1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
ইশ্বরের জন্মদিন! - মুক্তকথা
মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২১ অপরাহ্ন

ইশ্বরের জন্মদিন!

হারুনূর রশীদ॥
  • প্রকাশকাল : মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১
  • ৬২৬ পড়া হয়েছে

হারুনূর রশীদ

সুফি সাধক শেখ ফরিদ। সকলের কাছে এই মহাজ্ঞানী এই নামেই পরিচিত বেশী। মূলত: এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ ফার্সী সাহিত্যের এক কালজয়ী কবি ছিলেন। তার আসল নাম খাজা ফরিদউদ্দিন মাসুদ গঞ্জেশকার(১১৭৩-১২৬৬)। কবি ছাড়াও তিনি ছিলেন একজন সুফি সাধক। তিনি অতীত ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের প্রচার করেছিলেন। চিশতিয়া ত্বরীকারও তিনি একজন সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন। তাকে পাঞ্জাবি সাহিত্যের অন্যতম প্রধান পুরোধা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
শেখ ফরিদ ১১৭৯ খ্রিষ্টাব্দে পাঞ্জাবের, যা বর্তমানে পাকিস্তান, কোথেওয়াল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চিশতি সুফি তরিকার প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন।

ভারতীয় উপমহাদেশের সুপরিচিত সুফি সাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী-এর সাথে শেখ ফরিদের দেখা হয় বর্তমান পাকিস্তানের মুলতানে। এই সিদ্ধজ্ঞানী কাকীই ছিলেন ফরিদের পীর অর্থাৎ আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক। দুই সিদ্ধজ্ঞানীর এই দেখাই বদলে দিয়েছিল ভারতের ধর্মীয় সংস্কৃতিকে চিরকালের জন্য। কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী তখন বাগদাদ হতে মুলতান হয়ে দিল্লিতে যাচ্ছিলেন।

কবি, সাহিত্যিক, আধ্যাত্মবাদের পথপ্রদর্শক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ এই শেখ ফরিদকে নিয়ে হাজারো গল্প আর কল্পকাহিনীতে ভরে আছে গোটা ভারতের বই-পুস্তক। সে সময়কার দিনে জ্ঞানার্জনের জন্য কখনও পায়ে হেটে কখনও বা ঘোড়ায় চড়ে সেই মক্কা-মদিনা থেকে শুরু করে দামাস্কাস, বাগদাদ, মুলতান, কাবুল, কান্দাহার, সমরকন্দ, বোখারা, পাড়ি দিয়ে ভারতের দিল্লীতে আসা, বর্তমান সময়ের মানুষের কাছে অচিন্তনীয় সাধনকর্ম।

শেখ ফরিদ জ্ঞানার্জনের জন্য সেই অকল্পনীয় দূরলঙ্গীয় পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে ভারতে এসে থিতু হয়েছিলেন। দিল্লীর নিজাম উদ্দীন আওলিয়ার মাজারের কাছে তার সমাধি রয়েছে। সুফি সাধক এই শেখ ফরিদ তার জীবনে বহু গল্প-কাহিনী লিপিবদ্ধ করে গেছেন যা হাজার বছর পরের আজকের এই দিনেও সমানভাবে জ্ঞানীগুণীজনের কাছে সমাদৃত হয়ে আসছে। আর থাকবে যুগ যুগ। তার এ সকল গল্প, কাহিনী কালজয়ী।

সাধারণ মানুষকে আধ্যাত্মিকতা বুঝানোর জন্য তার সেসকল রচনার মূল্যমান বা আবেদন যুগ যুগ শুধু নয় অনন্তকাল মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবে। তার একটি স্বপ্নদেখা গল্প এরকম-
তিনি একরাতে স্বপ্ন দেখলেন যে, তিনি স্বর্গে পৌঁছে গেছেন। স্বর্গ এমনভাবে বিভিন্ন সজ্জায় সাজানো হয়েছে যেন মনে হচ্ছে সেখানে কোনো বড় অনুষ্ঠান হবে। তিনি বুঝতে পারছিলেন না স্বর্গে কী এমন অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে। কি ঘটছে তা খুঁজে নেয়ার জন্য ফরিদ কিছুক্ষণ চারপাশে ঘুরোঘুরি করে আরেকজন সুফিকে পেলেন। সেই সুফির কাছ থেকে জানতে পারলেন এ সমূহ আয়োজন ঈশ্বরের জন্মদিন পালনের উদ্দেশ্যে। স্রষ্টার জন্মদিনকে কেন্দ্র করে স্বর্গপুরীকে এমনভাবে আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। আগত অতিথিদের স্বাদরে গ্রহণ করার জন্য স্বর্গের প্রবেশদ্বারে বিশাল এক স্বাগত-তোরণ বানানো হয়েছে। শেখ ফরিদ(রঃ) বেশ কৌতূহলী দৃষ্টিতে স্বর্গের একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলেন।

কিছুক্ষণ পর তিনি দেখলেন, একজন লোক ঘোড়ায় চড়ে প্রবেশ করছে আর তার পিছনে রয়েছে লক্ষ অনুসারী। আগ্রহ, কৌতূহল নিয়ে শেখ ফরিদ(রঃ) সেই সুফির কাছে লোকটির বিষয়ে জানতে চাইলেন।
সুফি জবাব দিলেন, ইনি নবী হযরত মোহাম্মদ(সাঃ)। এরপর অপর একজন আসলেন। সেই সুফি ফরিদকে জানালেন, ইনি শ্রীকৃষ্ণ(আঃ) এভাবে এক এক করে বুদ্ধ(আঃ), মূসা(আঃ) ও যীশু(আঃ) তাদের অনুসারীদের নিয়ে সেই স্বাগত-তোরণ দিয়ে প্রবেশ করলেন। সকলকে খুব জাঁকজমকপূর্ণভাবে স্বর্গের প্রবেশদ্বারে স্বাগত জানানো হলো। বেশ কিছু সময় কেটে গেল। আর যেনো কেউ আসছে না। এমন অবস্থায়, কিছুক্ষণ পর শেখ ফরিদ(রঃ) দেখেন কোনো অনুসারী ছাড়াই একটি মাত্র গাধাকে সঙ্গে নিয়ে একজন বৃদ্ধ আসছেন এবং স্বর্গের প্রবেশদ্বারের দিকে হাটছেন। শেখ ফরিদ(রঃ) একটু হেসে সেই বৃদ্ধের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন- ‘মহাশয় আপনি কে? সবাইকে দেখলাম তাদের লক্ষ লক্ষ অনুসারীদের নিয়ে প্রবেশ করছেন আর আপনি একা শুধুমাত্র একটি গাধাকে নিয়ে প্রবেশ করছেন?

বৃদ্ধ কষ্টের হাসি হেসে উত্তর দিলেন, ‘আমিই হতভাগা ঈশ্বর। আজ আমার জন্মদিন। সবাই কোনো না কোনো ভাবে বুদ্ধ(আঃ), কৃষ্ণ(আঃ), মোহাম্মদ(সাঃ), মূসা(আঃ) আর যীশু(আঃ)’র অনুসারী হয়েছে কিন্তু আমাকে অনুসরন করার জন্য কেউ আর বাকি নেই। আছে শুধু আমার এই গাধা। তাই আর কি করি এই গাধাটিকে নিয়েই হাজির হচ্ছি। আমাকেতো আসতেই হবে। আমার জন্মদিন না!
এতটুকু স্বপ্ন দেখার পর শেখ ফরিদের ঘুম ভেঙ্গে গেল। পরদিন তিনি তাঁর শিষ্যদের স্বপ্নের কথা বললেন এবং সকলকে জানিয়ে দিলেন, ‘এখন থেকে আমি কোনো ধর্মানুসারী নই। আমি শুধুমাত্র ঈশ্বরের অনুসারী।’
স্রষ্টাকে খুঁজে নেয়ার এই যে অমৃত কথা, এসকল কথা কালজয়ী না হয়ে পারে না। সত্যকে খুঁজে পেতে হলে অন্যত্র সতন্ত্রভাবে খুঁজতে হবে। কোন ধর্মের মাঝে নয়। ধর্মের মাঝে সত্য নয় বরং সত্যের মাঝেই ধর্ম বিরাজ করে। এ বিশ্বে যারা সত্যকে অনুসন্ধান করেছে তারা কোন ধর্মের মাঝে সত্যকে পায়নি। বরং সত্যকে যখন খুঁজে পেয়েছে তা থেকেই বুঝতে পেরেছে ধর্মটা কি। কারণ ধর্মের মাঝে সত্য থাকে না, সত্যের মাঝেই ধর্ম রয়েছে।
ধর্মের মাঝে যারা সত্যকে খুঁজে তারা কোনদিনই সত্যের আলো দেখতে পায় না। আঁধারে হাতরিয়ে হাতরিয়েই মহামূল্যবান মানব জীবন পাড় করে দেয়। তথ্যসূত্র: অন্তর্জাল

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT