1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
একজন সূর্যদাস তপন-এর কাহিনী - মুক্তকথা
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন

একজন সূর্যদাস তপন-এর কাহিনী

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
  • ৩৭৫ পড়া হয়েছে

আবদুল হামিদ মাহবুব।।

সুবিধাপ্রাপ্ত শিশুদের অভিভাবকরা তিন বছর বয়সেই তাঁদের সন্তানের হাতে বর্ণমালার বই তুলে দেন। সরকারি প্রাথমিক বা কিন্ডারগার্টেন অথবা উন্নত স্কুলে ভর্তি করান। গৃহশিক্ষক রেখে পড়ান। কিন্তু চা বাগানে জন্ম ও বেড়ে ওঠা চা শ্রমিকদের শিশুসন্তানরা এর কোনোটাই পায় না। চা বাগানের এমন সুবিধাবঞ্চিত ১৩ হাজার শিশুকে গত ১৪ বছরে বর্ণমালা শিখিয়েছেন সূর্যদাস তপন (৩৭)। তিনি চা বাগান বেষ্টিত মৌলভীবাজার শহরের শেখেরগাঁওয়ের বাসিন্দা। সূর্যদাস তপন জানান, সময়টা ২০০১ সাল। তিনি কবিতা লেখেন। ক্যামেরাও চালান। সময় পেলেই ছুটে যান চা বাগানের সবুজ প্রকৃতির কাছে। একদিন বাগানে ঘুরছেন। হঠাৎ তাঁর খেয়ালে এলো; চা বাগানের ধুলোমাখা পথে চা শ্রমিকদের সন্তানরা একে অন্যের সঙ্গে ঝগড়া করছে। অথচ এ সময় তাদের থাকার কথা বিদ্যালয়ে। তাঁর ভেতরে কি যেন একটা ঘটে। তিনি অনুমান করেন, এই শিশুরা বর্ণমালা থেকে অনেক দূরে। তাদের সামনে নিরক্ষরতার অন্ধকার জগৎ।
সেদিন বাগান থেকে ফিরে আসেন। ভেতরটা তাঁর তোলপাড় হতে থাকে। কয়েক রাত তাঁর এই শিশুদের জন্য কিছু করার ভাবনায় জেগে জেগে কেটে গেছে। পণ করে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে পথে নামলেন। চা বাগানের শিশুদের বর্ণ শিখানোর কাজটা কাঁধে তুলে নিলেন। কিনলেন সীতানাথ বসাকের বেশ কয়েক কপি আদর্শলিপি। বাগানে গিয়ে শিশুদের মধ্যে তা বিলি করলেন। তাদেরকে বর্ণ শিখানোর সেই শুরু। প্রতি বৃহস্পতিবারে আদর্শলিপি কিনতেন। আর শুক্রবার তাঁর স্টুডিওর দোকান বন্ধ রেখে ছুটে যেতেন চা বাগানের শিশুদের মধ্যে। এভাবে চলল বেশ কিছুদিন। পরে একসময় মনে হলো, শিশুদের আকর্ষণ করার মতো বই চাই। আদর্শলিপির অনুসরণে ছাপলেন রংচঙা বর্ণকুঁড়ি। এতে একটি বই ছাপতে খরচ হলো ১৮ টাকা। নিজের জমানো টাকা ও কিছু বন্ধুবান্ধব এ মুদ্রণে সহযোগিতা করলেন।

ছড়াকার আব্দুল হামিদ মাহবুবের এ লিখাটি কালের কন্ঠে প্রকাশিত হয় আজ ২১শে ফেব্রুয়ারী -‘বর্ণমালার বন্ধু’ শিরোনামে। লিখাটি একজন ‘সূর্যদাস তপন’কে ঘিরে। তপনের কঠোর কঠিন এ সংগ্রাম কাহিনী অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণার হতে পারে, এমন চিন্তা-চেতনা থেকে আব্দুল হামিদের ফেইচবুক থেকে আমরা পুনঃপ্রকাশ করলাম। -সম্পাদক

সেই ২০০১ থেকে বর্ণকুঁড়ি বিতরণ করছেন মৌলভীবাজার জেলার দেওরাছড়া, মিরতিঙ্গা, ফুলছড়া, ভাড়াউড়া, মাইজদিহি, প্রেমনগর, গিয়াসনগর, ভুরভুরিয়া-এই আটটি চা বাগানে। এ ছাড়া কাওয়াদীঘি হাওরপাড়ের কাশিমপুর এবং মৌলভীবাজার শহরের বিভিন্ন বস্তিতেও চলল তাঁর বই বিতরণ। একক উদ্যোগ ও চেষ্টায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার বর্ণকুঁড়ি শিশুর হাতে পৌঁছেছে। সূর্যদাস তপন বলেন, ‘আমার ব্যাগে সব সময় বর্ণকুঁড়ি থাকে। যেখানেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দেখি। তাদের হাতে বই তুলে দেই।’
সূর্যদাস তপন জানান, বই বিতরণ করতে গিয়ে মনে হলো শিশুদের কোথাও জড়ো করে বর্ণমালার সঙ্গে পরিচিত করানো দরকার। ২০০৯ সাল থেকে ফুলছড়া, দেওরাছড়া ও মাইজদিহি চা বাগানে বর্ণকুঁড়ি শিশু পাঠশালা গড়ে তোলেন। নিজেই শিশুদের অক্ষরের সঙ্গে পরিচিত করাতে নামেন শিক্ষকের ভূমিকায়। এতে শিশুদের অভিভাবকরাও এগিয়ে আসেন। প্রচুর সাড়া পান। কিন্তু আর্থিক সংস্থান করতে না পারায় দুটি পাঠাশালা মাসছয়েক আগে বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন চলছে মাইজদিহি চা বাগানের পাঠশালাটি। সেখানে রোকসানা বেগম নামের একজন শিক্ষিকা নিয়মিত পাঠ দিচ্ছেন শিশুদের। প্রতি মাসে তাঁকে ৮০০ টাকা হাতখরচা দেন। প্রতি ছয় মাস পরপর নতুন বই, খাতা ও পেনসিল তুলে দেন পাঠশালার শিশুদের। প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী আছে এ পাঠশালায়। তাদের হাতে ঈদ ও পূজায় সামর্থ্য মতো নতুন কাপড়, শীতে শীতবস্ত্র তুলে দেন। বছরে একাধিকবার দাঁতের পরীক্ষা করান। প্রতি মাসে একবার অভিভাবকদের নিয়ে বসেন। এ কাজ করতে পরিবারের সব সদস্যের সহযোগিতা পেয়েছেন। ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছেন। চিরকুমারী পিসি চাঁপা রানী দাস মাতৃছায়া দিয়ে উৎসাহ জুুগিয়েছেন সব সময়। তিন বছরের ছেলে আদিত্য দাসের চাহিদা মেটাতে যখন হিমশিম খান, তখন স্ত্রী তুলি দাস কিছুটা অভিমান করলেও কখনো তাঁর পথচলায় বাধা হন না। পাশেই থাকেন।
সূর্যদাস তপনের স্বপ্ন, ‘সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে বর্ণকুঁড়ি শিশু পাঠশালা, বর্ণকুঁড়ি শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বর্ণকুঁড়ি শিশু পাঠাগার গড়ে তুলব। বর্ণকুঁঁড়ি শিশু পাঠাগারের মাধ্যমে চা বাগানের প্রতিটি শিশুকে বর্ণমালা শেখাতে চাই।’
মাইজদিহি চা বাগানের একজন অভিভাবক সিরাজ মিয়া বলেন, ‘আমাদের অনেক শিশু বর্ণ জানত না। নোংরা পরিবেশে থাকে। এই ছোট ছোট বাচ্চারা এখন বর্ণ শিখছে। তপনদা (সূর্যদাস তপন) এখান থেকে কিছু পায় কি না, জানি না। তবে আমরা কিছু পাইলাম। বাচ্চারা বর্ণ জানতে পারল।’
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান মো. আব্দুল খালেক বলেন, ‘অনেক দিন ধরে তাঁকে চিনি। তাঁর মধ্যে একটা পাগলামো ব্যাপার আছে। চা শ্রমিকের সন্তানদের বর্ণমালা শেখানো নিঃসন্দেহে ভালো কাজ।’

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT