মুক্তকথা নিবন্ধ।। ছবি দু’টো একই সেতুর দু’টো রূপ। প্রথম দর্শনে বেশ মোহনীয়ই লাগে। তবে সেতু নির্মাণের পেছনের কাহিনী তেমন মোহনীয় নয়। ছবি দেখে যেকোন মানুষই বলে দিতে পারবে যে এখানে কোন কালে রাস্তা ছিল। লোহা-পাথর-সিমেন্টের তৈরী সেতুটি সে কাহানীই বলে। সেতুর এ ছবিটি মৌলভীবাজারের কাউয়াদিঘী হাওর পাড়ের গ্রাম অন্তেহরির। পুরো গ্রামই বর্ষা মৌসুমে এভাবেই পানিতে ডুবে থাকে। এটি নতুন কিছু নয়, শত শত বছরের পুরানো এ গ্রাম এভাবেই চলে আসছে অজ্ঞাত অজানা সময় থেকে।
বর্ষা মৌসুমে নৌকা বিহার এ অঞ্চলের এক সময়ের বিনোদন ছিল। স্থানীয় ভাষায় বলা ‘নাওদৌড়’ ছিল এ অঞ্চলের ঐতিহ্য। এখনও যে, সব হারিয়ে গেছে তা নয়। কিছুটা হলেও আছে এখনও। তবে আগের সে শ্রী নেই। সময়ের করাল গ্রাস সব কেড়ে নিয়েছে।
অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও গ্রামখানি এখনও দাড়িয়ে আছে কাউয়াদিঘী হাওরের তীর ঘেঁষে। এখনও হিজল গাছে মহুয়া কুঁহুঁ ডাকে। হাতছানি দিয়ে ডাকে পথহারা নায়ের মাঝিকে। হিজল-তমাল এখনও পথ চিনিয়ে নিয়ে যায় অজানা-অচেনা পথিককে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে হাওরে এই সেতু কেনো? যে আমলেই নির্মাণ হয়ে থাকুক না কেনো, এ সেতুর উদ্দেশ্য কি ছিল? যারাই এ সেতু নির্মাণ করিয়েছিলেন তাদের উদ্দেশ্য যে খুব মহৎ ছিল তা বলার কোন সুযোগই নেই। হাওরের ভেতর দিয়ে পাকা সেতুর রাস্তার অর্থই দাড়ায় হাওরকে বদলে দেয়া। তার ভিন্ন অর্থ হাওরের রকম পাল্টিয়ে দখলে নেয়ার পায়তারা। তাই এরা হাওরের ভেতর দিয়ে পাকা সেতু নির্মাণ করেছিলেন।
কিন্তু সেতু তৈরী করে নিলেইতো আর রাস্তা হয়ে যায় না। যেহেতু প্রাকৃতিক জলাধার তাই অবশেষে রাস্তা আর নির্মাণ সম্ভব হয়নি। প্রকৃতিকে বদলে দেয়ার আকাম প্রকৃতি নিজহাতে দমন করেছিল। প্রকৃতির তৈরী বিপর্যয়ের মুখে চেষ্টা হয়েছে খুব জোড়ে-সুরে কিন্তু শেষাবদি সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিল প্রবল বর্ষণ। আর তাইতো আজও তাদের অতীতের সে অপকর্মের নিদারুন এক স্মৃতি হয়ে দিগম্বর শরীর নিয়ে দাড়িয়ে আছে কঙ্কালসার সেতুটি।
ভরা বর্ষায় এমনকি শরৎ-হেমন্ত-শীত-বসন্তে ক্ষেতমজুরদের হয়তোবা কিছুটা হলেও শান্ত মনে জিরিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দেয়।
|