 
																
								
                                    
									
                                 
							
							 
                    হারুনূর রশীদ।।
শুরুতে শুনতে একটু খটকা লাগলেও নাম খুবই সহজ ছিল। জন্ম হয়েছিল ২৫শে জানুয়ারী ১৯২২ ইংরেজীতে নরওয়ে শহরে। পেশায় ছিলেন রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ। এ হিসেবেই ১৯৪৯ সালে কাজ শুরু করেছিলেন ‘অরগেনাইজেশন ফর ইকোনমিক কোপারেশন এন্ড ডেভেলাপমেন্ট’ এর সাথে যোগ দিয়ে। পরে বহু আন্তর্জাতিক সংগঠনের সাথে কাজ করেছিলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংগঠন হলো- ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আই এল ও, আই এফ এ ডি, ফাও, ডব্লিউ এফ পি, ইউ এন ডি পি এবং এশিয়ান ডেভেলাপমেন্ট ব্যাংক।
বলছিলাম বাংলাদেশ জন্মলগ্নের বিদেশী বন্ধু ‘জাস্ট ফালেন্ড’এর কথা। ‘জাস্ট ফালেন্ড’ নিয়ে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, রেহমান সোবহানদের উদৃতি দিয়ে এমনই লিখেছেন জনাব সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী(দিল্লীতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার)। তারই সূত্রধরে খুঁজে বের করলাম আমাদের অজানা এই মানুষটিকে। তিনি মূলতঃ নরওয়ে দেশের ‘খৃষ্টিয়ান মাইকেলসন ইন্সস্টিটিউটের’ একজন উন্নয়ন গবেষক ছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন ১৯৫২ সালে আর মৃত্যুর আগ অবদি এ কাজ করে গেছেন। নরওয়ের বার্জেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ও সমাজ বিজ্ঞানী স্টেইন রক্কান-এর সাথে মিলে তিনি উদ্যোগী হয়ে ‘বৃহত্তর গবেষণা কর্মসূচী’ চালু করেন এবং ১৯৫০এর দশকের দিকে বহু মানুষকে নিয়োগ করেন। ১৯৬১ সালে তারা আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও সমানুপাতিক রাজনীতিতে গবেষণা কর্মসূচী কি(?) তা সংজ্ঞায়িত করেছিলেন।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ‘উন্নয়ন অর্থনীতি প্রকল্প’এর ক্রমবৃদ্ধি সমস্যা নিয়ে পরিচালিত প্রকল্প “ডেভেলাপমেন্ট একশন এন্ড রিসার্স প্রোগ্রাম” ১৯৬৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা পায়। আর উনিশ’শ আশির দশকের দিকে ফালেন্ড প্রতিষ্ঠা করেন একটি ‘হিউমেন রাইটস কর্মসূচী’ যা অচিরেই বড় হয়ে উঠে এবং “খৃশ্চিয়ান মাইকেলসেন ইন্সস্টিটিউট” এর ‘সমাজ বিজ্ঞান গবেষণা’র মূল বিষয় হয়ে উঠেছিল।
ফালেন্ড ছিলেন “মালয়েশিয়ার নব অর্থনৈতিক নীতি”র প্রণেতা। তিনি “আন্তর্জাতিক খাদ্য নীতি গবেষণা প্রশিক্ষনকেন্দ্র”এর গনপরিচালক ছিলেন এবং জাতিসংঘের “কমিটি ফর ডেভেলাপমেন্ট প্লেনিং” এর ১৯৯৯-২০০০ সেশনের চেয়ারমেন ছিলেন।
“রয়েল নওরোজিয়ান অর্ডার অব সেন্ট ওলাভ” থেকে তিনি ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেছিলেন। এ ছাড়াও মালয়েশিয়ার সন্মানি সনদ “তান শ্রী” সনদও পেয়েছিলেন। পেয়েছিলেন, বার্জেন বিশ্ববিদ্যালয় ও মালয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “অনারারি ডক্টরেট” সনদ। ২০১৭ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী ৯৫ বছর বয়সে এই মহতিমানুষ জোতিষ্কের মত উজ্জ্বল মহান জীবনের ইতি টেনে অজানালোকে ফিরে গেছেন ঝঞ্জা সন্ত্রাস বিক্ষুব্ধ এ পৃথিবী ছেড়ে।
আমাদের স্বাধীনতার পরপরই এই ‘জাস্ট ফালেন্ড’ হয়ে উঠেছিলেন নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের সাথে সারা বিশ্বের এক সেতুবন্ধন। বাংলাদেশের সাথে ছিল তার এক বিশেষ সম্পর্ক। অবশ্য সেটি সেই পুরনো পাকিস্তানী সম্পর্ক থেকেই উৎসারিত ছিল। তার কারণেই বিশ্বব্যাঙ্ক আমাদের স্বাধীনতার শুভলগ্নে বিশেষ সহযোগীতার হাত বাড়ায়। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের কাছে জানতে চেয়েছিল, কাকে তারা বাংলাদেশের ‘দেশীয় প্রতিনিধি’ হিসেবে পাঠাবে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের ব্যবসা জীবনের এই প্রথম বাংলাদেশকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছিল এবং বলেছিল বিশ্বব্যাঙ্কের চাকুরীতে নেই এমন মানুষকেও আমরা মনোনয়ন দিতে পারবো। এ সবই ছিল এই ‘জাস্ট ফালেন্ড’ নামের মানুষটিকে ঘিরে। নব্যস্বাধীন বাংলাদেশের “পরিকল্পনা কমিশন”এর তৎকালীন সহকারী চেয়ারমেন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু ও অর্থমন্ত্রী তাজ উদ্দীন আহমদের সন্মতি নিয়ে এই জাস্ট ফালন্ডের নাম প্রস্তাব করেছিলেন আমাদের দেশীয় প্রতিনিধি হিসাবে পাঠানোর জন্য। এই ছিলেন ‘জাস্ট ফালেন্ড’ বাংলাদেশের জন্মলগ্নের একজন বিদেশী বন্ধু। আমরা তার অনন্ত যাত্রার শুভ কামনা করি।
বুধবার, ১৫ই চৈত্র ১৪২৩, ২৯শে মার্চ ২০১৭