লন্ডনের পাতাল রেলে চড়া এখন কান ঝালা-পালা করা “রক কন্সার্ট” উপভোগের মত হয়ে গেছে। “রক কন্সার্ট” যেমন শ্রোতাদের কানের বারোটা বাজায় ঠিক তদ্রুপ লন্ডনের পাতাল রেলযাত্রীদের শ্রবণেন্দ্রীয় বিকল হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এমন কথাই বলেছেন এসবের উপর গবেষণারত একজন প্রথম কাতারের অধ্যাপক। অবশ্য ‘ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন’ কর্তৃপক্ষ এটি স্বীকার করতে রাজী নন।
বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, লন্ডনের সাথে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে লন্ডনের কতিপয় পাতাল রেলে গোলমেলে আওয়াজ এতই বেশী যে কান বাঁচাতে হলে যাত্রীদের “কানবন্দ” পড়া উচিৎ হবে। ওই বিশ্ববিদ্যলয়ের কর্ণ বিভাগের ডঃ জো সল্লিনী বলেন, লন্ডনের কতিপয় পাতাল রেলের শব্দগত গোলমালের যে মাত্রা লক্ষ্য করা গেছে তা অনেকটাই এমন কর্মপরিবেশের, যেখানে “কানে শুনার সহায়ক যন্ত্র” ব্যবহার না করলে শ্রবণেন্দ্রীয় বিকল হয়ে যাবার সম্ভাবনা খুব বেশী। বিবিসি লন্ডনের শব্দ গোলমালের মাত্রা গবেষণার আলাপে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ লন্ডনের সাথে শব্দদুষণের গবেষণায় লন্ডনের পাতাল রেলের কিছু কিছু অংশে শব্দ দুষণের মাত্রা এমনই যে ওইসব লাইনের যাত্রীগন “কানবন্দ” ব্যবহারের বিষয়টি চিন্তায় রাখেন। অনেকটা বাংলাদেশের মানুষ যেমন দূর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য নাকে রুমাল বেঁধে হাটেন, তেমনি।
গবেষণার সময় সবচেয়ে বেশী শব্দ-কোলাহলের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ‘সেন্ট্রাল লাইন’এর বেথনাল গ্রীন থেকে লিভারপুল স্ট্রিট লাইনে। দশটি বিভিন্ন নমুনার ঘটনায় শব্দ-কোলাহলের মাত্রা ১০৫ ডেসিবেলস এর উপর পাওয়া গেছে জুবিলী, সেন্ট্রাল, ভিক্টোরিয়া এবং বেকারলু লাইনে।
সাধারণতঃ শব্দ-কোলাহল ৮৫ ডেসিবেলস এর উপরে চলে যায় এমন অবস্থা পাওয়া গেছে, এমন কোন কর্মপরিবেশে কর্ণ নিরাপত্তামূলক সামগ্রী ব্যবহার জরুরীভাবে প্রয়োজন। গবেষণার জন্য, পাতাল রেলে যাত্রী চলাচলে শব্দ-কোলাহলের যে বিশাল তালিকা প্রস্ত্তত করা হয়েছে এর মধ্যে ‘অঞ্চল-১’ ও ‘অঞ্চল-২’ মধ্যে চলাচলকারী রেলগাড়ীগুলোর সবচেয়ে গোলমেলে যাত্রা কোনটি তাও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আর এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে উত্তরীয়(নর্দার্ন) লাইনের “কেনটিশ টাউন” থেকে “টাফনেল পার্ক” পর্যন্ত যাতায়াত। যাতায়াতের এ রেললাইনে ভ্রমনের সময় শব্দ গোলমালের মাত্রা হলো ৯৭ ডেসিবেলস -যা কি-না একটি পাওয়ার ড্রীল দ্বারা কাঠে ফুর তৈরীর সমান আওয়াজ উৎপন্ন করে।
ডঃ সল্লিনী বিবিসি’র ওই পর্বে আরো বলেন সকল টিউব লাইনের মধ্যে “সেন্ট্রাল লাইনের আছে সর্বোচ্চ আওয়াজ তৈরীর ক্ষমতা এবং প্রাথমিকভাবে বলা যায় যে এখানে ১১০ডিবি শক্তির আওয়াজ তৈরী হয়ে থাকে।
এছাড়াও কানঝালা-পালা করা গড় আওয়াজ সৃষ্টি কারী লাইনটি হলো ভিক্টোরিয়া লাইন এর পরেই বলতে হয় প্রথমতঃ জুবিলী লাইন, এর পরে রয়েছে উত্তরীয় বা নর্দার্ন লাইন ও কেন্দ্রীয় বা সেন্ট্রাল লাইন। এ লাইনগুলোতে আওয়াজ বা শব্দ দূষণের মাত্রা ৮৫ ডেসিবেলস। এই মাত্রার আওয়াজের কাছে কোন কাজের লোককে কানের নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই ‘কানবন্দ’ পড়ে কাজ করতে হবে।
ডঃ সল্লিনীর মতে পাতাল রেলের এসব লাইনে আওয়াজের যে তীব্রতা লক্ষ্য করা গেছে, এমনিতেই এই তীব্রতা যাত্রীসাধারণের শ্রবণশক্তি বিনষ্টের জন্য যথেষ্ট। ফলে, এসব লাইন নিয়ে আরো তদন্ত হওয়া খুবই প্রয়োজন। কারণ যেসব মানুষ প্রতিনিয়ত এসব লাইনে যাতায়াত করছেন তাদের অবশ্যই উচিৎ ‘কানবন্দ’ ব্যবহার করা। সূত্র: ‘রাইট রিলিভেন্স’