মুক্তকথা প্রতিবেদন॥ বৃটেনে কভিড নিয়ে সরকার যখন বেসামাল ঠিক তখনই ‘এসাইলাম সিকারস’ সমস্যা সরকারকে নিদ্রাহীন করে তুলেছে। এমতাবস্থায়, নিকোলা স্টারজিয়ন বলেছেন- ‘মানুষকে গরু-ছাগলের ন্যায় ব্যবহার করার চেষ্টা চালালে সবচেয়ে শক্ত প্রতিবাদ আসবে আমার কাছ থেকে।
পুরোনো পরিত্যাক্ত জাহাজগুলিতে নব্য আশ্রয়প্রার্থীদের(এসাইলাম সিকারস) আবাসনের ব্যবস্থা করতে সরকারের মন্ত্রীরা না-কি চিন্তা-ভাবনা করছেন। এ ছিল ২০২০এর প্রথমদিকের খবর।
বিগত ১লা অক্টোবর ২০২০ বিবিসি’র খবর ছিল- প্রীতি পেটেল মনে করেন, ‘এসছেনশন’ দ্বীপকে বৃটেনের আশ্রয়কেন্দ্রের ফাঁড়ি বা ছাউনীকেন্দ্র হিসেবে কাজে লাগানো যাবে। অর্থাৎ আশ্রয়প্রার্থীদের প্রাথমিকভাবে ওই দ্বীপে রাখার চিন্তা। এই ‘এসছেশন দ্বীপ’ বৃটেনের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৪ হাজার মাইল দূরে আটলান্টিক সাগরে। পরে অবশ্য সরকার এ বিষয়ে আর আগায়নি। লিখেছিল ‘ফিনানসিয়েল টাইমস’।
এছাড়াও প্রভাবশালী টাইমস পত্রিকা তখন লিখেছিল পরিত্যাক্ত ফেরী জাহাজকে খরিদ করে কিছুটা অদল-বদল করে আশ্রয়প্রার্থীদের প্রাথমিক আবাসনের কাজে লাগানোর বিষয়টি সরকার খুব যত্নের সাথে বিবেচনা করছেন। কিন্তু ওই পত্রিকাই আবার লিখেছে যে উত্তর সাগরের পরিত্যাক্ত তেল উত্তোলন কেন্দ্রকে ব্যবহারের একটি প্রস্তাবনা ‘হোম অফিস’ প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে, স্কটল্যাণ্ডের একটি উপকূলীয় দ্বীপে আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসনের চিন্তা করার খবর প্রকাশ হতেই ফার্স্ট মন্ত্রী নিকোলা স্টারজেওন এক টুইটে বলেছিলেন-‘মানুষকে গরু-ছাগলের ন্যায় ব্যবহার করার কোনরূপ কাজে সবচেয়ে শক্ত প্রতিবাদ আসবে আমার কাছ থেকে। ২০২০এর ৩০ সেপ্টেম্বর বিবিসি এ তথ্য প্রকাশ করেছিল।
এই সেই ‘এসসেশন দ্বীপ’ ‘এসাইলাম সিকার’দের প্রাথমিকভাবে এখানেই রাখার চিন্তা করছে সরকার। ছবি: বিবিসি
এ সমূহ অবস্থার পাশাপাশি গেল বছরের পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত বছর কেবল সেপ্টেম্বর মাসে ১৯০০এর বেশী পরিযায়ী(মাইগ্রেন্ট) মানুষ নৌকায় চড়ে বৃটেনে প্রবেশ করেছেন। ২০১৯সালের সারা বছরেও এতোবেশী আশ্রয়প্রার্থী মানুষ এভাবে বৃটেনে প্রবেশ করেনি। সরকারের মন্ত্রীরা এখন আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন মূল্যায়ণ করার সময়টাতে তাদেরকে সমুদ্র উপকূল থেকে দূরে অব্যবহৃত ফেরিতে বসবাসের ব্যবস্থা করে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন।
গ্রীষ্মের শান্ত সমুদ্র আর গরম আবহাওয়ার সুযোগে হাজার হাজার আশ্রয়প্রার্থী মানুষ যখন নৌকায় চড়ে(চেপে) বৃটেনের ভূখণ্ডে প্রবেশ করছিলেন তখন মহামারী নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মাইগ্রেণ্টের আগমনকে নিয়ে চাপে পড়ে যায় সরকার। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় হোম অফিস এবং সরকারের মন্ত্রীরা এ সকল এসাইলাম সিকারদের সমুদ্র উপকূলের দূরে কোথায়ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা চিন্তা করতে শুরু করে করেন।
ওই সময় সরকারের আলোচনায় স্থান পেয়েছিল এসসেশন এবং সেন্ট হেলেনা নামে দু’টি দ্বীপে এসাইলাম সিকারদের পাঠানো যায় কিনা। এই দু’টি দ্বীপ ব্রিটেন থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত।
বিকল্প আরেকটি প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন সরকারের মন্ত্রীরা আর সেটি ছিলো অব্যবহৃত ফেরিগুলোকে ভাড়া করা। ফোকস্টনের একটি ব্যারাক ইতিমধ্যেই সরকার এসাইলাম সিকারদের আবাসনের জন্য ব্যবহার করেছিল। ‘কাজগড়’ নামের একটি হোটেল সহ একান্নব্বইটি হোটেলও ভাড়া করেছিল সরকার। অনেক হোটেলে বসবাসের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদও করেছিল আশ্রয় প্রার্থীরা(এসাইলাম সিকাররা)। বার্মিংহামের এই হোষ্টেলে ছাপ্পান্নজন এসাইলাম সিকার কভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার পর বিগত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ৫০টি স্থানীয় সরকার পক্ষের অধীনে সাড়ে ৯ হাজারের বেশী ‘এসাইলাম সিকার’ ওই সময়ে হোটেল এ বসবাস করেছে। কারণ ভাইরাস-এর কারণে সরকারের নিয়মিত আবাসনের সংখ্যা কমে গেছে। ওই সময় একশো ২২জন মাইগ্রেন্ট কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং প্রায় সাড়ে ৭শ জন ‘সেল্ফ আইসোলেশনে’ ছিলেন। খবর প্রচার করেছিল লণ্ডন বাংলা ভয়েস।
গত দুই দশকে লেবার এবং রক্ষণশীল দুই দলই এসাইলাম সিকারদের মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে জলসীমার কোথাও রাখার কথা ভেবেছে। কিন্তু সব সময় বিষয়টি আইনগত এবং বাস্তবতার দিক থেকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ(চেলেঞ্জিং) ছিল বলে তাদের সে চিন্তা কাজে লাগেনি। এগুলো ভিক্টোরিয়ান আমলের চিন্তা-চেতনা উল্লেখ করে শ্রমিকদল এসকল চিন্তা-ভাবনাকে সরকারের ‘ক্রেজি স্কীমস’ বলে আখ্যায়িত করেছিল এবং এখনও করছে।
এতোসব জল্পনা-কল্পনা চলার অবস্থায় বর্তমানে শীতকাল এসে পড়ায় আবহাওয়াও চরমে পৌঁছেছে। ফলে নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বৃটেনে এসাইলাম সিকারদের প্রবেশ কমতে শুরু করেছে। এই সুযোগে আশ্রয়প্রার্থী(এসাইলাম সিকার) ব্যবস্থাপনায় সরকার নিশ্চয়ই বাস্তবসন্মত একটা সমাধানের পথ খুঁজতে সমর্থ হবে বলেই অভিজ্ঞ মানুষজনের ধারণা। অন্যতায় সরকারই বেকায়দায় পড়বে। হারুনূর রশীদ, লণ্ডন, রোববার ১৭ জানুয়ারী ২০২০
|