কমলগঞ্জ প্রতিনিধি।। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের শ্রীনাথপুর গ্রামে বখাটের যন্ত্রণা সইতে না পেরে এক কিশোরী ওড়না পেচিয়ে ঘরের চালার সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাকারী কিশোরী(সিতা শব্দকর-১৪) শ্রীনাথপুর শব্দকর পাড়ার ব্রজেন্দ্র শব্দকরের মেয়ে। পরিবারের অভিযোগ প্রতিবেশী এক বখাটে যুবকের উৎপাতে অতিষ্ট হয়ে সে আত্মহত্যা করেছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ বখাটে মধু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবেশী ইন্তাজ মিয়ার বখাটে ছেলে মধু মিয়া(২৫) দীর্ঘদিন ধরে শব্দকর কিশোরীকে নানাভাবে উত্যক্ত করে আসছিল। সে এই কিশোরীকে জোর করে ধরে নিয়ে বিয়ে করারও হুমকি দিয়েছিল। মঙ্গলবার ভোর ৬টায় কিশোরী ঘর থেকে বের হয়ে পূজার জন্য ফুল কুড়িয়েও আনে। সকাল ৭টার দিকে প্রতিবেশী সজল শব্দকরের বাড়ির খড়ের গাদায় বখাটে মধু মিয়া আগুন লাগালে সবাই আগুন নেভাতে যান। এই ফাঁকে কিশোরী তার পরনের থাকা ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ঘরের উপরের চালার সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনার পর পরই পরিবারের পক্ষ থেকে কমলগঞ্জ থানা ও আলীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়েছে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কমলগঞ্জ থানার পুলিশের একটি দল কিশোরীর লাশের সুরতহাল তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। সকালে আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাদশা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী(শ্যামল) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
নিহত কিশোরীর বাবা ব্রজেন্দ্র শব্দকর অভিযোগ করে বলেন, একই এলাকার ইন্তাজ মিয়ার বখাটে ছেলের উৎপাত চরম আকার ধারণ করেছিল। গত সোমবার রাত ৯টার দিকে বখাটে মধু মিয়া তার বসতঘরের দরজা ভেঙ্গে কিশোরী শব্দকর মেয়েকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। এতে বাঁধা দেয়ায় বখাটে মধু মিয়া ব্রজেন্দ্র শব্দকর ও তার ছেলেকে মারধর করে। আর এ উৎপাতের কারণেই তার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ নিয়ে যাওয়ার পর বখাটে মধু দা নিয়ে শ্রীনাথপুর শব্দকর পাড়ায় এসে প্রকাশ্যে নিহতের পিতাকে বাড়াবাড়ি করলে প্রাণে হত্যার হুমকি দেয়। খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে কমলগঞ্জ থানা পুলিশ বখাটে মধু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে কমলগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস, আলীনগর ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি শংকর চন্দ্র দেবনাথ, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দেব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সমরেন্দু সেনগুপ্ত বুলবুল, লেখক-গবেষক আহমদ সিরাজ, শব্দকর সমাজ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি প্রতাপ শব্দকর, সাধারণ সম্পাদক উপেন্দ্র শব্দকর প্রমুখ নেতৃবৃন্দ শ্রীনাথপুর গ্রামে ব্রজেন্দ্র শব্দকরের বাড়িতে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে দুষ্কৃতিকারীকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান।
আলীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাদশা আত্মহত্যার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইন্তাজ মিয়ার ছেলে মধু মিয়া আসলেই একটি বখাটে। তিনি এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করে আসল রহস্য বের করার দাবী জানান।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুর রহমান শব্দকর কিশোরীর আত্মহত্যা ঘটনা ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় আপতত থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় লিখিত কোন অভিযোগ আসেনি। নিহত লাশের সুরতহাল তৈরীর ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
“ভালো প্রতিবেশী ভালোবাসা” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আদমপুরে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গুড নেইবারস বাংলাদেশ এর উদ্যোগে মঙ্গলবার বিকেলে ৪ শত অসহায় হতদরিদ্র ও করোনার কবলে পরা কর্মহীন মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে। খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ছিলো চাল, ডাল, তেল, লবন, সাবানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুর রহমান, গুড নেইবার বাংলাদেশ মৌলভীবাজার সিডিপি ম্যানেজার রোমিও রতন গমেজ, ডা: শ্রীনিবাস দেবনাথ ও প্রোগ্রাম অফিসার প্রবীর নকরেক। কর্মকর্তারা জানান, প্রথমধাপে তারা ৪শত পরিবারকে এ সহায়তা দিচ্ছেন।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে একমাত্র টেজারী শাখা সোনালী ব্যাংকের কমলগঞ্জ শাখার একজন কর্মকর্তা ও একজন নিরাপত্তাকর্মী আনসার সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। ফলে সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের বরাত দিয়ে আ লিক শাখা মৌলভীবাজার সোনালী ব্যাংক আ লিক শাখা কমলগঞ্জ শাখাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীতে এ শাখার একজন পিয়নও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলার একমাত্র ট্রেজারী ব্যাংক শাখা থাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও সুবিধাভোগীদের ভাতা প্রাপ্তি নিয়ে দুর্ভোগ দেখা দিলে ৯ দিনের লকডাউন শেষে মঙ্গলবার (১২ মে) ট্রেজারী শাখা সোনালী ব্যাংক কমলগঞ্জ শাখা খুলেছে।
সোনালী ব্যাংক কমলগঞ্জ শাখা ব্যবস্থাপক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, এ শাখার এক কর্মকর্তাসহ ২ জন করোনা সনাক্ত হওয়ার পর শাখাটি লকডাউন করে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল। কমলগঞ্জ উপজেলার একমাত্র ট্রেজারী শাখা হওয়ায় গত ৯ দিন সরকারি লেনদেন, বেতন ভাতা নিয়ে, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী, সরকারি শিক্ষকদের বেতন ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের ভাতা উত্তোলন তুলতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনালী ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করলে ৯ দিন পর মঙ্গলবার থেকে লকডাউন প্রত্যাহার করে এ শাখাটি খোলা হয়েছে। তবে এ শাখার কর্মকর্তাসহ করোনা আক্রান্ত ৩ জন এখনও আইসোলেশনে রয়েছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, সোনালী ব্যাংক কমলগঞ্জ শাখা গত ৯ দিন ধরে বন্ধ থাকায় বেশ দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল। সোনালী ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেই মঙ্গলবার থেকে শাখাটি খোলা হয়েছে।