পরিবর্তন! পরিবর্তন সারা লৌকিক জগতের এক অমোঘ বিধান। জাগতিক সবকিছুতেই পলে পলে পরিবর্তন হয়েই চলেছে। আমাদের চোখে দেখা সবকিছুতেই প্রতিমূহুর্তে পরিবর্তন আমরা লক্ষ্য করি। কে একজন বলেছিলেন যে, আজ যে সূর্যকে আমরা দেখছি, কাল সেই সূর্য আর থাকছে না। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, হিলিয়াম নামক গ্যাস অহরহঃ সূর্যে জ্বলছে। সেই হিলিয়ামের পরিমানও তিনি বলেছিলেন। সে আজ আর আমার মনে নেই। তার মূল কথা ছিল, আজকের ২৪ ঘন্টায় যে হিলিয়াম ফিউশন হলো, আগামীকাল তার পরিমাণ কমছে কিংবা বাড়ছে। এতে করে একই সূর্যকে আমরা আর দেখছি না।
আমাদের পরিচিত ‘নাসা’ এ বিষয়ে জানায় যে, সূর্যে পলে পলে ‘নিউক্লিয়ার ফিউশন’ ঘটছে। এই নিউক্লিয়ার ফিউশন হলো- ‘প্রোটন’ ‘প্রোটনে’ আর ‘ইলেক্ট্রনে’ এতো ওজনদার সংঘর্ষ হয় যে, ওই সংঘর্ষের ফলে নির্গত শক্তি বিশ্বময় আলো ও উত্তাপ বিতরণ করেই চলেছে অনাদি অনন্তকাল ব্যাপী। আবার এই ‘নাসা’ই বলছে- সূর্য গর্ভে ‘হাইড্রোজেন’ হিলিয়ামে ফিউজ হয়। অতএব কোন অক্সিজেন লাগেনা। এই যে হিলিয়ামে পরিণত হওয়া বা সংঘর্ষ তার পরিমাণ কোন সময়ই এক থাকে না। ফলে আজ যে সূর্যকে দেখি কাল সে সূর্য আর থাকছে না। এতো গেলো পরিবর্তনের একেবারে মূলের কথা।
অনন্ত পরিবর্তনশীলতার এ নিয়মকে কখনও মানুষের জ্ঞান দেখতে, বুঝতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কি-না আজ বলা যাবেনা। এই বিবর্তন আর পরিবর্তনকে আটকানো যাবে কি-না এমন প্রশ্নে বলতে হয়- মানুষের জ্ঞানজগত এখনও সে অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি। আমি বলবো, মানুষ পারবেই। সবকিছুতেই ইতিবাচক থাকা সকলেরই কাম্য থাকে। আর এই ইতিবাচক চিন্তা ও তার অবস্থান থেকেই বলা যায়, সারা বিশ্ব পরিবর্তনের হাওয়ায় অবগাহন করছে। কোথায়ও কোথায়ও সেই পরিবর্তন মানুষকে নিদারুণ দুঃখ দূর্দশায় পতিত করছে ঠিকই তবে তা অবশ্যই ক্ষণস্থায়ী।
পৃথিবীতে ব্যাপক ওই পরিবর্তনের কিছুটা অনুধাবন করতে পেরে আমেরিকা ঘর সামলানোসহ বিশ্বব্যাপী নিজেদের অবস্থানকে সমুন্নত রাখতে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে। আরেক শক্তিধর রাশিয়া নিজের অবস্থানকে মজবুত করতে আগে ভাগেই আমেরিকার সাথে গাটছড়া বাঁধার কূটনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। সরব দর্শক হয়ে বৃটেন বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছে। নব্য বিশ্ব শক্তিধর চীনারা পরিবর্তনশীল দুনিয়া সামলানোর নেতৃত্বে জায়গা দখলের ঝুঁকি নিতে একেবারেই পছন্দ করছে না। বরং এ ধরনের চিন্তা থেকে নিজেদের অনেক দূরে রেখে চলছে।
পরিবর্তনের এই দোলায় সারা মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সশস্ত্র অস্থিরতা যখন স্থিতিশীল গোটা ইউরোপ, আমেরিকা, ক্যানাডা আর অষ্ট্রেলিয়াকে অস্থির রাখছে গোটা এশিয়া তথা ভারত-পাকিস্তান ও কোরিয়া তখন একে অন্যকে নতুন করে অস্ত্রের হুমকি দিয়ে চলেছে। তাদের এই হুমকি-ধামকি গোটা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলকেও অনেকটা অস্থির করে রাখছে। এক কথায়, সারা বিশ্বময় এক অস্থিরতা এখনও ভয়াবহরূপে প্রবাহমান রয়েছে তবে ধীরে ধীরে স্থিতিতে আসছে, এ কথা বলতেই হয়।
পরিবর্তনের এই অস্থিরতাকে আমাদের উপলব্দি করতে হবে গভীরে গিয়ে। যেমনটি ইউরোপ করছে। বৃটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকা বিশ্ব পরিবর্তনের এই হাওয়া বুঝতে পেরে সচরাচরের মত এবারও আয়োজন করেছে দু’দিন ব্যাপী “পরিবর্তনশীল গণমাধ্যম শীর্ষসন্মেলন”। শুধু গার্ডিয়ানই নয়, ইউরোপের আরো অনেকেই পরিবর্তনের এই অমোঘ আবাহনিকে আনন্দচিত্তে গ্রহন করে বাকীদের সমঝে দেবার তাগিদে আয়োজন করেছেন হরেক রকমের সন্মিলনীর। তাদের আয়োজনই জানান দেয় কবি নজরুলের সেই অমোঘ বাণীর- “ওই নতুনের কেতন উড়ে কাল বোশেখীর ঝড়…।”
এর পরেও আশার কথা একটিই, পরিবর্তনের সেই হাওয়ায় পাল তুলে দুনিয়ার অনেকেই (অনেক দেশ) নিজেদের ঘর সামলাচ্ছেন যেমন আমরাও সামলানোর চেষ্টা করছি। এ লক্ষ্যে আমাদের অনেক অনেক পথ এগুতে হবে।