লন্ডন: তিন সন্তানের মা হানিফা শেখ। তার স্বামী দিনমজুর শেখ মোকাদ্দর। তাকে ভোর ১টার সময় ঘর থেকে তুলে নেয় পুলিশ। হানিফা অনুনয় বিনয় করেছিলেন ছেড়ে দেবার জন্য কিন্তু তারা ছাড়বে না। তারা নাছোড়বান্দা! গ্রামে তার কোন শত্রু আছে কি-না আমি জানিনা। সে তো সারাদিনই কাজে থাকে। কথাগুলো উল্লিখিত হানিফা শেখের।
ক্রিকেট খেলায় ভারতকে হারিয়ে পাকিস্তানের বিজয়ে মধ্যপ্রদেশের মহাদ গাঁয়ে বাজি পুড়িয়ে উৎসব করেছে এমন অভিযোগে মোকাদ্দরকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। অথচ কেউই বলতে পারেনা কখন কোথায় বাজি পোড়ানো হয়েছে কিংবা পাকিস্তানের পক্ষে আর ভারতের বিরুদ্ধে ধ্বনি তোলা হয়েছে। এমনকি যিনি অভিযোগকারী সেই সুভাষ লক্ষন কলি নিজেও বলতে পারেন না।
কলির নিজের কথা, তিনি কোন অভিযোগ দেন নি পুলিশে। তিনি রোববার থানায় গিয়েছিলেন তার এক প্রতিবেশীকে সহায়তা করার জন্য যাকে উচ্চস্বরে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলার অভিযোগে থানায় নিয়ে আসা হয়। তিনি আরো বলেন, আমি কোন বাজি পুড়ানো দেখিনি এমনকি কোন আওয়াজও শুনিনি। আমি যখন সোমবারে একই কারণে থানায় আবার যাই পুলিশ আমাকে আমার অসম্মতিতেই সাক্ষি বানিয়ে দেয়। আমি এ কথা বলবো তবে এখানে নয় সরাসরি আদালতে কোন বিচারকের সামনে। নতুবা পুলিশ আমার ক্ষতি করবে। বিশ বছরের যুবক সুভাষ কলি নিজ গ্রামে ডিস এন্টেনা মেরামতের কাজ করেন।
আরেকজন ২৫ বছর বয়সী আনিস বাবু পিনজারার মা শাহাদৎ বলেন, তিনি তার সেলাই মেশিনে বসে কাজ করছিলেন এমন সময় পুলিশ এসে আনিসকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি পেছন পেছন গিয়ে জানতে চাইলেন কেনো তাকে নেয়া হচ্ছে? পুলিশ কোন উত্তরই দেয়নি। রাত ২টায় তার ছেলেকে কেনো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাওয়ার অপরাধে বরং তাকে আটক করে। তার সামনেই তার ছেলেকে মারপিট করে পুলিশ এমন অভিযোগ করেছেন আরেকজন রশিদ ইমাম তাদভি। তার ছেলে পঁচিশ বছর বয়সের মাহমুদ পুলিশী গ্রেফতারকৃতদের একজন।
ইরশাদ নামের আরেক জনের কিশোর ছেলেকে রাতের খাবার খাওয়া থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পুলিশ আমার ছেলের সাথে দেখা করতেও দেয়নি।
সকিনা খোদাবক্সের ২৫ বছর বয়সি পুত্র ইমাম তাকেও পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। পুলিশের মারের দাগ এখনও মুখের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যমান সকিনার শ্বশুরের।
গ্রামে ভূষিমালের দোকান চালায় ৩০ বছর বয়সের ইরফান। তাকে দোকান থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ তার সাথে এমন ব্যবহার করলো যেনো গাঁয়ে কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে আর সে একজন আসামী বলেন তার মা ফান্দাবি।
শরিফ হাসান তাদভি ৩০, শাহপুরে গতর খাটিয়ে সংসার চালান তাকেও পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তার অপরাধ তিনি তার বাচ্চাদের রক্ষার জন্য দৌড় দিয়েছিলেন। পুলিশের প্রশ্ন তুমি দৌড়ালে কেনো?
রমিজার বড় ভাই সালমান তুরাব তাদভি, বয়স ২০ হবে। সে খোলা মাঠে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় পুলিশ তাকেও ধরে এবং তাকে জলশৌচ তারাতারি শেষ করতে বলে।
তাদের একমাত্র অপরাধ তারা মুসলমান
বোরহানপুর জেলার ওই মহাদ গাঁয়ের লোকসংখ্যা ৫হাজার ২শত। এদের অধিকাংশই মুসলমান। তাদের নামের শেষে বুনিয়াদি পদবি ‘তাদভি’ লেখা হয়। এরা অতীতের কোন এক সময় ভীল জাতির মানুষ ছিল এবং পরে মুসলমান হয়। তাদের চলাফেরা, আচার-ব্যবহার বহুলাংশে সনাতনি হিন্দুদের মত। এরা সবসময়ই একে অন্যের উৎসবে যোগ দেয়, শরিক হয়। শান্তির এ গ্রামে হঠাৎ করেই পুলিশী হয়রানী নেমে আশে পাকিস্তানের সাথে ভারত হেরে যাবার দিন থেকে। পুলিশী ভয়ে গ্রামের অধিকাংশ মুসলমান এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ এরা সবাই একেবারে নিরন্ন নিরীহ খেটে খাওয়া মানুষ। তারা কেউই বলতে পারেন না কেনো তাদের সাথে এমন আচরণ করছে পুলিশ। গত ২৩ জুন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ খবর দিয়েছে। খবরের বিবরণ থেকে সহজেই বুঝা যায় তাদের একমাত্র অপরাধ তারা মুসলমান! অবশ্য খবরের শেষে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে যে সাহাপুরের পুলিশ ইন্সপেক্টর একজন সঞ্জয় পাঠক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন গত বুধবারে তিনি গ্রামবাসীর সাথে বৈঠক করেছেন এবং তাদের বলেছেন তোমরা যদি কোন অন্যায় না করে থাকো তা’হলে তোমাদের ভয়ের কোন কারণ নেই!