শ্রীমঙ্গলে ইউপি চেয়ারম্যানের অবৈধ বালু উত্তোলনে দিনভর অভিযান
সহস্রাধিক ট্রাক বালু জব্দ, ৪টি মেশিন নিলামে
সৈয়দ ছায়েদ আহমদ, শ্রীমঙ্গল।। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উপজেলা প্রশাসনের অবৈধ বালু বিরোধী অভিযানে সহস্রাধিক ট্রাক বালু জব্দসহ ও বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ৪টি শ্যালো মেশিন তাৎক্ষনিক নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৫ ঘন্টাব্যাপী শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যান চেরাগ আলীর ৩টি বালুমহালসহ বিভিন্ন অবৈধ বালু মহালে এ অভিযান পরিচালিত হয়। উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মো. শাহিদুল আলম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) আশরাফুজ্জামান ও থানা পুলিশ ফোর্স অভিযানে অংশ নেয়। ৫ঘন্টা ব্যাপী অভিযান চলাকালে উপজেলার ভূনবীর ইউপি’র ইছামতি চা বাগান এলাকা থেকে অবৈধভাবে গভীরে গর্তকরে মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করার কাজে ব্যবহৃত ইউপি চেয়ারম্যান চেরাগ আলীর মালিকানাধীন ৪টি শ্যালো মেশিন, পাইপ ও প্রায় ৫০ট্রাক বালু জব্দ করে সাতগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মিলন শীলের কাছে জিম্মা দেয়া হয়। পরে একই ইউপি’র জৈতা ছড়ার শাসন, ইসলামপাড়া ও ভূনবীর গ্রামের মুসাব্বির মিয়া, কবির মোল্লা, কদর আলী, আসলম মিয়া, ঠান্ডা মিয়া, জলিল মিয়া ও হাওর মেম্বারের মালিকানাধীন অবৈধ বালু মহাল থেকে আরো সহস্রাধিক ট্রাক বালু জব্দ করে স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের জিম্মায় রাখা হয়। এসময় ৩৬ হাজার টাকায় জব্দকৃত ৪টি শ্যালো মেশিন নিলামে বিক্রি করা হয়। এদিকে জব্দকৃত বালু রাতের আধারে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে এমন খবরে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু ভর্তি একটি ট্রাক আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপজেলার ভূনবীর গ্রামে স্থানীয় ইউপি সদস্য হাওর মিয়ার মালিকানাধিন বালু মহালে গিয়ে পৌঁছালে গ্রামের সাবেক মেম্বার মৌলদ হোসেন ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বলেন, অবৈধ বালু ব্যবসার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারি না। বালুভর্তি ভারী ট্রাক চলাচল করায় ইউনিয়নের সব রাস্তাঘাট ভেঙ্গে পড়েছে। সব কিছু চেয়ারম্যান ও মেম্বার নিয়ন্ত্রিত হওয়াতে সাধারণ মানুষ জিম্মি। কেউ অবৈধ এই বালু ব্যবসার প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। ইছামতি চা বাগানের স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন, ভুনবীর ইউপি চেয়ারম্যান চেরাগ আলী ইছামতি ছড়া ও কৃষিজমি ভাড়া নিয়ে গভীর গর্ত করে অবৈধ বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। তিনি গত ১০-১১ মাস ধরে প্রাকৃতিক ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করায় ছড়ার গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পাহার টিলা ও কৃষিজমি ধ্বসে পড়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মো. শাহিদুল আলম বলেন, আমরা অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের তথ্য সংগ্রহ করছি। তাদের বিরুদ্ধে ভূমি ব্যবস্থাপনা আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন জব্দকৃত বালু নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া হবে। জমির ৩০-৪০ফুট মাটি খুঁড়ে তাতে মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করার দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীরা আইন অমান্য করে কৃষিজমি ধ্বংস করে মূল্যবান খনিজ সম্পদ লুট করছে। তিনি বলেন এরা যত শক্তিশালি হোক না কেন এদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, দিনভর অভিযান চালিয়ে উপজেলার ৬টি স্পট থেকে প্রায় ১হাজার ট্রাক বালু জব্দ করা হয়েছে। এসময় ৪টি শ্যালো মিশিন জব্দ করে ৩৬ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রয় করা হয়েছে। আমরা বালু জব্দ করে রেখে আসার পর রাতের বেলা খবর পাই বালু খেকোরা জব্দকৃত বালু সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। আমরা সাথে সাখে আবার অভিযান করে ট্রাক ভর্তি বালু জব্দ করে থানায় নিয়ে এসেছি। অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে। এছাড়াও এর আগে দৈনিক যুগান্তরে বালু বিষয়ে সচিত্র রিপোর্ট প্রকাশ হলে প্রশাসনের টনক নড়ে এবং অবৈধ্য বালু উত্তোলনের বিরোদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। তারপরও অবৈধ্য প্রতাপশালী বালু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বন্ধ হয়নি।
|