মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। কূটনৈতিক অভিযানে এবার ব্যাঙ্ক অব ইংল্যাণ্ড। ব্যাংক অব ইংল্যাণ্ডের নতুন ৫০ পাউণ্ডের মুদ্রায় থাকবে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর ছবি এবং নতুন বছরেই তা বাজারে আসতে পারে।
বাঙ্গালী বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু। বৃটিশ-ভারত শুধু নয় সে সময়ের বিশ্বে হাতেগোনা সফল বিজ্ঞানীদের একজন। আবিষ্কার করেছিলেন বেতার তরঙ্গ। কিন্তু পশ্চিমাদের বিভেদ রাজনীতি তার ‘পেটেন্ট’ অধিকার রক্ষা করেনি। ফলে টেলিগ্রাফের আবিষ্কারক হিসেবে নাম লিপিবদ্ধ হয় গুগলিয়েলমো মার্কোনির। মুখ রক্ষার্থে এখন বলা হয় জগদীশ না-কি পেটেন্ট অনুরাগী ছিলেন না।
বাজারে কথা আছে যে, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এসে বৃটেন তার পুরোনো ‘কমনওয়েলথ’ রাষ্ট্রগুলোর সাথে নতুন করে সম্পর্কোন্নয়ন করতে চায়। আর এ লক্ষ্যে এখন থেকে বৃটেন নতুন নতুন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। সম্ভবতঃ এটি তার মধ্যে একটি বলে অভিজ্ঞমহল অনুমান করছেন।
২০২০ সালে ইংল্যান্ডের বাজারে আসতে পারে নতুন ৫০ পাউন্ডের নোট যেখানে ছাপা থাকবে বাঙ্গালী বিজ্ঞানী এই জগদীশ বসুর মুখ৷ ব্যাংক অব ইংল্যান্ড না-কি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে নোটে ছাপানোর জন্য একশ’ জন বিজ্ঞানীর নাম উঠে আসে। প্রাথমিকভাবে এই নামগুলোর মধ্যে এগিয়ে আছেন স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। বিজ্ঞানী বসুর মুখোমণ্ডল অঙ্কিত ৫০ পাউণ্ড নোটের এমন খবর প্রকাশ করেছে বিখ্যাত ‘নিউজ১৮’, ‘দি সান’ ও ‘ইণ্ডিয়া টাইমস’সহ বহু সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যম।
স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুই বিশ্ববাসীকে প্রথমবারের মত জানিয়েছিলেন উদ্ভিদের মধ্যে আছে প্রাণশক্তি। এটি প্রমাণের জন্যে তিনি ‘ক্রেসকোগ্রাফ’ নামক একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন, যা উদ্ভিদদেহের সামান্য সাড়াকে হাজার-লাখোগুণ বৃদ্ধি করে প্রদর্শণ করে। সেই জগদীশ্চন্দ্র বসুর ছবিযুক্ত মুদ্রা চালু হতে পারে ইংল্যান্ডে।
নিজেদের ওয়েবসাইটে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের কাছে না-কি ১ লাখ ৭৪ হাজার ১১২ মনোনয়ন জমা পড়ে। এরমধ্য থেকে বেছে নেয়া হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার নাম। যার মধ্যেই রয়েছেন জগদীশ চন্দ্র বসু।
আধুনিক বিজ্ঞানের পথিকৃত ছিলেন এই কৃতি বাঙ্গালী। বেতার যোগাযোগ যে সম্ভব তা প্রথম আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুই দেখিয়ে দিয়েছিলেন। আবিস্কার করেছিলেন আধুনিক বেতার তরঙ্গ। যা ছাড়া বেতার যোগাযোগা (ওয়্যারলেস কমিউনেকশন) সম্ভব ছিল না।
আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু পলিম্যাথ, বায়োলজিস্ট, বায়োফিজিস্ট, বোটানিস্ট ও অর্কিওলজিস্টও ছিলেন। এছাড়া কৃষি বিজ্ঞানেও তার অনেক অবদান রয়েছে। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসন আমলে বাংলা প্রেসিডেন্সির (বর্তমানে বাংলাদেশ) মুন্সীগঞ্জে ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্ম। পিতা ভগবান চন্দ্র বসু ছিলেন তৎকালীন ব্রাহ্ম সমাজের একজন বিশিষ্ট সদস্য। চাকরি করতেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের এবং একই সঙ্গে ছিলেন ফরিদপুর, ভারতের বর্ধমানসহ কয়েকটি এলাকার সহকারী কমিশনার।
ব্রিটিশ আমলে জন্ম নিয়েও জগদীশ চন্দ্রের শিক্ষা জীবন শুরু হয় বাংলা ভাষায়। সেই সময়ে অভিভাবকেরা নিজের সন্তানকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ছিলেন সবসময় তৎপর। জগদীশ চন্দ্রের বাংলা ভাষায় শিক্ষাজীবন শুরু করতে তার পিতার ভূমিকাই ছিলো বেশি। পিতা ভগবান চন্দ্র বসু বিশ্বাস করতেন যে, শিক্ষাগ্রহণের জন্য সর্বপ্রথম চাই নিজের মাতৃভাষাকে ভালোভাবে রপ্ত করা এবং দেশপ্রেমকে অন্তরে ধারণ করা।
জগদীশ চন্দ্র তার নিজের করা গবেষণা বা আবিষ্কারের জন্য জীবদ্দশায় কোনো পেটেন্ট গ্রহণ করেননি, কিন্তু বর্তমান বিজ্ঞানী সমাজ রেডিও তরঙ্গের ক্ষেত্রে তার অবদান স্বীকার করেন কৃতজ্ঞচিত্তে। তাকে বলা হয় বেতার যোগাযোগের জনক। মিলিমিটার তরঙ্গ আবিষ্কার করে তিনি বেতার যোগাযোগের ক্ষেত্রে একজন অগ্রপথিক হিসেবে আজ গণ্য হন। তার আবিষ্কৃত অনেক যন্ত্র আজও ব্যবহার হয়ে আসছে যাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার এন্টেনা, পোলারাইজার এবং ওয়েভগাইড উল্লেখযোগ্য।