মুক্তকথা সংবাদনিবন্ধ।। বিগত দু’বছর ধরে কক্সবাজারের আশ্রয়ঘরগুলিতে যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি বসবাস করে আসছে সেখানে তাদের শিশু-কিশোরদের সংখ্যা প্রায় ৫লক্ষ। এ হিসেব জাতিসংঘের। এ দু’বছরে নিশ্চয়ই সে পরিমাণ আরো বেড়েছে। এ দু’বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরেরা কোনরূপ লেখা-পড়ায় যোগ দিতে পারেনি। তাদের সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় লোকজন তাদেরজন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ বা সংশ্লিষ্ট এনজিও প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা-তদবির করেও যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য তাদের বিরামহীন প্রচেষ্টার ফলে বিগত মে মাসের ১৩ তারিখে তাদের সৌভাগ্য হয় শিক্ষা বিষয়ের সাথে জড়িত জাতিসংঘ ও এনজিও এর কিছু প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগের। সংবাদ সংস্থা আল-জাজিরা সে বিষয়টি নিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু খবর প্রকাশ করেছে।
খিন মাউং নামের একজন রোহিঙ্গা যুবপ্রতিনিধি, আশ্রয়ক্যাম্পের শিশু-কিশোরদের শিক্ষার দায়ীত্বে থাকা জাতিসংঘের শিক্ষাবিষয়ক প্রতিনিধির সাথে আলাপ করতে গিয়ে জানতে চায় যে, কি কারণে বিগত দু’বছর যাবৎ তাদের শিশু-কিশোরেরা নিয়মানুগ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। তার প্রশ্ন ছিল আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে কোন ধরনের শিক্ষাই চালু নয়। সেখানে না আছে মিয়ানমারের শিক্ষা কর্মসূচী না চলছে বাংলাদেশের। ফলে শিশু-কিশোরেরা তাদের আসল পরিচয় হারিয়ে ফেলছে।
জাতিসংঘ প্রতিনিধির কাছে খিন মাউং-এর প্রশ্ন ছিল- কেনো এমন হচ্ছে আমাদের সাথে? আমরা কি একটি অপরিচিত জাতিগুষ্ঠী হিসেবে বড় হয়ে উঠবো? আমাদের শিক্ষার প্রয়োজন এটি বলতে হবে কেনো? আমরা একটি হারিয়ে যাওয়া জাতি হিসেবে গড়ে উঠছি।
জাতিসংঘের নিয়মে আছে বাস্তুচ্যুত আশ্রয়নেয়া সকল শিশু-কিশোরেরা হয় তাদের নিজের দেশের শিক্ষা কর্মসূচীতে পড়বে অথবা যদি তারা চায় তা’হলে আশ্রয়পাওয়া দেশের শিক্ষা কর্মসূচীর মাধ্যমে তাদের শিক্ষার সুযোগ তৈরী করে দিতে হবে।
রোহিঙ্গাদের বেলায়, দেশে থাকতেই মায়ানমার সরকার তাদের শিক্ষা সূচী ব্যবহার করতে নিষেধ করে। শিক্ষা বিষয়ে এ প্রত্যাখানের ২মাস পর ২০১৭সালের অক্টোবর মাসে বর্বর সামরিক হামলা শুরু হলে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা পরিবার প্রান নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এখানেও ঢাকায় সরকারী প্রতিনিধিরা তাদের শিক্ষা কর্মসূচী ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করে। আপাততঃ সমাধানের মত একটি ‘ফরমায়েশি’ পাঠ্যসূচী যা কেবল আংশিকভাবে বাংলাদেশ সম্মতি দেয় চালু করা হয়েছিল তা-ই এখনও চলছে। কথা ছিল ইতিমধ্যেই জাতিসংঘ হয় মায়ানমার অথবা বাংলাদেশকে সম্মত করাবে তাদের যে কোন একটি শিক্ষা কর্মসূচীকে ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু প্রায় দু’বছর হতে চলেছে তার কোনটাই হয়ে উঠেনি।
আলজাজিরার খবরে বিগত মে মাস পর্যন্ত অতি অল্প উদ্যোগ নেয়া হয়েছে মায়ানমার সরকারকে তাদের শিক্ষাসূচী ব্যবহারে রাজী করাতে। অথচ জাতিসংঘের হিসেবেই কক্সবাজারের ওই ‘ক্যাম্প’ গুলিতে শিশু-কিশোরের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৬১ হাজার।
এ প্রসঙ্গে ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কেনেথ রাসেল আলজাজিরাকে বলেছেন যে মায়ানমার সরকারকে রাজী করাতে বাংলাদেশ ও মায়ানমারকে আরো ঘনিষ্ট হয়ে এ বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। সূত্র: আলজাজিরা থেকে