১৯৬০ সালে, ঢাকার স্টুডিওতে; Image Source: inner gaze ক্যাটালগ
কর্মসূত্রে তার বাবা সৈয়দ আহমেদ কর্মরত ছিলেন সুন্দরবন অঞ্চলে। তবে পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামের আসকারদিঘির উত্তর পাড়। পরবর্তীতে তার বাবা চাকরিসূত্রে কিছুকাল কলকাতায় অবস্থার করায় নভেরার শৈশব কেটেছে কলকাতার বউবাজার শহর। লরেটা স্কুল থেকে তিনি মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তারা কুমিল্লায় চলে আসেন এবং নভেরা কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াশোনা করেন। পিতার চাকরীতে অবসরগ্রহণের পর তারা ফিরে আসেন পৈতৃক নিবাস, চট্টগ্রামের আসকারদীঘির পাড়ে। ছোটবেলায় নভেরাকে সবাই ডাকতো ‘রাণী’ বলে, আর তার ‘নভেরা’ নামটি রেখেছিলেন তার চাচা… ফারসি শব্দ ‘নভেরা’র অর্থ ‘নবাগত’ বা ‘নতুন জন্ম’। নভেরা সত্যিই নতুন জন্ম হয়ে এসেছিলেন এ দেশের ভাস্কর্যশিল্পে, বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ভাস্কর। শিল্পী হিসেবে নভেরা আহমেদের আত্মপ্রকাশের পর দেখা যায় যে, সমকালীন পুরুষশিল্পীদের মধ্যে তিনিই একমাত্র নারী শিল্পী; আর সবাই যেখানে চিত্রকর, সেখানে তিনিই কেবল ভাস্কর। নভেরা যে ছবি আঁকেননি, তা নয়…তবে ভাস্কর হিসেবেই নভেরা পরিচিত বেশি। তার চিত্রকর সত্ত্বার চাইতে ভাস্করসত্ত্বাই ছিল অধিক স্বতস্ফূর্ত। নভেরাদের কলকাতার বাড়িতে সঙ্গীতচর্চা চালু ছিলো, তার বড় দুই বোনকে রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের গান শেখাতেন সেসময়ের স্বনামধন্য দুই তরুণ শিল্পী। তবে নভেরার আগ্রহ ছিল মূলত নৃত্যে, তার নৃত্যের হাতেখড়ি হয়েছিলো ভারতের বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী সাধনা বসুর কাছে। মায়ের গড়া পুতুল ও পুতুলের ঘর দেখেই হয়তো শখ জেগেছিল নিজে গড়ার, আগ্রহ জন্মেছিলো ত্রিমাত্রিক গড়নের প্রতি…কে জানে! নাচ আর গানের সাথে ছোটবেলায় মাটি দিয়ে মূর্তিও গড়তেন নভেরা তার চিত্রকর সত্ত্বার চাইতে ভাস্করসত্ত্বাই ছিল অধিক স্বতস্ফূর্ত। তাই যখন ১৯৫০ সালে তাকে লন্ডনে পাঠানো হয় আইনশিক্ষার জন্য, তখন তিনি তার ভাস্কর্যশিল্পের প্রতি প্রেম থেকে যাওয়া শুরু করেন ‘সিটি এন্ড গিল্ডস্টোন কার্ভিং ক্লাস’ এ। একই বছরে রোঁদ্যার মিউজিয়াম দেখতে যান তিনি, প্রখ্যাত ফরাসি ভাস্কর অগাস্টিন রোঁদ্যার বেশ অনুরাগী ছিলেন নভেরা। এরপর ১৯৫১ সালে নভেরা ভর্তি হন লন্ডনের ‘ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অফ আর্টস এন্ড ক্রাফটস’ এর ‘ন্যাশনাল ডিপ্লোমা ইন ডিজাইন’ এর ‘মডেলিং ও স্কাল্পচার’ কোর্সে। চেক ভাস্কর ড. কারেল ফোগেলের আওতায় সেখানে ১৯৫১ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত চার বছর মেয়াদী ন্যাশনাল ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন নভেরা। এছাড়া ১৯৫৪ সালের জানুয়ারী মাসে নভেরা ভাস্কর্যের নগরী ও ইউরোপীয় রেঁনেসার সূতিকাগার ফ্লোরেন্সে যান ও সেখানে পাঁচমাস অবস্থান করেন, এবং এর মধ্যে দুই অথবা আড়াই মাস তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ভাস্কর ভেন্তুরিনো ভেন্তুরির কাছে। নভেরার মন ছিল প্রচন্ড ভ্রমণপিয়াসু আর শেখার আকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ। বিশ্ববিশ্রুত ভাস্কর জ্যাকব এপস্টাইনের স্টুডিওতেও কিছুদিন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নভেরা।
|