-চা বিশেষজ্ঞ
খরা’র দ্বিতীয় ধাপ(Second drought) বা দ্বিতীয় ধাপের খরা’র কবলে পড়েছে দেশের চা শিল্প। প্রচন্ড তাপদাহের ফলে শ্লথ গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে চা গাছের কুঁড়ি। এর ফলে উৎপাদনের গতিও নেমে গেছে। তবে এতে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন চা বিশেষজ্ঞরা। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘খরা’র দ্বিতীয় ধাপ(Second drought) আসে প্রাকৃতিক নিয়মে। প্রতি চার থেকে পাঁচ বছর অন্তর অন্তর এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে এই ‘দ্বিতীয় খরা’ প্রবাহিত হয়। খরার প্রভাবে চা গাছের কুঁড়ি বাঞ্জি হতেও দেখা যায়।
তবে, চায়ের মৌসুম মাত্র শুরু, ভরা মৌসুম সামনে। যথা নিয়মেই মে মাসের শুরু থেকে কাংখিত বৃষ্টিপাতে চা উৎপাদনে গতি ফিরে আসবে। ফলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা ১০২ মিলিয়ন কেজি অর্জিত হবে বলে আশাবাদ চা সংশ্লিষ্টদের।
চায়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা উত্তম। তবে সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রী পর্যন্ত চা গাছ তাপ সহ্য করতে পারে। এর উপরে গেলেই খরার কবলে পড়বে চা। কুঁড়িতে দেখা দিবে বাঞ্জি দশা। তবে চা বাগানে প্রতি ২০ ফিট অন্তর ছায়া তরু বা সেড ট্রি’র কারণে ৩৫/৩৬ ডিগ্রী পর্যন্ত সহনীয় হয়ে যায়।
বর্তমানে মৌলভীবাজারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৮.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ অবস্থায় থেমে গেছে চায়ের পাতা বৃদ্ধি। চা বাগানের ভাষায় যাকে বলে বাঞ্জি দশা। গত বৎসর রেকর্ড করা হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এসব পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইরিগেশনের পাশাপাশি প্রতি চার গাছের মধ্যে মাটি গর্ত করে পঁচা গোবর এর সাথে টিএসপি মিশিয়ে মাটিতে মিলিয়ে দেয়ার পরামর্শ চা বিজ্ঞানীদের।
এ অবস্থায় বাংলাদেশ চা গবেষনা কেন্দ্রের চা বিজ্ঞানী ও প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের কর্মকর্তারা বাগানে বাগানে গিয়ে ব্যবস্থাপকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
-চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন জানান, দেশের চা শিল্প এখন খরা’র দ্বিতীয় ধাপের কবলে পড়েছে। তবে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। প্রকৃতির অমোঘ চক্রে প্রতি চার থেকে পাচ বছর অন্তর অন্তর এপ্রিল মাসের শেষে সাধারণত এই ‘দ্বিতীয় ধাপের খরা’ দেখা যায়, ফলে চা গাছে কিছুটা সাময়িক বাঞ্জি দশা দেখা দেয়, এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আশারাখি অচিরেই, যথা নিয়মেই মে মাসের শুরু থেকে কাংখিত বৃষ্টিপাতে চা উৎপাদনে গতি ফিরে আসবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতি মৌসুমেই কোন না কোন বৈরী পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় দেশের চা শিল্পকে। এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশের চা শিল্প। বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয়ের গতিশীল নেতৃত্বে এবং সঠিক দিক নির্দেশনায় আমরা যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সর্বাত্বক চেষ্টায় লেগে থাকি। দেশের প্রতিটি বাগান ঘিরেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় রয়েছে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা। চা উৎপাদনের ভরা মৌসুম সন্নিকটে। আমরা আশাবাদী এসব প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করেই আমাদের এ বছরের চায়ের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক বলেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় কর্তৃক জলবায়ু পরিবর্তনে করনীয় বিষয়ক একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে ভবিষতে এ জাতীয় সংকট থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
লক্ষ্যমাত্রা ১০২ মিলিয়ন কেজি অর্জিত হবেই
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছি। আমাদের এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই চলতে হবে। এই খরায় চা শিল্প তেমন ক্ষতির সম্মুখীন হবে না বলে আমি মনে করি। চায়ের মৌসুম মাত্র শুরু, ভরা মৌসুম সামনে। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক নজরদারি বিদ্যমান রয়েছে। চায়ের উন্নয়নই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ১০২ মিলিয়ন কেজি অর্জিত হবেই।