মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে নিরাপদ পরাগায়ন বিষয়ে ২ দিনব্যাপী মধুচাষীদের প্রশিক্ষণ শুরুহয়েছে। সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেড এর আয়োজ্ন উপজেলা কৃষি অফিসের প্রশিক্ষণ কক্ষে শুক্রবার বেলা ২টায় এ কর্মশালা শুরু হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার জয়ন্ত কুমার রায়ের সভাপতিত্বে ও সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেড এর সিনিয়র ম্যানেজার কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত উপজেলা কৃষি অফিসারা বিশ্বজিত রায়, কমলগঞ্জ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি, লেখক-গবেষক আহমদ সিরাজ, উপজেলা মধুচাষী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ বাবুলসহ প্রায় ৩০ জন মধু চাষী অংশগ্রহন করেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৌ বিশেষজ্ঞ ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মধুর গুণগত মান ও অধিক পরিমাণে উৎপাদনের জন্য এখানে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে গবেষণা চালানো হচ্ছে। মৌমাছির মধ্যে পোলেন নামক এক ধরনের প্রোটিন আছে, যা নিয়মিত খেলে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে না। পোলেন, প্রপোলিস এ মূল্যবান উপাদানগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সংগ্রহ করা সম্ভব। প্রতিকুল পরিবেশে মধুর উৎপাদন যেন হ্রাস না পায় এবং রফতানিযোগ্য মধুর গুণগতমান যেন ঠিক থাকে, সে ব্যাপারেও গবেষণা চলছে। প্রপোলিস একটি ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান। উন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ভালো মানের প্রসাধনী তৈরিতেও প্রপোলিস ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রপোলিস নিয়ে উচ্চতর গবেষণা চলছে। উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় মৌমাছি পালন করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের সুব্যবস্থা করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, কৃষিতে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হলে সন্ধ্যার দিকে করতে হবে।
উল্লেখ্য, কমলগঞ্জ উপজেলায় মধু চাষের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাতে বেকারত্ব দুরীকরণসহ প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে আর আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়ে উঠবে বিপুল সংখ্যক লোক। কমলগঞ্জের মধুচাষীদের আরও দক্ষ করে গড়তে এ উপজেলায় সরকারিভাবে একটি মধু চাষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা জরুরী বলে জানিয়েছেন মধুচাষীবৃন্দ।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বালাইনাশকের নিরাপদ ও যুক্তিযুক্ত ব্যবহার, সঠিক প্রয়োগ পদ্ধতি এবং পলিনেটর নিরাপত্তার উপর ২ দিনব্যাপী মধুচাষীদের প্রশিক্ষণ শনিবার বিকেলে সমাপ্ত হয়েছে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয় এবং সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেড এর যৌথ আয়োজনে উপজেলা কৃষি অফিসের প্রশিক্ষণ কক্ষে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার জয়ন্ত কুমার রায়ের সভাপতিত্বে ও প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেড এর সিনিয়র ম্যানেজার (স্টুয়ার্ডশিপ এন্ড এনগেজমেন্ট) কৃষিবিদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ (পিএইচডি) এর সঞ্চালনায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রশিক্ষণার্থীর হাতে সনদপত্র তুলে দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার এর উপ-পরিচালক শামসুদ্দিন আহমদ। দু’দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রশিক্ষণ প্রদান করেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট মৌ-বিশেষজ্ঞ ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন, সহযোগি অধ্যাপক মোছা: মুনজুরি আকতার ও মোছা: সালমা আকতার।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন অতিরিক্ত উপজেলা কৃষি অফিসার বিশ্বজিত রায়, কমলগঞ্জ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি, লেখক-গবেষক আহমদ সিরাজ, সাংবাদিক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, উপজেলা মধুচাষী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ বাবুল প্রমুখ। দু’দিনব্যাপী প্রশিক্ষণে কমলগঞ্জ উপজেলার ৩০ জন মধুচাষী অংশগ্রহন করেন।
এদিকে প্রশিক্ষণ শেষে শনিবার বিকাল ৩টায় কৃষি গবেষণা ফাউ-েশন (কেজিএফ) এর অর্থায়নে শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃক বাস্তবায়িত মৌমাছির রোগ ও পোকামাকড় এর জরিপ কার্যের অংশ হিসেবে ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হয়। শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেনের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত উপজেলা কৃষি অফিসার বিশ্বজিত রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার জয়ন্ত কুমার রায়।
উল্লেখ্য, কমলগঞ্জ উপজেলায় পাঁচ শতাধিক মধুচাষী রয়েছেন। এ উপজেলা থেকে বছরে প্রায় এক কোটি টাকার মধু বিক্রি হয়। এ উপজেলা মধু চাষের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাতে বেকারত্ব দুরীকরণসহ প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে আর আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়ে উঠবে বিপুল সংখ্যক লোক। কমলগঞ্জের মধুচাষীদের আরও দক্ষ করে গড়তে এ উপজেলায় সরকারিভাবে মধুচাষীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল মৌবাক্স সরবরাহ করা, একটি মধু প্রক্রিয়াজাতরণ এর ব্যবস্থা, মধু চাষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করলে কমলগঞ্জ উপজেলা মধুচাষের ব্র্যান্ডিং জোন হিসেবে গড়ে উঠবে বলে সচেতন মহলের অভিমত।