কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগ-সাজসে
অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের রমরমা ব্যবসা।
সরকারের লাখ লাখ টাকা গচ্চা
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় পল্লী বিদ্যুত অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগ-সাজসে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের রমরমা ব্যবসা চলছে। এছাড়া নিয়ম বহিভূর্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাঁশের খুঁটি দিয়ে তার টেনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ায় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির আশংকা করছেন অনেকে। এদিকে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান না চালিয়ে বকেয়া বিলে ও সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ অভিযান পরিচালনার উপর জোর দিচ্ছে।
উপজেলার কমলগঞ্জ-শমসেরনগর সড়কের পাশে আলীনগর চা বাগানের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মহসিন আলী রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছেন। সেখান থেকে প্রায় ৬/৭টি বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে তার টেনে নিয়ে মুরগীর ফার্ম চালু করেছেন। বাঁশের খুঁটি দিয়ে তার টেনে বিদ্যুৎ নেয়ার কারনে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়াও উপজেলার শমশেরনগর, আলীনগর, মাধবপুর, ভানুগাছ ও শমসেরনগর রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশের আবাসিক কোয়ার্টার (বাসা), মার্কেট, ভাসমান দোকান, ঝুঁপড়ি ঘর ও কলোনিসহ ছোট-বড় শতাধিক স্থাপনায় বিদ্যুতের প্রধান সঞ্চালন লাইন থেকে অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিটিতেই বাসা/বাড়ীতে রয়েছে লাইট, ফ্যান, ফ্রিজ, ইলেকট্রিক আয়রন ও পানি তোলার মোটর। চলছে হোটেলের ব্যবসাও। অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী কয়েকজন জানান, মাস শেষে বিল দেন ১ হাজার ৫শ টাকা।
আলীনগর চা বাগানের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মহসিন আলী বলেন, আমি রাস্তার পাশে ছোট একটি ঘর নির্মান করে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছি। সেখান থেকে আমার মোরগীর ফার্মে অফ লাইন সংযোগ দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছি। তিনি সঠিক নিয়মে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন বলে দাবী করেন।
অন্যদিকে নতুন মিটার সংযোগকারী কমলগঞ্জ পৌর এলাকার ফয়সল আহমদ নামে এক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, আমি কিছু দিন আগে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু এখনো আমার সংযোগ দেওয়া হয়নি। রোববার ডিজিএম সাহেবের রুমে প্রবেশ করে জানতে চাইলাম কখন আমার লাইন সংযোগ দেওয়া হবে, উত্তরে তিনি বলেন, অন্য একটা অফিসে সংযোগ করতে, তবে নতুন সংযোগ কবে দেওয়া হবে তিনি বলতে পারবেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সচেতন নাগরিক অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রত্যক্ষভাবে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের সাথে জড়িত। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না বলেই অবৈধ সংযোগ প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। এর ফলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা গচ্চা যাচ্ছে।
এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মো. সাদেক মিয়া জানান, আমরা অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হাতে নিয়েছি। তিনি বলেন, কোথায়ও অবৈধ সংযোগ থাকলে আমায় অবগত করার অনুরোধ রইলো।
অন্যদিকে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ও বিদ্যুৎ গ্রাহকদের একাধিক অভিযোগের বিষয়ে কমলগঞ্জ জোনাল অফিসে দায়িত্বে থাকা এজিএম মো. শহিদুল ইসলামের মোঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন কুমার ঘোষ বলেন, যারাই অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। চা বাগান এলাকায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে মোরগির ফার্ম করার বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধানক্ষেত থেকে লিটন মিয়া (২৭) নামে এক যুবককের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পশ্চিম নন্দগ্রামে মসজিদের পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহতের বাবা প্রতিপক্ষকে দায়ী করলেও কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে এ বিষয়ে পরিস্কার কিছু জানা যায়নি। নিহত লিটন পশ্চিম নন্দগ্রামের সত্তার মিয়ার ছেলে।
জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়রা মসজিদের পাশে লিটন মিয়ার জবাই করা লাশ দেখতে পান। পরে শমশেরনগর ফাঁড়ি পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলে তারা এসে লাশ উদ্ধার করে। স্থানীয়রা জানান, নিহত লিটনের সাথে এলাকার অনেক মানুষের সমস্যা আছে। তবে গত সোমবার রাতে তাকে এভাবে হত্যা করা ঠিক হয়নি।
নিহত লিটনের বাবা সত্তার মিয়া জানান, পূর্ববিরোধের জের ধরে শামীমসহ এলাকার প্রতিপক্ষের লোকজন পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে গলাকেটে হত্যা করেছে।
এ বিষয়ে পতনঊষার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ঘটনাটি শুনে সরেজমিনে এসে দেখেছি। লাশ উদ্ধার করা হচ্ছে। হত্যার বিষয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। আশাকরি প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হবে।
এ বিষয়ে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ওবায়দুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। তবে কি কারণে হত্যা করা হয়েছে এ বিষয় জানা যায়নি। নিহতের পরিবার থানায় এখনও কোন অভিযোগ দায়ের করেনি। তদন্ত চলছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর এলাকায় একটি ট্রাকভর্তি ময়দা আত্মসাৎ চেষ্টার ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় আত্মসাৎ হওয়া ময়দার ৪০০ ব্যাগ ও ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সিলেট জেলার জালালাবাদ থানার চানপুর গ্রামের আক্তার আলী (৪৩) এবং কুলাউড়া উপজেলার কাউকাপন গ্রামের রেজুয়ান হোসেন মান্না (২৫)।
থানা সুত্রে জানা যায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রো-ট ১২-৩৪২৬ নম্বরের একটি ট্রাক নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জস্থ শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ থেকে ৪০০ ব্যাগ (২০,০০০ কেজি) পুষ্টি ময়দা নিয়ে সিলেটের কালিঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু ট্রাক চালক তার সহযোগীদের সাথে নিয়ে এই ৪০০ বস্তা ময়দা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তারা গন্তব্য সিলেট না গিয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা ১৫ মিনিটে কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর বাগান রোডের কাজী বেকারীতে ময়দার বস্তাগুলো আনলোড করে।
শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক ওবায়দুর রহমান জানান, গাড়ির চালক ও তার সহযোগীরা বস্তাগুলো আনলোড করে বেকারি মালিকের কাছে টাকা চায়। বেকারি মালিক চালান ছাড়া টাকা পরিশোধ করতে রাজি না হওয়ায় ট্রাক ড্রাইভার জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে তাদেরকে আটকিয়ে মারধর করছে মর্মে মিথ্যা অভিযোগ জানায়। ৯৯৯ এ কল এর প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারে।
পরবর্তীতে শমসেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির টিম কুলাউড়া থানা পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে কটারকোনা এলাকা থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করে।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জাফর মোঃ মাহফুজুল কবির জানান, আটক আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মালামাল আত্মসাৎ করে বিক্রির উদ্দেশ্যে আনলোড করার বিষয়টি স্বীকার করেছে। উদ্ধারকৃত ময়দার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
![]() |
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বাংলাদেশ ভুঁইয়া সমাজ উন্নয়ন পরিষদ আয়োজিত মনু-ধলই ভ্যালির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়েছে। রোববার দুপুরে পদ্মছড়া চা বাগানে মনু-ধলই ভ্যালি ভূঁইয়া সমাজ আয়োজিত আলোচনা সভা শেষে কমিটি গঠিত হয়েছে।
পদ্মছড়া চা বাগানের রতন ভূঁইয়া মাহাত্ব এর সভাপতিত্বে এবং মিলন ভূঁইয়া ও কানাই ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ভূঁইয়া সমাজ উন্নয়ন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অনিরুদ ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি দিবস ভূঁইয়া, জুড়ি ভ্যালি ভূঁইয়া সমাজের সভাপতি অনুরোধ ভূঁইয়া কাপনা পাহাড়, কমলগঞ্জের মনুÑধলই ভ্যালি কমিটির সভাপতি কমলা শংকর ভূঁইয়া।
আলোচনা সভা শেষে কমলা সংকর ভূঁইয়াকে সভাপতি, বাসুদেব ভূঁইয়াকে সহসভাপতি ও সুভাষ ভূঁইয়াকে সম্পাদক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট ভূঁইয়া সমাজ উন্নয়ন পরিষদ মনু-ধলই ভ্যালি কমিটি গঠন করা হয়।
এ সময় সভায় বক্তারা বলেন, মাদক ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে হলে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সেই লক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ ভূঁইয়া সমাজ উন্নয়ন পরিষদ।
উল্লেখ্য, ভূঁইয়া সমাজ উন্নয়ন পরিষদ হলো একটি বাঙালি সম্প্রদায় ভিত্তিক সংগঠন। যারা বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার চা বাগানগুলোতে বসবাসকারী ভূঁইয়া সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন এবং তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করে। এই সংগঠনটি ভূঁইয়া সম্প্রদায়ের শিক্ষা, খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সহ সমাজে তাদের অবস্থান ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে।