ভারত-ব্রহ্মদেশ সম্পর্ক যেমন অতি প্রাচীন ঠিক তেমনি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কও। ভারতের কাছে বাংলাদেশ যেমন তেমনি ব্রহ্মদেশও একই পরিবারের তিন সন্তানের মত। হাসিনা আর অং সান সুচি কেউই ভারতের কাছে ফেলে দেয়ার নয়।
আজ ঢাকায় মায়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিয়ে কূটনৈতিক চূড়ান্তপত্র দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ঢাকার পক্ষ থেকে মায়ানমারকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, মায়ানমার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করা না হলে ঢাকা বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাবে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের দাবি, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উপরে নজরদারি চালাতে গিয়ে সীমান্তে বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে মায়ানমারের হেলিকপ্টার ও ড্রোন। মায়ানমার অবশ্য সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এ অবস্থায় রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের কাকে কতটুকু সমর্থন সহায়তা দেয়া প্রয়োজন এ নিয়ে ভারত এখন দো’দিলা হয়ে পড়েছে।
এরই মাঝে আজ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা সুরেন্দ্র জৈন না-কি বলেছেন, “সম্প্রতি কাশ্মীরে নিহত এক জঙ্গির পরিচয় নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সে আসলে রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের জঙ্গি যোগের জন্য তাঁদের ভারতে রাখা নিরাপদ নয়।”
এমন যখন অবস্থা তখন বাংলাদেশও ভারতের কাছে রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়েছে। দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন। ভারতের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এসব খবর খুব বড় করেই প্রকাশ পেয়েছে। এসব দেখে ও শুনে ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ শেখ হাসিনাকে ফোন করে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিয়ে ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে।
আসলে ব্রহ্মদেশ বা মায়ানমার সরকার কোন এক অজ্ঞাত কারণে রোহিঙ্গা জনজাতির এই পরিচয়টা মেনে নিতে রাজি নয়। তাদের কথা, রোহিঙ্গারা ‘বাঙালি মুসলমান’। আর নরেন্দ্র মোদী সরকার ভেতরে ভেতরে এই কথাটি মেনে নিয়েছে। অথচ রোহিঙ্গারা যে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে আরাকান অঞ্চলে বসবাস করে আসছে সে কে না জানে। কিন্তু এসব ঐতিহাসিক সত্য সামনে থাকার পরও মায়ানমার তা জেনেও না জানার ভান ধরেছে।
অবশ্য জাতিসংঘ তা মানতে রাজি নয়। তারা মায়ানমারকে জানিয়ে দিয়েছে, রোহিঙ্গাদের মায়ানমারেই আশ্রয় দিতে হবে। তাদের ভিন্ন জাতি পরিচয়ও মানতে হবে মায়ানমার সরকারকে। জাতিসংঘ সচিব অং সান সুচিকে শেষ সুযোগ দিয়েছেন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের। ফলে পরিস্থিতি যে অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছে তা এখন বুঝতে পারছে ভারত।
কূটনীতিকসহ অনেকেরই ধারনা, মায়ানমারে চীনা প্রভাব আটকানোর জন্য সু চি সরকারের ঘনিষ্ট হতে চাইছে ভারত। অথচ বাংলাদেশের সঙ্গেও চিনের সম্পর্ক বেশ দ্রুতই বাড়ছে। মায়ানমারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে গিয়ে বাংলাদেশকে চিনের দিকে ঠেলে দেয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। একজনকে রেখে অন্যজনকে ফেলে দেয়ার অবস্থা এটা নয়। দু’জনকেই রাখতে হবে যে করেই হোক। ফলে ভারত এখন উভয় সঙ্কটে। তবে সংকট যতই কঠিন হোক না কেনো ভারতকে এর ফয়সালা বের করতেই হবে।