৪ঠা থেকে ২৭ নভেম্বর’২০২২ইং পর্যন্ত প্রায় মাস ব্যাপী চলছে ‘বাংলা নাটকের ঋতু’ যা আয়োজনকারীদের ভাষায় “A SEASON OF BANGLA DRAMA” নামে বাংগালী জীবনধারা নিয়ে বিভিন্ন আচারানুষ্ঠান। সারা যুক্তরাজ্যব্যাপী জীবনধর্মী চলমান সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ধারবাহিকতায় বিগত ১৮ বছর ধরে টাওয়ার হ্যামলেট্স এমন আয়োজন করে আসছে। এবারের আয়োজন তাদের উনবিংশতিতম(১৯তম) আয়োজন। আগামী বছর হবে বিংশতিতম আয়োজন।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের পাশাপাশি এই উৎসব আয়োজনকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো মোট ৪টি বৃহৎ সংগঠন।
প্রায় দু’যুগ ধরে প্রতি বছরই টাওয়ার হ্যামলেটস এমনধর্মী আয়োজন করে থাকে এবং প্রতি বছরই তাদের এমন আয়োজনের একটি “বিষয়বস্তু” ভিত্তিক নাম থাকে। যা এবার ছিল “Freedom of Speach” and “Self-Identity” (‘কথা বলার অধিকার’ ও ‘আত্ম পরিচয়’)।
টাওয়ার হ্যামলেট্স কাউন্সিলের মেয়র লুৎফুর রহমানের পাশাপাশি এবারের আয়োজনের আনুষ্ঠানিক দায়ীত্বে আছেন কাউন্সিল পরিচালনা পরিষদের ‘সংস্কৃতি ও বিনোদন’এর দায়ীত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলার ইকবাল হোসেন।
আজ ১৯ নভেম্বর শনিবার যথারীতি নিমন্ত্রিত হয়েই গেলাম একাঙ্কিকা নাটক ‘পিয়ার আলী’র ভাঙ্গামুখ’ দেখতে। নাটক খানার একক অভিনেতা হলেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কৃতিসন্তান তারেক চৌধুরী। তারেক চৌধুরীর একটি রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে। তিনি বাম প্রগতিশীল জাসদ ঘরানার মানুষ। বিশেষতঃ তারেক চৌধুরীর আমন্ত্রনেই অতিথি দর্শক হয়ে নাটক দেখতে যাই। নাটকের বাণী বা বক্তব্য খুবই সময়োপযোগী বিধায় কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যমিলনায়তনে লোকসমাগম ছিল ভাল। এমন কঠোর শীতেল সন্ধ্যায়ও মঞ্চগৃহ কানায় কানায় ভরে উঠেছিল দর্শকে দর্শকে।
একটি কাপড়ের বাক্স(সুটকেস) হাতে ‘পিয়ার আলী’র ভূমিকায় তারেক চৌধুরী মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন। মঞ্চের প্রক্ষেপন নিয়নবাতি জ্বলে উঠলো। নাটকের কাহিনীর শুরু, ১৯৭১সালে পিয়ার আলির বাবা কবি হায়দর আলী পাকি পশু বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হলে তার মা-ও পরে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। নিজের পরিচয়ের তাগিদে বাবার কবরের খুঁজে পিয়ার আলীর জীবন আবর্তিত হতে থাকে নানা পথে। অভিনয়ে সবলতা থাকলেও প্রান সঞ্চার করতে অভিনেতা তারেক চৌধুরী প্রানান্ত কসরত করেছেন। মঞ্চগৃহের অপরিপক্ক আলোক সঞ্চালন ও পর্দায় আলোকসম্পাতের দূর্বলতা তাকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে না দিলেও পুরো একাঙ্কিকা মুখস্ত রেখে সঠিক সময়ে সঠিক কথার উচ্চারণ ছিল তারেক চৌধুরীর বড় সফলতার দিক। এক ঘন্টার পুরো নাটকখানা মুখস্ত করে নেয়াকে সকলেই সাধুবাদ জানিয়েছেন।
নাটকের সমাপ্তিতে অভিনেতা রাজনীতিক তারেক চৌধুরী দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে গিয়ে সদ্য প্রয়াত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ-এর সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি প্রয়াত মিশফাক আহমদ চৌধুরী মিশু’এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১মিনিট নীরবতা পালন করার অনুরোধ জানালে উপস্থিত সুধি দর্শক ও কলাকূশলীবৃন্দ সকলেই দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনে অংশ গ্রহন করেন। পরিশেষে শিল্পী তারেক চৌধুরী তার অভিনিত নাটকখানাসহ পুরো আয়োজনকে মিশফাক চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করেন।