ্গল। এ ওয়ার্ডের নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ইউনিয়নে ৫২ জন ও পৌরসভায় ১৩ জন মিলে মোট ৬৫ জন। (১০, ১১ ও ১২নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী সদস্য ওয়ার্ড। নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ১৯৬ জন)।
১৩নং ওয়ার্ড: ১. ভূনবীর ইউনিয়ন পরিষদ, শ্রীমঙ্গল। এই ওয়ার্ডের নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ইউনিয়নে ৬৫ জন ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ১ জন মিলে মোট ৬৬ জন।
১৪নং ওয়ার্ড: ১. কমলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ, কমলগঞ্জ। এই ওয়ার্ডের নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ইউনিয়নে ৫২ জন ও পৌরসভায় ১৩ জন মিলে মোট ৬৫ জন।
১৫নং ওয়ার্ড: রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ, কমলগঞ্জ। এ ওয়ার্ডের নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ইউনিয়নে ৬৫ জন ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ১ জন মিলে মোট ৬৬ জন। (১৩, ১৪ ও ১৫নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী সদস্য ওয়ার্ড। নির্বাচকমন্ডলীর সংখ্যা ১৯৭ জন)।
এদিকে সীমানা ও নির্বাচকমন্ডলীর সদস্য নির্ধারণের পর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্য (পুরুষ ও নারী) পদে প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। সময় যত বাড়ছে ততই বাড়ছে প্রার্থীদের সংখ্যা। দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন না হলেও বড় দুই দলের রাজনৈতিক প্রার্থী এ সব পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন বলে ধারণা স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকদের।