1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
মুকিত মিয়া - মুক্তকথা
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬ অপরাহ্ন

মুকিত মিয়া

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৬
  • ৯৬৩ পড়া হয়েছে
image

চারিদিকে কেমন মৃত্যুর নীরবতা

মুকিত ভাই, আব্দুল মুকিত চৌধুরী। আমার সাথে খুব ভাব। পরিচয় ২০০১ সালে লন্ডনের রিডিং এ। আমি তখন রিডিং এর বাংলাদেশ এসোসিয়েশনে কাজ করি। লন্ডন থেকে নতুন এসেছি এখানে।

রিডিং অনেক বড় শহর। ইংরেজ রাজত্বের অনেক প্রাচীণ ইতিহাস ঐতিহ্যের দেখা মিলে এই শহরে আসলে। এতো বড় শহরে মাত্র কয়েক ডজন বাংগালী পরিবার বাস করেন। এদের বলতে গেলে সকলেই মূলতঃ সিলেটের মানুষ। সৌভাগ্যের আদিম তাড়নায় আরো অনেকের মত সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পাড়ি দিয়ে অবশেষে এখানে এসে নিবাস গড়ে নিয়েছেন।
আমি মাত্র ৪ পরিবারকে আগে থেকে চিনি। তাদের সকলেই বাংলা দেশের উত্তর-পূর্ব কোনের পাহাড়ী কন্যা মৌলভী বাজারের মনুপাড়ের মানুষ। পুরনো পরিচিতজনদের সাথে যে মন নিয়ে মনের কথা প্রানের কথা বলা যায়, অন্যদের সাথে তেমনভাবে ভাবের আদান প্রদান সম্ভব হয়না। তাই রিডিং এসে ঐ চার পরিবারের সাথেই আমার চলাফেরা সীমিত। প্রথম প্রথম লন্ডন থেকেই কয়েকদিন আসা যাওয়া করার পর নিজেই যখন পরিশ্রান্ত বোধ করতে লাগলাম এমনি একদিন আমার চাকুরীদাতা সংস্থার সভাপতি এসে আমাকে বললেন- আর আপনাকে এতদূর পাড়ি দিয়ে আসা যাওয়া করতে হবে না। এখন থেকে আপনি অফিসের ঐ খালি যায়গাটায় ভাঁজ করা খাট বিছিয়ে অস্থায়ী থাকার ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। শুনে খুবই খুশী হলাম। ঐদিনই সেই ব্যবস্থা করে নিলাম।
এভাবেই রিডিং এ আমার আপাতঃ থাকার ব্যবস্থা হলো সেখানকার বাংগালী মসজিদের উপর তলায় আমার অফিসেরই এক পাশে অস্থায়ীভাবে মেঝেয় বিছানা বিছিয়ে। বেশ কয়েকদিন এভাবেই কাটলো।
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানাপত্র গোছিয়ে নিচ্ছি এমন সময় মুকিত ভাই আসলেন। ইতিমধ্যে তার সাথে পরিচিত হবার সুযোগ হয়ে গিয়েছিল। বিছানা গোছিয়ে নিচ্ছি দেখে আমাকে শুধালেন, এ কার বিছানা হারুন ভাই? বললাম, কেনো আর কার হবে, আমারই। অনেকটা আশ্চর্য্য হয়ে বললেন- আপনি এখানে এভাবে থাকবেন? বললাম, আপাততঃ এ ছাড়া কোন বিকল্প নেই। হেসে বললেন, হারুন ভাই আপনাকে আগে থেকে চিনিনা ঠিকই কিন্তু জেনে নিয়েছি আপনি রাজনীতি অঙ্গনের মানুষ, একজন খাঁটী মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক, আমাদেরই একজন আর খুবই ভাল লোক, সেই আপনি থাকবেন এভাবে! এ হয় না। imageআজ থেকেই আপনি আমার ঘরে থাকবেন। সেই থেকে মুকিত ভাইয়ের সাথে পরিচয় ও ভাব। খুবই প্রাণের মানুষ, সত্যিকার অর্থেই মনের মানুষ।
চলতে চলতে একসময় মুকিত ভাইয়ের এতো ঘনিষ্ট হয়ে গেলাম যে রিডিং এর আমার পরিচিত এক বাঙ্গালী পরিবারকে সাহায্য করতে গিয়ে অনেকের বাধ সাধার পরেও কেবল মাত্র আমাকে বিশ্বাস করে ধারে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন মুকিত ভাই। আমিও সময়ের আগেই ঋণ পরিশোধ করি। মুকিত ভাই তার পাঁচ পাঁচ ভাইকে বৃটেনে এনেছেন। তার ঐকান্তিক অনুরোধে, অন্ততঃ সপ্তাহে দু‌’চারদিন অফিসের কাজ সেরে তার টেকওয়ে-তে গিয়ে গল্পগোজবে সময় কাটাতাম। মাঝে মাঝে তাস খেলায়ও শরিক হতাম। তুখোর বুদ্ধিমান খেলোয়াড় ছিলেন মুকিত মিয়া। খুব হাসি তামাশায় সময় কাটতো।
একদিন, মুকিত ভাই তার টেকওয়ের রন্ধনশালায় কি একটি পাকের কাজ করছেন, আমি কাজ সেরে তার ওখানে গিয়ে হাজির। ভেতরে ঢুকতেই তার এক খদ্দেরের ফোন আসলো। আমি ফোনটি ধরে ফেললাম। এতোদিনে দেখে দেখে মোটামুটি শিখে নিয়েছি খদ্দেরকে প্রথমে কি বলতে হয়। ফোন ধরেই বললাম- ইয়েস স্যার, গুরু তান্দুরী স্পিকিং, হোয়াট ইউ লাইক টু অর্ডার স্যার ? মুকিত ভাই ভেতর থেকে বললো, হারুন ভাই কাষ্টমারের নাম জেনে নিন। তা‌’হলেই আমি বুঝতে পারবো কি খাবে! খুব প্রখর স্মরণ শক্তির অধিকারী ছিলেন মুকিত মিয়া। এ ধরনের অনেক ঘটনাই আছে মুকিত ভাইয়ের সাথে।
চাকুরীর মেয়াদ শেষে আমার রিডিং ছেড়ে আসার কয়েক বছর পর মুকিত ভাইয়ের পুরো পরিবার সকল ভাই সমেত রিডিং ছেড়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের লক্ষ্যে স্কানথর্প চলে গিয়ে নিবাস গড়ে তুলেন। বড় আকারে একটি রেঁস্তোরা ব্যবসা শুরু করেন। বেশ আগে একদিন গিয়ে দেখে এসেছি।

গত মাসে টেলিফোনে ভাল-মন্দ অনেক আলাপ হলো। যাবার জন্য খুব করে বললেন। আমিও আসছি বলে কথা দিলাম। সেই আজ অনেক দিন পর তাকে দেখতে যাচ্ছি সুদূর স্কানথর্প শহরে, যেখানে দুপুরের নামাজের পর হবে তার সাথে এ জীবনের শেষ সাক্ষাৎ। স্কানথর্প ইসলামিক সেন্টার মসজিদে হবে তার জানাজা। ঘুমাও মুকিতভাই, শান্তিতে ঘুমাও।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT