মৌলভীবাজার(২৬ নভেম্বর ২০২২):
‘সময়ের অঙ্গীকার, কন্যাশিশুর অধিকার’ – এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ‘রুম টু রিড বাংলাদেশ’ আজ মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমী-তে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস ২০২২ উদযাপন করে। কন্যাশিশুদের অধিকার নিশ্চিতকরণে ব্যক্তি ও সম্মিলিত পর্যায়ে অঙ্গীকারের বার্তা উঠে আসে এই আয়োজনে। এছাড়া কন্যাশিশুদের মূলধারার শিক্ষায় অব্যাহত রাখা ও ঝরে পড়া রোধে সকল মহলের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সচেষ্ট করতে দিবসটি উদযাপিত হয়।
করোনা-পরবর্তী সময়ে কন্যাশিশুদের শারীরিক ও মানসিক সংকট উত্তরণে অংশীজনদের উদ্বুদ্ধকরণ, কন্যাশিশুদের শিক্ষার অধিকার সুনিশ্চিতকরণ ও নেতৃত্ব বিকাশ এবং বৃহৎ পরিসরে অংশগ্রহণের পাশাপাশি লিংগ বৈষম্য দূর করার সামাজিক আন্দোলনে অংশীজনের ভূমিকা তুলে ধরা ও সচেতন করা বিষয়ে আয়োজিত আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উদযাপনের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেখ মো. মনিরুজ্জামান, মহাপরিচালক(অতি. সচিব), এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
|
|
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ জাকারিয়া, পুলিশ সুপার, মৌলভীবাজার; ফারজানা সিদ্দিকা, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; তানিয়া সুলতানা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক), মৌলভীবাজার ও মো. ফজলুর রহমান, জেলা শিক্ষা অফিসার(মাধ্যমিক), মৌলভীবাজার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘রুম টু রিড বাংলাদেশ’-এর দেশীয় পরিচালক রাখী সরকার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষানুরাগি এবং উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিসহ মৌলভীবাজার-এর ৮টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ।
‘আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস ২০২২’ উদযাপন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এনজিও বিষয়ক ব্যুরো-এর মাননীয় মহাপরিচালক শেখ মো. মনিরুজ্জামান তার বক্তব্যে উপস্থিত মেয়েশিশুদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমাদের অভিজ্ঞতা দেখার জন্যই ও তোমাদের সাথে স্বাক্ষাত করার জন্যই আমি এসেছি।” তিনি আরো বলেন “শিক্ষা অর্জন করা সবার মৌলিক অধিকার। দরিদ্র এবং মেধাবী শিশুদের শিক্ষার জন্য সমাজের, শিক্ষকদের ও পরিবারের অনেক বেশি সহযোগিতা প্রোয়োজন। এক্ষেত্রে মেয়েশিশুদের শিক্ষা সহযোগিতা এবং জীবন-দক্ষতার মাধ্যমে উৎসাহ দিয়ে ‘রুম টু রিড’ অসাধারণ কাজ করছে।”
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) তানিয়া সুলতানা তার বক্তব্যে বলেন, “ছেলে মেয়ে উভয়ই সমান – তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, সুতরাং পড়াশুনার ক্ষেত্রে মেয়েদের কোন বাধা থাকতে পারে না। আমি যদি পড়াশোনা না করে বিসিএস না দিতাম, তাহলে কি আমি এখানে আসতে পারতাম? তোমাদেরও অনেক পড়াশোনা করতে হবে এবং মানুষের মত মানুষ হতে হবে। পিছিয়ে পড়া যাবেনা।” তিনি আরো বলেন “বাবা মায়েদেরকে সচেতন হতে হবে। মেয়েদেরকে বড় বড় স্বপ্ন দেখাতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন তখনই হবে যখন তোমরা পড়াশোনা করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হবে।”
|
|
মৌলভীবাজারে ‘রুম টু রিড’-এর মেয়েশিশুদের শিক্ষা সহযোগিতা কার্যক্রমের আওতায় থাকা সকল শিশুদের পক্ষে সুমি বলেন- “জীবন-দক্ষতা শিক্ষা আমাদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী, সাহসী করে তুলছে এবং বাধা পেরিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনুপ্রাণিত করছে।”
অনুষ্ঠানের সভাপতি রাখী সরকার তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন- “কন্যাশিশুদের দৃপ্ত পদযাত্রা পৃথিবীতে প্রগতি ও সাম্যের পথ সুগম করতে পারে। কন্যাশিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ এখন সময়ের দাবি। প্রতিনিয়ত নানা প্রতিবন্ধকতা আর সহিংসতার বিরুদ্ধে কন্যাশিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতে সম্মিলিত উদ্যোগের বিকল্প নেই। আমাদের কন্যাশিশুদের অবস্থা ও অবস্থানের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি, জনপ্রতিনিধি ও রাষ্ট্রের সমন্বিত প্রচেষ্টা। এছাড়া কন্যাশিশুর শিক্ষার অধিকার, কারিগরী দক্ষতা, জীবন-দক্ষতা ও নেতৃত্ব বিকাশে সরকার, নীতিনির্ধারক ও আপামর জনসাধারণের সম্মিলিত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটাতে হবে। করোনা-পরবর্তী সংকট উত্তরণে মনোসামাজিক সহায়তা নিশ্চিত ও নেটওয়ার্কগুলোকে জোরদার করতে হবে।”
উল্লেখ্য, ‘রুম টু রিড’ একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা যা বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১টি দেশে শিশুদের শিক্ষা সহায়তায় কাজ করে আসছে ২০০০ সাল থেকে। সংস্থাটি ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে ‘সাক্ষরতা কার্যক্রম’ এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ‘মেয়েশিশুদের শিক্ষা সহযোগিতা কার্যক্রম’-এর আওতায় শিশুদের শিক্ষা ও জীবন-দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে। রুম টু রিড বাংলাদেশ বর্তমানে ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর’-এর অনুমোদনক্রমে ঢাকা, নাটোর, কক্সবাজার ও মৌলভীবাজার জেলায় ৪৫টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬,৮৮৬ মেয়েশিশুকে শিক্ষা সহযোগিতা প্রদান করছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: আফজাল সিদ্দিক, যোগাযোগ কর্মকর্তা, ‘রুম টু রিড বাংলাদেশ’
|
|