হারুনূর রশীদ
বুধবার ৪ঠা মে, ২০১৬ইরাজী ৩:০০ঘটিকা
ভোট চাই রব উঠেছে ভোট দেবো ভাই কা’কে ?
যা’কে তা’কে ভোট দিয়ে পড়না বিফাঁকে!
কাল লন্ডন নগরীর নির্বাচন
লন্ডন, মানতেই হয় দুনিয়াসেরা নগরগুলোর স্রেষ্টতমদের একটি। তার অর্থ এই নয় যে লন্ডন, কিতাব কথিত এডেনের স্বর্গীয় বাগান(garden of Eden) হয়ে গেছে। এখানে হাত পাতলেই সব পাওয়া যায়। ইচ্ছেমত সবকিছু করা যায়। এখানে সব কিছুর অবাধ স্বাধীনতা। যেমন নর্তন-কুর্দনের আছে তেমনি ধর্ষণ আর খুন-খারাবির আছে। যেমন খেলা-ধূলার অবাধ স্বাধীনতা তেমনি নগ্নতারও অবাধ যাতায়াত। না আসলে তা নয়। হয়, এখানেও দুনিয়ার মানব সমাজে যা যা ঘটে চলেছে এখানেও তা ঘটে।
ছেঁচড়া চুরি থেকে ডাকাতি, নারী ধর্ষণ থেকে খুনখারাবী, পকেটমার থেকে স্ক্যাম করে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাত, নগ্নতা আর সংস্কৃতি চর্চ্চা, সুস্থ্য রাজনীতি আর ষঢ়যন্ত্রের রাজনীতি সব কিছুই এখানে ঘটে। একটি মাত্র ব্যতিক্রম আর তা’হল নীতি-নৈতিকতা বিরুধী কিংবা আইন লঙ্ঘনীয় কিছু ঘটিয়ে পার পাওয়া যায় না। কোন না কোনভাবে কৃতকর্মের খেসারত দিতে হয়, পেতে হয় দূষ্কর্মের শাস্তি।
এখানেই লন্ডনের বৈপরীত্ব। এখানেই লন্ডনের শ্রেষ্টত্ব। এখানেই লন্ডন একটি শহর বা নগর হয়েও একটি দেশ। গোটা যুক্তরাজ্যের মত লন্ডনও একটি স্বশাসিত এলাকা। লন্ডনের দেখভালের জন্য, তার নাগরীকদের প্রয়োজনীয় সেবাদানের জন্য এখানে রয়েছে একটি ক্ষুধে সংসদ। আগামী কালের নির্বাচন এই ক্ষুধে সংসদেরই নির্বাচন।
বর্তমান লন্ডনের লোকসংখ্যা ২০১৪ সালের গণনা মতে ৮.৫৩৯ মিলিয়ন। মেট পুলিশের সব কিছু মিলিয়ে সংখ্যা প্রায় ৪৮,৬৬১জন। তারই সেবক নির্বাচন হতে যাচ্ছে কাল। হ্যাঁ, লন্ডন শহরের সাধারণ মানুষ থেকে বিশিষ্টজন সকলেই মনে করেন লন্ডনের মেয়র মানেই লন্ডনের সেবক। এই মেয়র যে সংসদ নিয়ে বসবেন সেই সংসদকে বলা হয় “লন্ডন এসেমব্লি” যার মোট সদস্য সংখ্যা ২৫জন। কে দিতে পারবেন মানুষের মাথাগুঁজার এতোটুকু ঠাঁই? কে দিতে পারবেন কাজের নি্ম্নতম নিরাপত্ত্বা? কে দিতে পারবেন জমকালো শহুরে জীবনের এগিয়ে যাবার ঠিকানা? এগুলোই সকল মানুষের মনে তাগিদ দেয় আগ্রহ বাড়ায় জানার।
লন্ডনে নির্বাচন আসেনা নিছক উতসবের আনন্দ নিয়ে। কিংবা টাকা-পয়সার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে। এখানে ভোট হয় পেশী শক্তি বা টাকার বলে নয়। আবার এখানে যারা নির্বাচনে দাঁড়াতে আসেন তারা, দু’একটি ঘটনা বাদে, সাধারণতঃ নিজের আঁখের গোছানোর উদ্দেশ্যে আসে না বরং সমাজের কোন না কোন বিষয়কে কোন সমস্যাকে সামনে রেখে সেই সমস্যা থেকে নগরীকে কি করে উতরিয়ে নেয়া যায় সে লক্ষ্য হাসিলের জন্য মানুষের মতামত নিতে আসে। এখানে ভোট হয় কর্মের যোগ্যতা বিচারের মধ্য দিয়ে। এখানের মানুষজনকে আইন মানতে শেখানো হয়েছে। আর এ জন্য এদেশীয় রাজনীতিকে অনেক খেসারত দিতে হয়েছে। এখানের যান্ত্রিক জীবনেও আনন্দ, শোক, দুঃখ বেদনা সবই আছে। সবকিছুই নিজস্ব নিয়মে চলছে, চলছে এক অবাধ গতিতে। সাদা-মাটা চোখে তাই-ই দেখা যায়। বাস্তবে আসলে তা নয়। বাস্তব এখানে সুনিয়ন্ত্রীত। বাহির থেকে এই নিয়ন্ত্রণ চোখে পড়ে না। চোখে পড়েনা নিয়ন্ত্রিত সাধারণ মানুষের নিপীড়ন কিংবা ধনবানদের শোষণ। কিন্তু এর সবকিছুই এখানে হয় এবং হচ্ছে। ঐ যে বললাম, একটি বিষয় সবকিছুকে চাপা দিয়ে যায়। আর সে মহৌষধটি হল আইনের শাসন।
এখানে ধর্ম আর ধর্মহীনতা একই ছাঁদের নিচে বাস করে। এখানে গীর্জার সাথে লাগোয়া দাঁড়িয়ে থাকে মসজিদ, মন্দির কিংবা পেগোডা। এখানে ধর্ম আছে কিন্তু নেই তার হিংস্র বিষদাঁত। এখানে মৌলবাদ চর্চ্চার সুযোগ পায় ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্মগত অধিকার হিসাবে বিদ্যালয়ের আদলে, খুনোখুনী-হানাহানী আর যুদ্ধের ময়দান হয়ে নয়। ধর্মের বিভাজনীয় হানাহানির বদলে এখানে মানবিকতার বিকাশের মনন তৈরী হয়েছে।
অতীতের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে স্রষ্টার নামে মানুষের ঘাঁড়ে চাপিয়ে বসা ধর্মের তথাকথিত অনুশাসন। লন্ডন তাই ব্যতিক্রমী এক নগর সভ্যতার উপাখ্যান। লন্ডন তার হাজার বছরের মাটি আর সভ্যতার ইতিহাস নিয়ে স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে আছে প্রতিটি মানুষের হৃতকমলে।আর থাকবেও চিরকাল। সেই লন্ডনের ভবিষ্যত নির্ধারণ হতে যাচ্ছে আগামী কাল ৫ই মে ২০১৬। নির্বাচিত হবেন লন্ডন নগরের সর্বাধিনায়ক বা নগরপাল। কে হবেনগো এমন মানুষ, স্বাভাবিক জিজ্ঞাসা সকলেরই?